বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ হাওরাঞ্চলের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ঠিকাদারি পদ্ধতি বাদ দিয়ে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করার কথা আমরা জানি।
এ নীতিমালা অনুযায়ী হাওরের প্রকৃত কৃষক এবং হাওরে যাদের জমি আছে তাদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) করে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু এসব কমিটি গঠনে নীতিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। কারণ, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম যে বন্ধ হয়নি তার নানা আলামত পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শর্তানুযায়ী সম্পন্ন না করার পরও প্রায় ৮৩ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এমনকি নির্ধারিত সময়ের পরও আরও দু’দফা সময় বাড়িয়েও সে কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি পিআইসি। এরই মধ্যে বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেছে গোটা হাওরাঞ্চল। ফলে বাঁধের কাজ কতটুকু হয়েছে, তা যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই।
অথচ এ পরিস্থিতিতেও সমাপনী বিল পরিশোধের নামে আরও ২০ কোটি টাকা চেয়েছেন পিআইসি প্রধান (জেলা প্রশাসক)। শুধু তাই নয়, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক শর্তানুযায়ী কাজ হয়নি বলে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ করে চিঠি দেয়ার পরও তা উপেক্ষা করা হয়। বিষয়টি রহস্যজনক। এ ব্যাপারে যথাযথ অনুসন্ধান হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
অভিযোগ আছে, হাওররক্ষা বাঁধের নামে শুরু থেকেই অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ক্ষেত্রে অপচয় ও দুর্নীতির সুযোগ থাকে বেশি। বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি ও দুর্নীতি হলে স্থানীয় জনগণকে এর কতটা মাশুল দিতে হয় তার প্রমাণ ২০১৭ সালের এপ্রিলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হাওরের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ব্যাপক ফসলহানির ঘটনা।
তাহিরপুরের শনির হাওর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড পাঁচটি প্যাকেজ বাঁধ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করলেও কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা ১০-১৫ ভাগের বেশি কাজ করেনি। এ কারণে আকস্মিক বন্যায় ফসল ডুবেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ে হাওরটির ধানের ওপর সারা বছরের জীবিকা নির্বাহকারী হাজার হাজার কৃষক। কাজেই বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি ও অনিয়ম কোনোভাবেই বরদাশত করা উচিত নয়।
বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত প্রকল্পের কাজে যাতে কোনো ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।