বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে (বিটিইবি) জালিয়াতি করে ২০১৯ সালের এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় ১২৮ জনকে পাস করানো হয়েছে। চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষার্থী ক্লাস নাইনে কোনো পড়াশোনা না করেই এসএসসি সার্টিফিকেট বাগিয়ে নিয়েছে।
শুধু তাই নয়, পরীক্ষা ছাড়াই পাস করিয়ে দেয়া, সরকারি নিয়মে ব্যাংকে টাকা জমা না দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও অ্যাডমিট কার্ডের ডুপ্লিকেট তোলাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি জেঁকে বসেছে বোর্ডটিতে। এজন্য রীতিমতো সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে, তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বোর্ডের ফেল করা শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে পরীক্ষা ছাড়া পাস করিয়ে দেয়ার চুক্তি করে থাকে। এজন্য নেপথ্যে কাজ করে কারিগরি ও ভোকেশনালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও বোর্ডের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জানা যায়, সার্টিফিকেট প্রত্যাশী ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বোর্ড ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করার পর নিজেদের আখের গোছায় চক্রটি। কার্য সিদ্ধি করতে প্রয়োজনে নামে-বেনামে, ভুয়া ঠিকানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে রাখা হয় এবং পরে অন্য লোক দিয়ে পরীক্ষা দেয়ানো ও পাস করানো হয় মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। এভাবে পলিটেকনিকের ফেল করা ৫৭৪ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন বছর পাস করানো হয়েছে। এতে কেবল যে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে তাই নয়, শিক্ষাব্যবস্থার ভঙ্গুর মানকে আরও অবনতিশীল করা হচ্ছে।
উদ্বেগের বিষয়, কারিগরি বোর্ডে এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অনেক অভিযোগ থাকলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করা হয়নি। এ থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হল, বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ চক্রে থাকতে পারে। আমরা মনে করি, পরীক্ষা ছাড়া পাস করানো, অযোগ্যদের যোগ্যতার সনদ দেয়া ও অনিয়ম-দুর্নীতি করে অর্থ কামানোর মতো পুকুরচুরি কোনোভাবেই চলতে পারে না। আশার কথা, এরই মধ্যে এ ফল জালিয়াতি সংক্রান্ত সিন্ডিকেটের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত গত বছর জালিয়াতি করে পাস করানো ১২৮ শিক্ষার্থীর ফল বাতিল হচ্ছে। এরই মধ্যে জালিয়াতিতে জড়িত কম্পিউটার সেলপ্রধান, সিস্টেম এনালিস্ট শামসুল আলমকে বরখাস্ত ও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয়সহ অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া তিন সহকারী প্রোগ্রামার ও দুই কম্পিউটার অপারেটরের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি জড়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ, এমপিও বাতিলসহ অনেক সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। আমরা মনে করি, তদন্ত কমিটির সুপারিশ শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং অপরাধী চক্র যেন কোনোভাবে আইনের ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে যেতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষায় জালিয়াতি, দুর্নীতি-অনিয়মের লাগাম টেনে ধরা যাবে না।
শিক্ষায় আমরা এখনও কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করতে পারিনি। ভোকেশনাল ও কারিগরি খাতে তো নয়ই। এ কারণে দেশের গার্মেন্ট, টেক্সটাইলসহ প্রায় সব শিল্পের মূল কারিগরি ও প্রকৌশল খাতের কাজগুলো করানো হচ্ছে ভারত, চীন ও শ্রীলংকার কারিগরি কর্মকর্তাদের দিয়ে। এ খাতে মোটা অঙ্কের অর্থ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। ফলে যেখানে কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন ও দক্ষ কর্মী তৈরিতে হাত দেয়া দরকার, সেখানে পড়ালেখা ছাড়া সনদ দেয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও খারাপ করা হচ্ছে কেবল কিছু মানুষের অবৈধ উপার্জনের জন্য। আমরা আশা করব, কারিগরিসহ সব ধরনের শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার সচেষ্ট হবে এবং পরীক্ষা ছাড়া পাস করানো চক্র ও শিক্ষা খাতের যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে।