বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ
প্রশ্ন : চিকুনগুনিয়া কেন হয়?
উত্তর : মূলত এডিস প্রজাতির এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস মশা থেকেই চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ ঘটে। এটি টোগা ভাইরাস গোত্রের। মশাবাহিত হওয়ার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলে। ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসও এই মশার মাধ্যমে ছড়ায়, যার লক্ষণ প্রায় একই রকম। ভাইরাসের বাহক এডিস মশা কামড়ালে আশি ভাগ লোকেরই চিকুনগুনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : কারো চিকুনগুনিয়া হয়েছে এটা নির্দিষ্টভাবে বোঝার উপায় কী?
উত্তর : গা কাঁপিয়ে জ্বর আসবে, যা ১০২ ডিগ্রি বা তারও বেশি হতে পারে। হাত বা পায়ের আঙুল, মেরুদণ্ড বা অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথার সঙ্গে তা ফুলেও যেতে পারে। জ্বরে অচেতন হতে পারে কেউ কেউ। তা ছাড়া বমি বমি ভাব বা বমি, শরীর খুবই দুর্বল ও পানিশূন্য হয়, গলা-মুখ শুকিয়ে পানির পিপাসা পায়। হাত-পায়ে লাল লাল র্যাশ হতে পারে। তীব্র ব্যথায় পা ফেলা কঠিন হয়ে যায়। জ্বর সেরে যাওয়ার পরও শরীরে ব্যথা থাকতে পারে। এসব লক্ষণ থাকলে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করে সাপোর্টিভ চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : একদম সহজ করে বললে এর চিকিৎসা কী?
উত্তর : অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতোই এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা আপাতত নেই। এই জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলেই শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। প্রতি বেলা একটি বা দুটি ট্যাবলেট তিনবেলা খেতে দিতে হবে। এ সময় রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। জ্বর বেশি হলে পানি দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিতে (স্পঞ্জ করে) হবে অথবা সাপোজিটরি দিতে হবে। পাশাপাশি ঘনঘন খেতে দিতে হবে প্রচুর পরিমাণ পানি, ডাবের পানি, সরবত, গ্লুকোজ, স্যালাইন, স্যুপ জাতীয় তরল ইত্যাদি। এ সময় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। তিন বা চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রশ্ন : চিকুনগুনিয়া হলে কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বা হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে?
উত্তর : চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। যেহেতু এই রোগের নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা নেই, তাই জ্বরের জন্য সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। দেখা গেছে, জ্বর ভালো হলেই অন্যান্য উপসর্গও ভালো হয়ে যায়। তবে অনেকের অবস্থা একটু বেশি খারাপ হতে পারে। অনেকের শরীরে বেশি পরিমাণ র্যাশ ওঠে, অস্থিসন্ধির ব্যথাও তীব্র থাকে, প্রেশার দ্রুত ওঠানামা করে, প্রস্রাব অনেক কমে যায়, শরীরের কোথাও হঠাৎ রক্তপাত হতে পারে, মস্তিষ্কে সংক্রমণ হতে পারে। এসব লক্ষণ থাকলে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া ভালো। ভর্তি হলেও দু-তিন দিনের মাথায় তারা রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে যেতে পারেন।
প্রশ্ন: বয়স্কদের ক্ষেত্রে কি বিশেষ কোনো সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে?
উত্তর : হ্যাঁ। বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়ার যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। বয়স্কদের মধ্যে যাঁদের ক্রনিক রোগ রয়েছে বিশেষ করে ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, হৃদরোগ, ক্যান্সার, হাঁপানি ইত্যাদি তাঁদের চিকুনগুনিয়া হলে তাঁরাই মূলত হাই রিস্কের মধ্যে থাকেন। বয়োবৃদ্ধ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ও সহ্য করার ক্ষমতা অনেক কম। এই বয়সে এসে চিকুনগুনিয়ার মতো জ্বর হলে গিরায় গিরায় যে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, তার ধকল তাঁরা সইতে পারেন না। যদিও তাঁদের জন্য আলাদা চিকিৎসা নেই, তার পরও পরামর্শ হলো, বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে কয়েক দিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে রাখা উচিত। তাঁরা যেন শুধু শুধু প্যারাসিটামল খেয়ে ঘরে শুয়ে না থাকেন।
প্রশ্ন: জ্বর সেরে গেলেও শরীরে কত দিন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার বাহক বা জীবাণু বিদ্যমান থাকে, যা অন্যদের জন্য বিপজ্জনক?
উত্তর : চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস সাধাণরত এক সপ্তাহ পর্যন্ত শরীরে বিদ্যমান থাকে। এই সময় এডিস মশা রোগীকে কামড় দিলে সেই মশার মাধ্যমে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। অর্থাৎ সংক্রমিত মশা থেকে অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : চিকুনগুনিয়ার লংটার্ম ইফেক্ট কী?
উত্তর : ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের সাধারণত দীর্ঘ সময় শরীর ব্যথা বা অন্য কোনো সমস্যা থাকে না। জ্বর ভালো হয়ে গেলে কয়েক দিন দুর্বলতা বা ক্লান্তি থাকতে পারে। কিন্তু চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের জ্বর সেরে গেলেও ব্যথা থাকতে পারে দীর্ঘ সময়। আক্রান্তদের অনেকেই দীর্ঘদিনের জন্য স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বেশির ভাগ রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করলেও অনেকের কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত জয়েন্টের ব্যথা থাকে। এতে অবশ্য ভয়ের কিছু নেই। আরো কিছুদিন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়।
প্রশ্ন : চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি নেই—কথাটি কতটুকু সত্য?
উত্তর : চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি নেই এটিই সত্য। প্রায় সব ক্ষেত্রে এই রোগ থেকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম মানব ইমিউন সিস্টেম। তবে উপসর্গগুলো দূর হওয়ার জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে, বিশেষ করে জয়েন্টের ব্যথা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, বয়স্ক ও শিশুদের ঝুঁকি সামান্য রয়েছে, যাতে হাজারে একজনের মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রশ্ন : ব্যাকটেরিয়াল জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক লাগে অথচ চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গু হলে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যাসপিরিন, NSAID জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয় না, শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই যে হাজার হাজার লোক চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছেন তাতে কি ব্যাকটেরিয়াল জ্বরের রোগীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে?
উত্তর : এখনকার সব জ্বরই যে চিকুনগুনিয়া তা বলা যাবে না। এই সময় ডেঙ্গু বা অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। তবে ভাইরাল জ্বর আর চিকুনগুনিয়ার জ্বরের মধ্যে কিছু লক্ষণগত পার্থক্য রয়েছে। এসব লক্ষণ দেখে সচেতন হয়ে চিকিৎসা নিলে ভ্রান্তির অবকাশ থাকে না। চিকুনগুনিয়ার কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেই, তার পরও অনেক সময় অন্য রোগের কারণে দিতে হতে পারে। পরিস্থিতি বুঝে সে সিদ্ধান্ত চিকিৎসকরাই নেন।