ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকার বাসযোগ্যতা, বায়ুদূষণ কমিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে সবুজ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আমাদের রাজধানী ঢাকা যে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে, এবারও তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার পেল। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বিশ্ব বাসযোগ্যতার সর্বশেষ সূচকে ঢাকা গতবারের চেয়ে এক ধাপ এগোলেও এ নগরীর অবস্থান রয়ে গেছে তলানিতেই।

তালিকায় শেষদিক থেকে চার নম্বরে রয়েছে ঢাকা। ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম। উল্লেখ্য, বসবাসের জন্য সবচেয়ে অযোগ্য শহর নির্বাচিত হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। ঢাকা কেবল এ বছরই নয়, ২০১২ সাল থেকে নিয়মিতই বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকার শেষ দশের মধ্যে স্থান পেয়ে আসছে। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি গ্লানির বিষয়।

বিশ্বে যে দেশগুলোর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ তার অন্যতম। মেগাসিটি রাজধানী ঢাকায় এর প্রভাবটা আরও বেশি।

একদিকে গাছপালা কেটে নতুন নতুন দালানকোঠা নির্মাণ, অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন এ নগরীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করছে। তাই নগরীতে এখন আগের মতো ঋতু বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায় না। প্রকৃতিতে দীর্ঘ হচ্ছে গ্রীষ্মকাল। অন্যদিকে শীতসহ অন্যান্য ঋতুর প্রভাব অনুভূত হচ্ছে কম। বস্তুত অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অতিরিক্ত দূষণ, জনসংখ্যার অতি ঘনত্ব ইত্যাদি কারণে নগরীর পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর ক্রমাগত পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।

তাপমাত্রা বৃদ্ধিও ঢাকা নগরীর বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠার একটি কারণ বৈকি। এ নগরীর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে প্রভাবটা পড়ছে তা ‘হিট আইল্যান্ড ইফেক্ট’ নামে পরিচিত। এর মাশুল দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

আমরা আমাদের প্রিয় নগরীর প্রাণভোমরাকে তিলে তিলে ধ্বংস হতে দিচ্ছি। এ অবস্থা চলতে পারে না। এ থেকে উত্তরণ জরুরি। প্রশ্ন হল, কীভাবে তা সম্ভব? প্রথমত, পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে এ নগরীতে সবুজ ফিরিয়ে আনতে হবে। উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে হবে বায়ুদূষণ।

দ্বিতীয়ত, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট যে বিষয়গুলোকে বাসযোগ্য শহরের মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে, সেগুলোয় দৃষ্টি দিতে হবে। যেমন-স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামো। এসব ক্ষেত্রে অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর কাজ হতে হবে পরিবেশবান্ধব। রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পটি উন্নয়নের একটি আদর্শ মডেল।

জলাধার ও পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখেও যে উন্নয়ন করা যায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এ প্রকল্প। অন্যান্য প্রকল্প গ্রহণের সময় এই চিন্তা মাথায় রাখতে হবে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নগরবাসীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করাটাও বাসযোগ্যতার একটি নির্ধারক বটে।

এসব ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্তরা যদি আন্তরিক হন এবং জনসচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেন, তাহলে আমাদের রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলা কঠিন কিছু নয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ঢাকার বাসযোগ্যতা, বায়ুদূষণ কমিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে সবুজ

আপডেট টাইম : ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আমাদের রাজধানী ঢাকা যে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে, এবারও তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার পেল। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বিশ্ব বাসযোগ্যতার সর্বশেষ সূচকে ঢাকা গতবারের চেয়ে এক ধাপ এগোলেও এ নগরীর অবস্থান রয়ে গেছে তলানিতেই।

তালিকায় শেষদিক থেকে চার নম্বরে রয়েছে ঢাকা। ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম। উল্লেখ্য, বসবাসের জন্য সবচেয়ে অযোগ্য শহর নির্বাচিত হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। ঢাকা কেবল এ বছরই নয়, ২০১২ সাল থেকে নিয়মিতই বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকার শেষ দশের মধ্যে স্থান পেয়ে আসছে। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি গ্লানির বিষয়।

বিশ্বে যে দেশগুলোর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ তার অন্যতম। মেগাসিটি রাজধানী ঢাকায় এর প্রভাবটা আরও বেশি।

একদিকে গাছপালা কেটে নতুন নতুন দালানকোঠা নির্মাণ, অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন এ নগরীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করছে। তাই নগরীতে এখন আগের মতো ঋতু বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায় না। প্রকৃতিতে দীর্ঘ হচ্ছে গ্রীষ্মকাল। অন্যদিকে শীতসহ অন্যান্য ঋতুর প্রভাব অনুভূত হচ্ছে কম। বস্তুত অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অতিরিক্ত দূষণ, জনসংখ্যার অতি ঘনত্ব ইত্যাদি কারণে নগরীর পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর ক্রমাগত পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।

তাপমাত্রা বৃদ্ধিও ঢাকা নগরীর বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠার একটি কারণ বৈকি। এ নগরীর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে প্রভাবটা পড়ছে তা ‘হিট আইল্যান্ড ইফেক্ট’ নামে পরিচিত। এর মাশুল দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

আমরা আমাদের প্রিয় নগরীর প্রাণভোমরাকে তিলে তিলে ধ্বংস হতে দিচ্ছি। এ অবস্থা চলতে পারে না। এ থেকে উত্তরণ জরুরি। প্রশ্ন হল, কীভাবে তা সম্ভব? প্রথমত, পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে এ নগরীতে সবুজ ফিরিয়ে আনতে হবে। উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে হবে বায়ুদূষণ।

দ্বিতীয়ত, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট যে বিষয়গুলোকে বাসযোগ্য শহরের মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে, সেগুলোয় দৃষ্টি দিতে হবে। যেমন-স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামো। এসব ক্ষেত্রে অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর কাজ হতে হবে পরিবেশবান্ধব। রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পটি উন্নয়নের একটি আদর্শ মডেল।

জলাধার ও পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখেও যে উন্নয়ন করা যায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এ প্রকল্প। অন্যান্য প্রকল্প গ্রহণের সময় এই চিন্তা মাথায় রাখতে হবে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নগরবাসীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করাটাও বাসযোগ্যতার একটি নির্ধারক বটে।

এসব ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্তরা যদি আন্তরিক হন এবং জনসচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেন, তাহলে আমাদের রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলা কঠিন কিছু নয়।