বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ দেশে প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগে উন্নীত হলেও শিক্ষার মাধ্যমিক স্তর শেষ করার আগেই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাদের অর্জিত শিক্ষা ভুলে যায়। ফলে এই জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বস্তুত পিতামাতা বা অভিভাবকের অসচেতনতা ও দারিদ্র্যের কারণেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব পরিবারের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ কোটি শিশু আর কখনও স্কুলে ফিরবে না। করোনা পরিস্থিতি
সামলাতে বিশ্বের গরিব দেশগুলো শিক্ষা খাতে খরচ কমাবে। এতে দেশে দেশে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে, এমনই ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কী পদক্ষেপ নেবে, তার ওপর নির্ভর করছে কোন দেশে কতসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে।
বিশ্বজুড়ে শিক্ষাব্যবস্থায় করোনা মহামারীর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে কমেছে মানুষের আয়। এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে সংকুচিত হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি। এতে দেশের সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। বস্তুত মহামারীর স্থায়িত্ব যত বাড়বে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তত বৃদ্ধি পাবে।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু তখন নিম্নআয়ের পরিবারের কত সংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষা অব্যাহত থাকবে, এটা এক প্রশ্ন। করোনাকাল শেষ হলে দারিদ্র্যের কারণে অনেক পরিবারে শিশুদের পড়াশোনা করানোর সক্ষমতা থাকবে না। বিশেষভাবে সহায়তা প্রদান করা না হলে এসব পরিবারের শিক্ষার্থীদের অকালেই ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
লক্ষ করা যায়, সচ্ছল পরিবারের তুলনায় দরিদ্র পরিবারে; শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বেশি। এছাড়া আরও অনেক কারণে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। কাজেই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে দেশে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়তে থাকবে। এসডিজির গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষ অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা।
মানসম্মত শিক্ষার বিস্তার নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে আগামীতে দেশে নানা রকম সংকট সৃষ্টি হবে। কাজেই শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে যে পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের সমস্যার সমাধানে সরকারকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।