ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা পরামর্শ: করোনা রোগীর ডায়াবেটিস চিকিৎসা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ দেশে প্রায় ৭৫ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং না-জানা ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডায়াবেটিস একটা অন্যতম কো-মর্বিডিটি। ডায়াবেটিস রোগীদের মারাত্মক নিউমোনিয়া ও ইনফেকশন (sepsis) হওয়ার আশঙ্কা অন্য রোগীদের তুলনায় অনেক বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত ডায়াবেটিক রোগীদের মৃত্যুর আশঙ্কা যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।

এছাড়াও দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগার/শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন এবং তা অন্যান্য জটিলতা যেমন ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস ও অন্যান্য ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

Lancet Diabetes & Endocrinology তার ২৩ এপ্রিলের সংখ্যায় করোনায় আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। সেই আলোকে বহির্বিভাগ (লক্ষণবিহীন বা মৃদু লক্ষণসহ করোনা রোগী) ও অন্তবিভাগে ভর্তিকৃত জটিল রোগীদের জন্য নির্দেশনা: রক্তে সুগারের মাত্রা যথাযথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস রোগী যে ওষুধে আছেন, তা রিভিউ করতে হবে। প্রয়োজনে ওষুধ পাল্টানো লাগতে পারে।

প্রতিদিন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বিশেষ করে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রক্তের কিটন বডি বাসায় পরীক্ষা করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিয়মিত গ্রহণ করা ওষুধ কোনোভাবেই চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া বন্ধ করা যাবে না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে বা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে পরামর্শ নিতে হবে। সুষম, পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। নতুনভাবে ধরা পড়া ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে সুগারের মাত্রা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

ভর্তিকৃত মারাত্মক করোনা আক্রান্ত ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়: নিবিড় প্লাজমা গ্লুকোজ মনিটর করতে হবে; electrolytes, pH, রক্তের কিটন বডি পরীক্ষা করাতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দ্রুত intravenous ইনসুলিন শুরু করতে হবে। চামড়ার নিচে (subcutaneous) ইনসুলিন বন্ধ রাখা লাগতে পারে। মারাত্মক অবস্থায় ইনসুলিনের চাহিদা বেড়ে যায়, পাশাপাশি ইনসুলিন রক্তে যাওয়ার পরিমাণ ঠিক থাকে না।

করোনা আক্রান্ত ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রক্তের সুগারের লক্ষ্যমাত্রা : ১. প্লাজমা গ্লুকোজ: 4-8 mmol/L(72-144 mg/dl), যারা বাড়িতে isolation-এ থেকে চিকিৎসা নেবেন। ২. প্লাজমা গ্লুকোজ: 4-10 mmol/L(72-180 mg/dl), হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের ক্ষেত্রে। ৩. HbA1c 53 mmol/mol ৭ শতাংশের কম রাখতে হবে। ৪. হাইপোগ্লাইসেমিয়া 3.9 mmol/L বা রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে গেলে জরুরি চিকিৎসা দিতে হবে।

ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্দেশনা : নিশ্চিত করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু ওষুধ বন্ধ করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মেটফরমিন এবং SGL2 inhibitor জাতীয় ওষুধ যারা গ্রহণ করেন, তারা তা সুস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত বন্ধ রাখবেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে। এসব ওষুধ করোনা রোগীদের জটিল মেটাবলিক কমপ্লিকেশন তৈরি করতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত করোনা রোগী না হলে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। GLP receptor agonist বা DPP4 inhibitor (sitagliptin, vildagliption) জাতীয় ওষুধ আগের মতোই চালিয়ে যেতে হবে।

যারা ইনসুলিন নিচ্ছেন, তারা কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তা বন্ধ করবেন না। তদুপরি ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণ করেন, বিশেষ করে ACE inhibitor বা ARB জাতীয় ওষুধ, তারা তা আগের মতোই গ্রহণ করবেন। বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। যারা রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ (statin) গ্রহণ করেন, তারা তা আগের মতোই গ্রহণ করবেন, বন্ধ করা যাবে না; বরং এটা করোনা রোগীদের জন্য উপকারী। পরিমিত পানি পান করবেন। মারাত্মক করোনা রোগীদের ফ্লুইড রেসট্রিকশন করা লাগতে পারে।

ডা. মো. রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

করোনা পরামর্শ: করোনা রোগীর ডায়াবেটিস চিকিৎসা

আপডেট টাইম : ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুন ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ দেশে প্রায় ৭৫ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং না-জানা ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডায়াবেটিস একটা অন্যতম কো-মর্বিডিটি। ডায়াবেটিস রোগীদের মারাত্মক নিউমোনিয়া ও ইনফেকশন (sepsis) হওয়ার আশঙ্কা অন্য রোগীদের তুলনায় অনেক বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত ডায়াবেটিক রোগীদের মৃত্যুর আশঙ্কা যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।

এছাড়াও দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগার/শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন এবং তা অন্যান্য জটিলতা যেমন ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস ও অন্যান্য ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

Lancet Diabetes & Endocrinology তার ২৩ এপ্রিলের সংখ্যায় করোনায় আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। সেই আলোকে বহির্বিভাগ (লক্ষণবিহীন বা মৃদু লক্ষণসহ করোনা রোগী) ও অন্তবিভাগে ভর্তিকৃত জটিল রোগীদের জন্য নির্দেশনা: রক্তে সুগারের মাত্রা যথাযথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস রোগী যে ওষুধে আছেন, তা রিভিউ করতে হবে। প্রয়োজনে ওষুধ পাল্টানো লাগতে পারে।

প্রতিদিন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বিশেষ করে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রক্তের কিটন বডি বাসায় পরীক্ষা করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিয়মিত গ্রহণ করা ওষুধ কোনোভাবেই চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া বন্ধ করা যাবে না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে বা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে পরামর্শ নিতে হবে। সুষম, পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। নতুনভাবে ধরা পড়া ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে সুগারের মাত্রা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

ভর্তিকৃত মারাত্মক করোনা আক্রান্ত ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়: নিবিড় প্লাজমা গ্লুকোজ মনিটর করতে হবে; electrolytes, pH, রক্তের কিটন বডি পরীক্ষা করাতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দ্রুত intravenous ইনসুলিন শুরু করতে হবে। চামড়ার নিচে (subcutaneous) ইনসুলিন বন্ধ রাখা লাগতে পারে। মারাত্মক অবস্থায় ইনসুলিনের চাহিদা বেড়ে যায়, পাশাপাশি ইনসুলিন রক্তে যাওয়ার পরিমাণ ঠিক থাকে না।

করোনা আক্রান্ত ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রক্তের সুগারের লক্ষ্যমাত্রা : ১. প্লাজমা গ্লুকোজ: 4-8 mmol/L(72-144 mg/dl), যারা বাড়িতে isolation-এ থেকে চিকিৎসা নেবেন। ২. প্লাজমা গ্লুকোজ: 4-10 mmol/L(72-180 mg/dl), হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের ক্ষেত্রে। ৩. HbA1c 53 mmol/mol ৭ শতাংশের কম রাখতে হবে। ৪. হাইপোগ্লাইসেমিয়া 3.9 mmol/L বা রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে গেলে জরুরি চিকিৎসা দিতে হবে।

ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্দেশনা : নিশ্চিত করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু ওষুধ বন্ধ করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মেটফরমিন এবং SGL2 inhibitor জাতীয় ওষুধ যারা গ্রহণ করেন, তারা তা সুস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত বন্ধ রাখবেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে। এসব ওষুধ করোনা রোগীদের জটিল মেটাবলিক কমপ্লিকেশন তৈরি করতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত করোনা রোগী না হলে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। GLP receptor agonist বা DPP4 inhibitor (sitagliptin, vildagliption) জাতীয় ওষুধ আগের মতোই চালিয়ে যেতে হবে।

যারা ইনসুলিন নিচ্ছেন, তারা কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তা বন্ধ করবেন না। তদুপরি ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণ করেন, বিশেষ করে ACE inhibitor বা ARB জাতীয় ওষুধ, তারা তা আগের মতোই গ্রহণ করবেন। বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। যারা রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ (statin) গ্রহণ করেন, তারা তা আগের মতোই গ্রহণ করবেন, বন্ধ করা যাবে না; বরং এটা করোনা রোগীদের জন্য উপকারী। পরিমিত পানি পান করবেন। মারাত্মক করোনা রোগীদের ফ্লুইড রেসট্রিকশন করা লাগতে পারে।

ডা. মো. রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ