বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করা উচিত, এ কথা বলেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।
বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে অনন্যনজির সৃষ্টি করেছে, তা উল্লেখ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর উদারতার প্রশংসা করেছেন। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানকালে হত্যা ও নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে পালিয়ে নতুন করে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
এরপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তীব্র সমালোচনার মুখে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে অঙ্গীকার করে। কিন্তু দেশটি এ বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি। আমরা লক্ষ করছি, মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নামে নানাভাবে টালবাহানা করছে। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) অন্তর্বর্তী আদেশে রোহিঙ্গা গণহত্যা রোধে মিয়ানমারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশ এ বিষয়ে নতুন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়বে নিঃসন্দেহে। আমরা মনে করি, এই চাপ আরও বাড়াতে হবে এবং এক্ষেত্রে চীন, রাশিয়াসহ যেসব দেশ মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বন করছে, তাদেরও আইসিজের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন আর মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বন করবে না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাস্তবেও চীনের রাষ্ট্রদূতের এ বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটুক।
চীনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে মিয়ানমারে। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্টের মিয়ানমার সফরের সময় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। বিভিন্ন বিশ্লেষকের মতে, এতে দু’দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক অতীতের চেয়ে আরও দৃঢ় হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে ভারত ও মিয়ানমারের সখ্যের বিষয়টিও বহুল আলোচিত।
এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের সখ্যের বিষয়টিও বারবার আলোচনায় আসে। আগামী দিনে উল্লিখিত দেশগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নিতে পারে, এসবও বিভিন্ন আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। আইসিজের আদেশ বাস্তবায়নে যাতে মিয়ানমার কোনো রকম গড়িমসি না করে, সেজন্য বাংলাদেশকেও জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করা উচিত বলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
আমরা আশা করব, যুক্তরাষ্ট্র নিজেও মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন দেশ যাতে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত স্বার্থের চেয়ে নৈতিক, মানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনগত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়, সে লক্ষ্যে জোর প্রয়াস চালাতে হবে আমাদেরও।