ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্যাতিত ৮০ হাতির দেখভাল করছেন তিনি ২৫ বছর ধরে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ থাইল্যান্ডে ঘুরতে গেছেন আর হাতির পিঠে চড়েননি এমন কেউ কি আছেন? বলতে পারেন থাইল্যান্ডের সঙ্গে হাতির কথা আসছে কেন। আমাদের দেশেও তো বিভিন্ন জায়গায় হাতির পিঠে চড়া যায়। কক্সবাজার গেলেই তো ঘোড়ার পিঠে চড়ে সুন্দর সময় কাটানো যায়।

না আজ হাতি কিংবা ঘোড়ার পিঠে কোঠায় গেলে চড়তে পারবেন কিংবা এ ব্যাপারে কিছু বলছি না। বলব আপনার আনন্দের পেছনে হাতিদের দুর্বিষহ আর কষ্টের জীবনের কাহিনী। ভাবছেন আপনি তো পারিশ্রমিক দিয়েই রাইড ব্যবহার করেছেন। আসলে যেই হাতি ঘোড়া কিংবা অন্যান্য বন্য প্রাণীদের পোষ মানিয়ে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় তাদের শতকরা ৯৯ শতাংশের জীবনের কাহিনী এখই রকম। আজ থাকছে এমন এক নারীর কথা যিনি গত ২৫ বছর ধরে কাজ করছেন হাতি সুরক্ষায়।

তার সঙ্গেই হাতিদের যত খুনসুটি

তার সঙ্গেই হাতিদের যত খুনসুটি

থাইল্যান্ডের একজন সেচ্ছাসেবক নারী। পর্যটকদের কাছে থাইল্যান্ডের হাতির আকর্ষণ কম নয়।  কিন্তু মানুষের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে হাতির জীবন প্রায়ই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এই নারী অসহায় সেইসব হাতির সুরক্ষার জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন। তিনি অসহায় এবং বয়স্ক হাতিদের জন্য একটি পার্ক করেছেন।

থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ট নেচার পার্কের কথা হয়তো অনেকেই এরইমধ্যে জেনেছেন। একবার তাকালেই লেক চাইলার্ট প্রত্যেকটি হাতিকে আলাদা করে চিনতে পারেন। তার কাছে প্রায় ৮০টি হাতি রয়েছে। এরা সবাই জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। প্রাণীগুলোর জীবনের সব ঘটনাই তার জানা।

এখানকার একটি হাতি কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এক রাইডিং ক্যাম্পে কাজ করতো। প্রতিদিন পর্যটকদের পিঠে নিয়ে ঘুরতে হতো। নির্দেশ অমান্য করলে মালিক বুলহুক দিয়ে হাতিটির চামড়া চিরে দিতো। তবে এখন চাইলার্টের সহযোগিতায় পার্কে স্বাধীন জীবনযাপন করছে হাতিটি।

প্রায় ২৫ বছর ধরে হাতির সুরক্ষার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন থাইল্যান্ডের এই অ্যাক্টিভিস্ট। নিজের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি হাতির জীবনযাত্রার উন্নতির চেষ্টা করছেন। তিনি মারাত্মক নিপীড়নের শিকার হয়েছে এমন হাতি কিনে নেন। অর্থের যোগান হয় অন্যদের দান আর পর্যটকদের থেকে।

স্বাধীনভাবে জীবনযাবন করে এইগুলো এখন

স্বাধীনভাবে জীবনযাবন করে এইগুলো এখন

রাইডের কাজে ব্যবহার করা প্রাণীগুলো একসময় এসে বাতিল হয়ে পড়ে। বয়সের ভারে কাজ করতে না পারায় তারা মালিকের বোঝা হয়ে যায়। ঠিক এই মহামারির সময়টাতে একই অবস্থা। পূ্র্ণবয়স্ক একটি হাতির দাম সাধারণত ২০ লাখ বাট অর্থাৎ ৫০ হাজার ইউরোর একটু বেশি। কিন্তু মহামারির কারণে এই প্রাণী মালিকের জন্য বোঝা হয়ে উঠছে। খোরাক ও দেখাশোনার জন্য তাদের মাসে প্রায় এক হাজার ইউরো ব্যয় হয়।  চাইলার্টের ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে হাতি-প্রতি কমপক্ষে ১০ লাখ বাট পেয়ে মালিক থানাপত কায়ার বেশ খুশি।

বেশিরভাগ হাতিগুলো কয়েক দশক ধরে মানুষ বহন করেছে অথবা মনোরঞ্জনের খোরাক হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু চাইলার্টের ‘এলিফ্যান্ট নেচার পার্ক’-এ সেই প্রাণীগুলোকে কাজ করতে অথবা শিকলে বন্দি থাকতে হয় না। অতিথিরা অর্থের বিনিময়ে শুধু হাতির দর্শন পেতে পারেন। চাইলার্ট বলেন, মানুষ এসে আমাদের প্রকল্প দেখে যান। তারা হাতিদের বিরক্ত করেন না, শুধু দেখেন। সেই অর্থ দিয়ে আমরা আরো হাতি উদ্ধার করতে পারি।

সারাদিনের গল্পই যেন বলছে তারা চাইলার্টকে

সারাদিনের গল্পই যেন বলছে তারা চাইলার্টকে

এখানে তারা হাতিদের সুরক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। খাবার, চিকিৎসা সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন এদের জন্য। চাইলার্ট এদের সঙ্গে সময় কাটান। আঘাতপ্রাপ্ত কোনো হাতি থাকলে তার সেবা এবং চিকিৎসা দেন। এখানে হাতিগুলো বন্দিদশা কাটিয়ে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

নির্যাতিত ৮০ হাতির দেখভাল করছেন তিনি ২৫ বছর ধরে

আপডেট টাইম : ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ থাইল্যান্ডে ঘুরতে গেছেন আর হাতির পিঠে চড়েননি এমন কেউ কি আছেন? বলতে পারেন থাইল্যান্ডের সঙ্গে হাতির কথা আসছে কেন। আমাদের দেশেও তো বিভিন্ন জায়গায় হাতির পিঠে চড়া যায়। কক্সবাজার গেলেই তো ঘোড়ার পিঠে চড়ে সুন্দর সময় কাটানো যায়।

না আজ হাতি কিংবা ঘোড়ার পিঠে কোঠায় গেলে চড়তে পারবেন কিংবা এ ব্যাপারে কিছু বলছি না। বলব আপনার আনন্দের পেছনে হাতিদের দুর্বিষহ আর কষ্টের জীবনের কাহিনী। ভাবছেন আপনি তো পারিশ্রমিক দিয়েই রাইড ব্যবহার করেছেন। আসলে যেই হাতি ঘোড়া কিংবা অন্যান্য বন্য প্রাণীদের পোষ মানিয়ে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় তাদের শতকরা ৯৯ শতাংশের জীবনের কাহিনী এখই রকম। আজ থাকছে এমন এক নারীর কথা যিনি গত ২৫ বছর ধরে কাজ করছেন হাতি সুরক্ষায়।

তার সঙ্গেই হাতিদের যত খুনসুটি

তার সঙ্গেই হাতিদের যত খুনসুটি

থাইল্যান্ডের একজন সেচ্ছাসেবক নারী। পর্যটকদের কাছে থাইল্যান্ডের হাতির আকর্ষণ কম নয়।  কিন্তু মানুষের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে হাতির জীবন প্রায়ই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এই নারী অসহায় সেইসব হাতির সুরক্ষার জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন। তিনি অসহায় এবং বয়স্ক হাতিদের জন্য একটি পার্ক করেছেন।

থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ট নেচার পার্কের কথা হয়তো অনেকেই এরইমধ্যে জেনেছেন। একবার তাকালেই লেক চাইলার্ট প্রত্যেকটি হাতিকে আলাদা করে চিনতে পারেন। তার কাছে প্রায় ৮০টি হাতি রয়েছে। এরা সবাই জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। প্রাণীগুলোর জীবনের সব ঘটনাই তার জানা।

এখানকার একটি হাতি কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এক রাইডিং ক্যাম্পে কাজ করতো। প্রতিদিন পর্যটকদের পিঠে নিয়ে ঘুরতে হতো। নির্দেশ অমান্য করলে মালিক বুলহুক দিয়ে হাতিটির চামড়া চিরে দিতো। তবে এখন চাইলার্টের সহযোগিতায় পার্কে স্বাধীন জীবনযাপন করছে হাতিটি।

প্রায় ২৫ বছর ধরে হাতির সুরক্ষার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন থাইল্যান্ডের এই অ্যাক্টিভিস্ট। নিজের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি হাতির জীবনযাত্রার উন্নতির চেষ্টা করছেন। তিনি মারাত্মক নিপীড়নের শিকার হয়েছে এমন হাতি কিনে নেন। অর্থের যোগান হয় অন্যদের দান আর পর্যটকদের থেকে।

স্বাধীনভাবে জীবনযাবন করে এইগুলো এখন

স্বাধীনভাবে জীবনযাবন করে এইগুলো এখন

রাইডের কাজে ব্যবহার করা প্রাণীগুলো একসময় এসে বাতিল হয়ে পড়ে। বয়সের ভারে কাজ করতে না পারায় তারা মালিকের বোঝা হয়ে যায়। ঠিক এই মহামারির সময়টাতে একই অবস্থা। পূ্র্ণবয়স্ক একটি হাতির দাম সাধারণত ২০ লাখ বাট অর্থাৎ ৫০ হাজার ইউরোর একটু বেশি। কিন্তু মহামারির কারণে এই প্রাণী মালিকের জন্য বোঝা হয়ে উঠছে। খোরাক ও দেখাশোনার জন্য তাদের মাসে প্রায় এক হাজার ইউরো ব্যয় হয়।  চাইলার্টের ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে হাতি-প্রতি কমপক্ষে ১০ লাখ বাট পেয়ে মালিক থানাপত কায়ার বেশ খুশি।

বেশিরভাগ হাতিগুলো কয়েক দশক ধরে মানুষ বহন করেছে অথবা মনোরঞ্জনের খোরাক হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু চাইলার্টের ‘এলিফ্যান্ট নেচার পার্ক’-এ সেই প্রাণীগুলোকে কাজ করতে অথবা শিকলে বন্দি থাকতে হয় না। অতিথিরা অর্থের বিনিময়ে শুধু হাতির দর্শন পেতে পারেন। চাইলার্ট বলেন, মানুষ এসে আমাদের প্রকল্প দেখে যান। তারা হাতিদের বিরক্ত করেন না, শুধু দেখেন। সেই অর্থ দিয়ে আমরা আরো হাতি উদ্ধার করতে পারি।

সারাদিনের গল্পই যেন বলছে তারা চাইলার্টকে

সারাদিনের গল্পই যেন বলছে তারা চাইলার্টকে

এখানে তারা হাতিদের সুরক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। খাবার, চিকিৎসা সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন এদের জন্য। চাইলার্ট এদের সঙ্গে সময় কাটান। আঘাতপ্রাপ্ত কোনো হাতি থাকলে তার সেবা এবং চিকিৎসা দেন। এখানে হাতিগুলো বন্দিদশা কাটিয়ে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করে।