ঢাকা , সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইলিশের কৃত্রিম প্রজননও জরুরি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে লোনা ও স্বাদু পানিতে বিচরণ করা মাছের বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তন হয় এবং এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মাছের প্রজননচক্র, মাছের দেশান্তর গতিবেগ, বাঁচা ও মরার হার জড়িত। ফলে মাছের মোট উৎপাদনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনুরূপভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি দূষণের ফলে ইলিশের প্রাকৃতিক প্রজনন, নতুন ইলিশের সংযোজন (Recruitment) পদ্ধতি এবং দেশান্তর প্রকৃতির স্বাভাবিক আচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের মজুদের সম্ভাব্য যেসব পরিবর্তন হতে পারে তা হল- ক. ইলিশের ঝাঁক মোহনার নিম্নাঞ্চলে স্থানান্তরের আশঙ্কা রয়েছে। খ. সাধারণ জেলেদের ইলিশ আহরণ নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। গ. অস্বাভাবিক জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে সাইক্লোনের তীব্রতা বাড়তে থাকবে; যার ফলে সাধারণ জেলেদের ইলিশ আহরণ অসম্ভব হবে। ঘ. গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর অববাহিকার পানিপ্রবাহ কমে গেলে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হতে পারে। ঙ. পানিদূষণের (শিল্পবর্জ্য ও কীটনাশক) কারণে আগামী দিনে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হবে। ইলিশের স্বাদু ও লোনা পানির বার্ষিক আহরণের চিত্র থেকে বোঝা যাচ্ছে, ইলিশের আহরণ দিনে দিনে লোনা পানিতে বাড়ছে। এতে প্রতীয়মান হয়, ইলিশের প্রজনন মোহনার নিম্নাঞ্চলে সরে যাচ্ছে।

ইলিশ প্রাকৃতিকভাবে দ্রুত দেশান্তর প্রকৃতির। ইলিশ আমাদের দেশের মাছ, যা ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। তবে নদীগুলোর পানিদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন হতে থাকলে দীর্ঘমেয়াদে ইলিশের দেশান্তর প্রকৃতির গতি পরিবর্তন হতে পারে। ইলিশ ডিম পাড়ে স্বাদু পানিতে এবং পরে লবণাক্ত পানিতে ফিরে যায়। অতএব দ্রুত স্থান পরিবর্তনশীল এ প্রজাতির ইলিশের ওপর বাংলাদেশে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। যেমন- ইলিশের প্রকৃত প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়ায় চলমান গবেষণার প্রয়োজন। শুধু ২২ দিনব্যাপী ইলিশ ধরা ও বিক্রি বন্ধ রাখলেই সন্তোষজনক উৎপাদন সম্ভব হবে না। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম প্রজননও অত্যাবশ্যক। মোহনার নিম্নাঞ্চলে কৃত্রিম হ্যাচারি ও গবেষণাগার স্থাপন করা দরকার। দীর্ঘ মেয়াদে গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীদের কাজ করতে হবে। প্রতিবছর জাতীয় সেমিনারের মাধ্যমে গবেষণার দিকনির্দেশনা প্রদান করা দরকার। টাস্কফোর্স গঠন করে ইলিশের গবেষণার ওপর গুরুত্ব বাড়ানো দরকার।

ইলিশের ডিম ধারণক্ষমতা ১.৫-২০ লাখ। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের ডিম ধারণক্ষমতা দিনে দিনে কম যাচ্ছে, যা গড়ে ১২ লাখ। এ প্রক্রিয়া চলমান থাকলে ইলিশের মোট উৎপাদন দীর্ঘ মেয়াদে উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। উল্লেখ্য, স্বাদু ও লবণাক্ত পানিতে ইলিশের ঝাঁকের ডিম ধারণক্ষমতা কমছে।

ইলিশের মজুদ ব্যবস্থাপনায় লিঙ্গবৈষম্য একটি অন্যতম বিশেষ দিক। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ইলিশের ঝাঁকের প্রজনন ক্ষেত্র মোহনায় নিম্নাঞ্চলে সরে যাচ্ছে। ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রে (নিম্নাঞ্চল) ইলিশের লিঙ্গবৈষম্য ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন গবেষকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষ ইলিশের সংখ্যার চেয়ে স্ত্রী ইলিশের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় পুরুষ ও স্ত্রী মাছের সংখ্যার বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে দীর্ঘমেয়াদে প্রজনন হার কমে যাবে। ফলে ইলিশের মোট উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতএব, ইলিশের অব্যাহত উৎপাদনের লক্ষ্যে ২২ দিনব্যাপী ইলিশ ধরা ও বিক্রি বন্ধই যথেষ্ট নয়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক।

ইলিশ প্রাকৃতিকভাবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মোহনা অঞ্চলে ডিম পাড়ে। বর্তমানে ইলিশের Breeding Frequency, প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ ও মজুদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২২ দিনব্যাপী ইলিশ ধরা ও বিক্রি বন্ধ করেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রধান সহায়ক হিসেবে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের ডিম ধারণক্ষমতা ও অসম লিঙ্গবৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে ইলিশের উৎপাদন ব্যাহত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে ইলিশের কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা ও ক্ষেত্র তৈরির মতো বিকল্প ব্যবস্থাপনার দিকের মনোযোগ দেয়াও অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।

২.

দেশে এখনও ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের জন্য হ্যাচারি স্থাপনসহ কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং মৎস্য অধিদফতর একটি গতিশীল গবেষণামূলক ইন্সটিটিউট স্থাপন করবে, যে প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। স্যামন মাছের কৃত্রিম প্রজননের অনুরূপ হতে পারে ইলিশ মাছের কৃত্রিম প্রজনন। ইলিশের দেশান্তর প্রকৃতি ও প্রজনন বৈশিষ্ট্য Atlantic Salmon প্রজাতি মাছের মতোই। উন্নত দেশে স্যামন মাছের প্রজনন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটেছে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে (ইউরোপ, ডেনমার্ক, নরওয়ে ও আমেরিকাতে) স্যামন মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে, যদিও স্যামন মাছ ইলিশ প্রজাতির মতোই দেশান্তর প্রকৃতির Anadromous। এ মাছটি স্বাদু ও লবণাক্ত পানিতে বিচরণ করে স্বাধু পানিতে ডিম পাড়ে। স্যামন মাছের কৃত্রিম প্রজননের ফলে এ মাছের উৎপাদন বেড়েছে। স্যামন মাছের দ্বিতীয় বছরে পরিপক্বতা আসে এবং এরা সমুদ্র থেকে বিপরীত স্রোতে নদীতে আসে। স্যামন মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৃত্রিম উপায়ে স্রোতের মাধ্যমে প্রজনন করা সম্ভব হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ইলিশের বেলায়ও তা সম্ভব হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

এসব দিক বিবেচনা করে ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের জন্য বাস্তবমুখী গবেষণাসহ পরিকল্পনা গ্রহণ করা অতি জরুরি।

ড. মো. শহীদুল্লাহ মিয়া : অধ্যাপক ও ডিন, কলেজ অব অ্যাগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস, আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ইলিশের কৃত্রিম প্রজননও জরুরি

আপডেট টাইম : ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে লোনা ও স্বাদু পানিতে বিচরণ করা মাছের বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তন হয় এবং এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মাছের প্রজননচক্র, মাছের দেশান্তর গতিবেগ, বাঁচা ও মরার হার জড়িত। ফলে মাছের মোট উৎপাদনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনুরূপভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি দূষণের ফলে ইলিশের প্রাকৃতিক প্রজনন, নতুন ইলিশের সংযোজন (Recruitment) পদ্ধতি এবং দেশান্তর প্রকৃতির স্বাভাবিক আচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের মজুদের সম্ভাব্য যেসব পরিবর্তন হতে পারে তা হল- ক. ইলিশের ঝাঁক মোহনার নিম্নাঞ্চলে স্থানান্তরের আশঙ্কা রয়েছে। খ. সাধারণ জেলেদের ইলিশ আহরণ নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। গ. অস্বাভাবিক জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে সাইক্লোনের তীব্রতা বাড়তে থাকবে; যার ফলে সাধারণ জেলেদের ইলিশ আহরণ অসম্ভব হবে। ঘ. গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর অববাহিকার পানিপ্রবাহ কমে গেলে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হতে পারে। ঙ. পানিদূষণের (শিল্পবর্জ্য ও কীটনাশক) কারণে আগামী দিনে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হবে। ইলিশের স্বাদু ও লোনা পানির বার্ষিক আহরণের চিত্র থেকে বোঝা যাচ্ছে, ইলিশের আহরণ দিনে দিনে লোনা পানিতে বাড়ছে। এতে প্রতীয়মান হয়, ইলিশের প্রজনন মোহনার নিম্নাঞ্চলে সরে যাচ্ছে।

ইলিশ প্রাকৃতিকভাবে দ্রুত দেশান্তর প্রকৃতির। ইলিশ আমাদের দেশের মাছ, যা ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। তবে নদীগুলোর পানিদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন হতে থাকলে দীর্ঘমেয়াদে ইলিশের দেশান্তর প্রকৃতির গতি পরিবর্তন হতে পারে। ইলিশ ডিম পাড়ে স্বাদু পানিতে এবং পরে লবণাক্ত পানিতে ফিরে যায়। অতএব দ্রুত স্থান পরিবর্তনশীল এ প্রজাতির ইলিশের ওপর বাংলাদেশে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। যেমন- ইলিশের প্রকৃত প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়ায় চলমান গবেষণার প্রয়োজন। শুধু ২২ দিনব্যাপী ইলিশ ধরা ও বিক্রি বন্ধ রাখলেই সন্তোষজনক উৎপাদন সম্ভব হবে না। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম প্রজননও অত্যাবশ্যক। মোহনার নিম্নাঞ্চলে কৃত্রিম হ্যাচারি ও গবেষণাগার স্থাপন করা দরকার। দীর্ঘ মেয়াদে গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীদের কাজ করতে হবে। প্রতিবছর জাতীয় সেমিনারের মাধ্যমে গবেষণার দিকনির্দেশনা প্রদান করা দরকার। টাস্কফোর্স গঠন করে ইলিশের গবেষণার ওপর গুরুত্ব বাড়ানো দরকার।

ইলিশের ডিম ধারণক্ষমতা ১.৫-২০ লাখ। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের ডিম ধারণক্ষমতা দিনে দিনে কম যাচ্ছে, যা গড়ে ১২ লাখ। এ প্রক্রিয়া চলমান থাকলে ইলিশের মোট উৎপাদন দীর্ঘ মেয়াদে উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। উল্লেখ্য, স্বাদু ও লবণাক্ত পানিতে ইলিশের ঝাঁকের ডিম ধারণক্ষমতা কমছে।

ইলিশের মজুদ ব্যবস্থাপনায় লিঙ্গবৈষম্য একটি অন্যতম বিশেষ দিক। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ইলিশের ঝাঁকের প্রজনন ক্ষেত্র মোহনায় নিম্নাঞ্চলে সরে যাচ্ছে। ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রে (নিম্নাঞ্চল) ইলিশের লিঙ্গবৈষম্য ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন গবেষকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষ ইলিশের সংখ্যার চেয়ে স্ত্রী ইলিশের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় পুরুষ ও স্ত্রী মাছের সংখ্যার বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে দীর্ঘমেয়াদে প্রজনন হার কমে যাবে। ফলে ইলিশের মোট উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতএব, ইলিশের অব্যাহত উৎপাদনের লক্ষ্যে ২২ দিনব্যাপী ইলিশ ধরা ও বিক্রি বন্ধই যথেষ্ট নয়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক।

ইলিশ প্রাকৃতিকভাবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মোহনা অঞ্চলে ডিম পাড়ে। বর্তমানে ইলিশের Breeding Frequency, প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ ও মজুদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২২ দিনব্যাপী ইলিশ ধরা ও বিক্রি বন্ধ করেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রধান সহায়ক হিসেবে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের ডিম ধারণক্ষমতা ও অসম লিঙ্গবৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে ইলিশের উৎপাদন ব্যাহত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে ইলিশের কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা ও ক্ষেত্র তৈরির মতো বিকল্প ব্যবস্থাপনার দিকের মনোযোগ দেয়াও অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।

২.

দেশে এখনও ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের জন্য হ্যাচারি স্থাপনসহ কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং মৎস্য অধিদফতর একটি গতিশীল গবেষণামূলক ইন্সটিটিউট স্থাপন করবে, যে প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। স্যামন মাছের কৃত্রিম প্রজননের অনুরূপ হতে পারে ইলিশ মাছের কৃত্রিম প্রজনন। ইলিশের দেশান্তর প্রকৃতি ও প্রজনন বৈশিষ্ট্য Atlantic Salmon প্রজাতি মাছের মতোই। উন্নত দেশে স্যামন মাছের প্রজনন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটেছে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে (ইউরোপ, ডেনমার্ক, নরওয়ে ও আমেরিকাতে) স্যামন মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে, যদিও স্যামন মাছ ইলিশ প্রজাতির মতোই দেশান্তর প্রকৃতির Anadromous। এ মাছটি স্বাদু ও লবণাক্ত পানিতে বিচরণ করে স্বাধু পানিতে ডিম পাড়ে। স্যামন মাছের কৃত্রিম প্রজননের ফলে এ মাছের উৎপাদন বেড়েছে। স্যামন মাছের দ্বিতীয় বছরে পরিপক্বতা আসে এবং এরা সমুদ্র থেকে বিপরীত স্রোতে নদীতে আসে। স্যামন মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৃত্রিম উপায়ে স্রোতের মাধ্যমে প্রজনন করা সম্ভব হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ইলিশের বেলায়ও তা সম্ভব হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

এসব দিক বিবেচনা করে ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের জন্য বাস্তবমুখী গবেষণাসহ পরিকল্পনা গ্রহণ করা অতি জরুরি।

ড. মো. শহীদুল্লাহ মিয়া : অধ্যাপক ও ডিন, কলেজ অব অ্যাগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস, আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা