ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলোচনায় ছাগল

ছাগল নিয়ে জল অনেক ঘোলা হলো। ফুলগাছ খাওয়ায় ছাগলকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করার ঘটনা এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। এরই মধ্যে ইউএনও গতকাল বৃহস্পতিবার ছাগলটি তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেন। আসলে কি ঘটেছিল?
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা পরিষদ চত্বরের বাগানে ফুলগাছ খেয়েছিল ছাগলটি। এ অপরাধে ইউএনও সীমা শারমিন ছাগল মালিকের অনুপস্থিতিতে এ জরিমানা করেন। খবর রটে এ ছাগল বিক্রি করে জরিমানা আদায় করা হয়। ইউএনও অবশ্য বলেছেন, ছাগল বিক্রির অভিযোগ ভিত্তিহীন। জরিমানা করার পর ছাগল আমার এখানে নিরাপত্তার জন্যই জিম্মায় রাখা হয়েছিল একজনের কাছে।

যাতে ছাগলের কোনো ক্ষতি না হয়। ওই নারী জরিমানার টাকা ফেরত দিতে পারেনি বলে দেননি।
ফেরত পাওয়া ওই ছাগলের মালিক সাহারা বেগম বলেন, ১০ দিন যাবৎ আমার ছাগল তাদের কাছে থাকায় খুব অসুস্থ হয়ে গেছে।
সাহারা বেগম উপজেলা পরিষদ চত্বরের ডাকবাংলো সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন। তার স্বামীর নাম জিল্লুর রহমান। গত ১৭ মে তার ছাগলটি হারিয়ে যায়। অনেক জায়গায় তিনি ছাগলটির সন্ধান করেন। পরে এলাকার লোকজন তাকে জানায়, ছাগলটি ইউএনওর এক নিরাপত্তা কর্মীর নিকট রয়েছে। তিনি ইউএনওর বাসার পাশে গিয়ে এক নিরাপত্তা কর্মীকে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে দেখেন। এ সময় সাহারা বেগম ছাগল নিতে চাইলে তাকে ছাগল দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেয় ওই নিরাপত্তাকর্মী।
নিরুপায় হয়ে তিনি ইউএনওর কাছে গেলে তাকে তিনি বলেন, ‘ফুলগাছের পাতা খাওয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিয়ে ছাগল নিয়ে যান। ’ জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ইউএনও গত শনিবার ছাগলটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে সাহারা খাতুন অভিযোগ করেন।
সাহারা বেগম জানান, ইউএনও’র বাসার গৃহকর্মী তাকে জানায় ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। জরিমানার দুই হাজার টাকা বাদ দিয়ে বাকি তিন হাজার টাকা নিয়ে আসার জন্য বলে ওই গৃহকর্মী।
ওদিকে ছাগল নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ফেসবুক লাইভে এসে কি বলছেন, তা একটু শুনি। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমরা কতবার বলেছি ছাগল দিয়ে হালচাষ হয় না। আর আমরা কথায় কথায় বলতাম এই ছাগলের বাচ্চারে দিয়ে কিছু হবে না। আজ বাংলাদেশের আলোচিত বিষয়  হচ্ছে এরকম একটি ছাগল। উপজেলা চত্বরে ফুলের গাছ নষ্ট করার কারণে এই ছাগলের মালিককে দুই হাজার টাকা ফাইন করা হয়েছে। ফাইন করার পরে যেহেতু ছাগলের মালিক টাকা দিতে পারেননি. অভিযোগ আছে এই ছাগলটি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে। আর এ ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে জানেন, বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলায়। ইউএনও সাহেব নিজে এ কাজটি করেছেন। অভিযোগ আছে ছাগলের মালিকের অনুপস্থিতিতে ছাগলটি বিক্রি করে দিয়েছেন ফাইন আদায়ের জন্য। এখন আমি আইনি ব্যাখ্যায় যাবো না। উনি ঠিক করেছেন কিনা এটা আদালতে গিয়ে হবে। আমি এখানে হাতিরপুলে অনেকগুলো ছাগলের দোকান আছে। এখানে এসেছি। আমার কাছে মনে হয় কিছু কিছু জায়গায় ছাগলরাই দেশটা চালাচ্ছেন। আপনি একটা জিনিস চিন্তা করে দেখেন একজন ইউএনও একটা উপজেলার মোটামুুটি সব চালান। নির্বাহী লোকের হাতে আইনের ক্ষমতা দিলে কি হয়-এটা এর একটা প্রমাণ। আইন প্রয়োগ করতে ছাগলকে জরিমানা করেন। আমি বলছি না যে তিনি সাংঘাতিক খারাপ কিছু করেছেন। কিন্তু যে জিনিসটা নরমালি ছাগলের মালিককে ডেকে এনে অথবা একজন পুলিশ কনস্টেবলকে দিয়ে তাকে এনে যদি বলা যেতো আপনার ছাগল যেন আর এখানে না আসে। আমি শুধু বুঝাতে চাই, দেশটা কিভাবে চলছে। কিছু কিছু ইউএনও আছেন যাদের নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। আবার কিছু ইউএনও আছেন এই যে, সীমা শারমিন। তিনি কি কাজটা করলেন ছাগলকে ফাইন করার মধ্যে দিয়ে আসলে যে একটা নির্বাহী ক্ষমতা এটা যে মাঝে মাঝে উনার কথা বলছি না, এটা যে ছাগলের হাতে চলে যায় এটার লক্ষণ দেখালেন। আমার কথা হলো- এমন কোন কাজ করতে হয় না যেগুলো মানুষের ইমেজকে নিচের দিকে নামিয়ে ফেলে। একটি উপজেলায় শত শত ঘটনা ঘটে। একজন ইউএনও যদি ম্যানেজ করতে না পারেন তাহলে এলাকাটির অবস্থা কি হতে পারে আপনাদের জানা নেই। এখানে একজন ছাগলের মালিক আছেন। তাকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আচ্ছা আপনার এ ছাগলকে যদি ওই কারণে দুই হাজার টাকা ফাইন করে তাহলে আপনার কেমন মনে হবে বলেন তো? ছাগলের মালিকের উত্তর, অনেক কষ্ট হবে। দুই হাজার টাকা তো ছাগলের দামই অনেক সময় হয় না। আইন তো আছেই, আপনি প্রয়োগ করতে পারবেন। আর এ প্রয়োগের মাধ্যমে যদি মানুষকে নির্যাতন করা হয় তা কতটুকু ঠিক হলো। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, মানবিকতাটা হলো বড়। মানবিকতা যদি থাকে আইন লাগে না। আইন ছাড়াই আপনি মানুষের সেবা করতে পারবেন। আর আইন যাদের হাতে ন্যস্ত আছে, আমি বারবার বলি অফিসাররা জমিদারি আচরণ করেন। কিছুদিন আগে একজন ডিসি সাহেব তার নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে একজন সাংবাদিককে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা হাইকোর্টে তার বিষয়টি নজরে নিয়ে এসেছি। এখন এমন জায়গায় পড়েছি আপনারাই বলেন, ছাগলের মালিকরে আমি কি বুঝ দেবো? কারণ এ ছাগলের মামলায় গিয়ে তো আমি নিজে ছাগল হতে পারি না। আর যাদের আচরণ ছাগলের মতো তাদের বিরুদ্ধে তো কিছু বলাও যায় না। তারপরও এসব নিউজ যখন দেখি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হই। আমার মনে হয়, কিছু মানুষের আরো সচেতন হওয়া দরকার। আজকের মতো এই ছাগলের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

আলোচনায় ছাগল

আপডেট টাইম : ০১:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মে ২০২১

ছাগল নিয়ে জল অনেক ঘোলা হলো। ফুলগাছ খাওয়ায় ছাগলকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করার ঘটনা এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। এরই মধ্যে ইউএনও গতকাল বৃহস্পতিবার ছাগলটি তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেন। আসলে কি ঘটেছিল?
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা পরিষদ চত্বরের বাগানে ফুলগাছ খেয়েছিল ছাগলটি। এ অপরাধে ইউএনও সীমা শারমিন ছাগল মালিকের অনুপস্থিতিতে এ জরিমানা করেন। খবর রটে এ ছাগল বিক্রি করে জরিমানা আদায় করা হয়। ইউএনও অবশ্য বলেছেন, ছাগল বিক্রির অভিযোগ ভিত্তিহীন। জরিমানা করার পর ছাগল আমার এখানে নিরাপত্তার জন্যই জিম্মায় রাখা হয়েছিল একজনের কাছে।

যাতে ছাগলের কোনো ক্ষতি না হয়। ওই নারী জরিমানার টাকা ফেরত দিতে পারেনি বলে দেননি।
ফেরত পাওয়া ওই ছাগলের মালিক সাহারা বেগম বলেন, ১০ দিন যাবৎ আমার ছাগল তাদের কাছে থাকায় খুব অসুস্থ হয়ে গেছে।
সাহারা বেগম উপজেলা পরিষদ চত্বরের ডাকবাংলো সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন। তার স্বামীর নাম জিল্লুর রহমান। গত ১৭ মে তার ছাগলটি হারিয়ে যায়। অনেক জায়গায় তিনি ছাগলটির সন্ধান করেন। পরে এলাকার লোকজন তাকে জানায়, ছাগলটি ইউএনওর এক নিরাপত্তা কর্মীর নিকট রয়েছে। তিনি ইউএনওর বাসার পাশে গিয়ে এক নিরাপত্তা কর্মীকে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে দেখেন। এ সময় সাহারা বেগম ছাগল নিতে চাইলে তাকে ছাগল দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেয় ওই নিরাপত্তাকর্মী।
নিরুপায় হয়ে তিনি ইউএনওর কাছে গেলে তাকে তিনি বলেন, ‘ফুলগাছের পাতা খাওয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিয়ে ছাগল নিয়ে যান। ’ জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ইউএনও গত শনিবার ছাগলটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে সাহারা খাতুন অভিযোগ করেন।
সাহারা বেগম জানান, ইউএনও’র বাসার গৃহকর্মী তাকে জানায় ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। জরিমানার দুই হাজার টাকা বাদ দিয়ে বাকি তিন হাজার টাকা নিয়ে আসার জন্য বলে ওই গৃহকর্মী।
ওদিকে ছাগল নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ফেসবুক লাইভে এসে কি বলছেন, তা একটু শুনি। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমরা কতবার বলেছি ছাগল দিয়ে হালচাষ হয় না। আর আমরা কথায় কথায় বলতাম এই ছাগলের বাচ্চারে দিয়ে কিছু হবে না। আজ বাংলাদেশের আলোচিত বিষয়  হচ্ছে এরকম একটি ছাগল। উপজেলা চত্বরে ফুলের গাছ নষ্ট করার কারণে এই ছাগলের মালিককে দুই হাজার টাকা ফাইন করা হয়েছে। ফাইন করার পরে যেহেতু ছাগলের মালিক টাকা দিতে পারেননি. অভিযোগ আছে এই ছাগলটি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে। আর এ ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে জানেন, বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলায়। ইউএনও সাহেব নিজে এ কাজটি করেছেন। অভিযোগ আছে ছাগলের মালিকের অনুপস্থিতিতে ছাগলটি বিক্রি করে দিয়েছেন ফাইন আদায়ের জন্য। এখন আমি আইনি ব্যাখ্যায় যাবো না। উনি ঠিক করেছেন কিনা এটা আদালতে গিয়ে হবে। আমি এখানে হাতিরপুলে অনেকগুলো ছাগলের দোকান আছে। এখানে এসেছি। আমার কাছে মনে হয় কিছু কিছু জায়গায় ছাগলরাই দেশটা চালাচ্ছেন। আপনি একটা জিনিস চিন্তা করে দেখেন একজন ইউএনও একটা উপজেলার মোটামুুটি সব চালান। নির্বাহী লোকের হাতে আইনের ক্ষমতা দিলে কি হয়-এটা এর একটা প্রমাণ। আইন প্রয়োগ করতে ছাগলকে জরিমানা করেন। আমি বলছি না যে তিনি সাংঘাতিক খারাপ কিছু করেছেন। কিন্তু যে জিনিসটা নরমালি ছাগলের মালিককে ডেকে এনে অথবা একজন পুলিশ কনস্টেবলকে দিয়ে তাকে এনে যদি বলা যেতো আপনার ছাগল যেন আর এখানে না আসে। আমি শুধু বুঝাতে চাই, দেশটা কিভাবে চলছে। কিছু কিছু ইউএনও আছেন যাদের নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। আবার কিছু ইউএনও আছেন এই যে, সীমা শারমিন। তিনি কি কাজটা করলেন ছাগলকে ফাইন করার মধ্যে দিয়ে আসলে যে একটা নির্বাহী ক্ষমতা এটা যে মাঝে মাঝে উনার কথা বলছি না, এটা যে ছাগলের হাতে চলে যায় এটার লক্ষণ দেখালেন। আমার কথা হলো- এমন কোন কাজ করতে হয় না যেগুলো মানুষের ইমেজকে নিচের দিকে নামিয়ে ফেলে। একটি উপজেলায় শত শত ঘটনা ঘটে। একজন ইউএনও যদি ম্যানেজ করতে না পারেন তাহলে এলাকাটির অবস্থা কি হতে পারে আপনাদের জানা নেই। এখানে একজন ছাগলের মালিক আছেন। তাকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আচ্ছা আপনার এ ছাগলকে যদি ওই কারণে দুই হাজার টাকা ফাইন করে তাহলে আপনার কেমন মনে হবে বলেন তো? ছাগলের মালিকের উত্তর, অনেক কষ্ট হবে। দুই হাজার টাকা তো ছাগলের দামই অনেক সময় হয় না। আইন তো আছেই, আপনি প্রয়োগ করতে পারবেন। আর এ প্রয়োগের মাধ্যমে যদি মানুষকে নির্যাতন করা হয় তা কতটুকু ঠিক হলো। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, মানবিকতাটা হলো বড়। মানবিকতা যদি থাকে আইন লাগে না। আইন ছাড়াই আপনি মানুষের সেবা করতে পারবেন। আর আইন যাদের হাতে ন্যস্ত আছে, আমি বারবার বলি অফিসাররা জমিদারি আচরণ করেন। কিছুদিন আগে একজন ডিসি সাহেব তার নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে একজন সাংবাদিককে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা হাইকোর্টে তার বিষয়টি নজরে নিয়ে এসেছি। এখন এমন জায়গায় পড়েছি আপনারাই বলেন, ছাগলের মালিকরে আমি কি বুঝ দেবো? কারণ এ ছাগলের মামলায় গিয়ে তো আমি নিজে ছাগল হতে পারি না। আর যাদের আচরণ ছাগলের মতো তাদের বিরুদ্ধে তো কিছু বলাও যায় না। তারপরও এসব নিউজ যখন দেখি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হই। আমার মনে হয়, কিছু মানুষের আরো সচেতন হওয়া দরকার। আজকের মতো এই ছাগলের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।