ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাহাড় ধসে মৃত্যু, এই মৃত্যু সহজেই রোধ করা সম্ভব

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ অতিবর্ষণে কক্সবাজারে পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে ১২ ব্যক্তির প্রাণ গেছে। এর মধ্যে টেকনাফ ও মহেশখালীতে পাহাড় ধসে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ মারা গেছেন ছয়জন।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ায় দশ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে পাঁচ রোহিঙ্গাসহ মোট আটজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত দুদিনে পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০।

পাহাড় ধসে প্রাণহানি নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রায়ই এ ধরনের মৃত্যুর খবর শুনতে হয় আমাদের। পাহাড় ধসের অন্যতম কারণ পাহাড় কাটা, যার ফলে পাহাড়ের গাঠনিক শক্তি ক্ষয়ে যায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, পাহাড় কাটা যেমন বন্ধ হয়নি, তেমনি বন্ধ হয়নি পাহাড় দখল বা এর পাদদেশে বসবাস।

ফলে একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে পাহাড়, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ; অন্যদিকে ঘটছে প্রাণহানি। অথচ ধস রোধ ও দখল উচ্ছেদে নেওয়া হচ্ছে না স্থায়ী বা টেকসই ব্যবস্থা, নেই এর ন্যূনতম পরিকল্পনা। পরিবেশবিদরা বলছেন, টেকসই ব্যবস্থা ছাড়া সাময়িক উদ্যোগে সমস্যার সমাধান হবে না।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের প্রকৃত সংখ্যা প্রশাসন বা অন্য কোনো সংস্থার কাছে নেই। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তালিকা অনুযায়ী, ৩০টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রয়েছে, এর মধ্যে ১৫টি পাহাড় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা ৮৩৫।

পাহাড় থেকে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করতে গেলে একটির পর একটি রিট হয়। এমন অসংখ্য রিটের কারণে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। রিটগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার বলে মনে করি আমরা।

পাহাড় কাটার পেছনে শুধু দখলদাররাই দায়ী নয়, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে নিয়ম না মেনে সরকারিভাবেই পাহাড় কাটা হয়। আবার বাণিজ্যিক কারণে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, ফলে পাহাড় প্রাকৃতিকভাবে ধস প্রতিরোধের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।

অথচ এ অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি বলেছেন, সংশ্লিষ্ট আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ না থাকায় পাহাড় কাটার প্রবণতা বাড়ছে। আমরাও মনে করি, পাহাড় কাটা রোধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অতিবর্ষণ বা পাহাড়ি ঢল ঘটে প্রাকৃতিক নিয়মে। এটা রোধ করা সম্ভব নয়।

কিন্তু পাহাড় ধস ঠেকানো যায় অবশ্যই আর সেভাবে ঠেকানো যায় মৃত্যুঝুঁকিও। তাই প্রথমত, নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, ধসযোগ্য পাহাড়গুলো থেকে সরিয়ে নিতে হবে সেখানে বসবাসকারীদের।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

পাহাড় ধসে মৃত্যু, এই মৃত্যু সহজেই রোধ করা সম্ভব

আপডেট টাইম : ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ অতিবর্ষণে কক্সবাজারে পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে ১২ ব্যক্তির প্রাণ গেছে। এর মধ্যে টেকনাফ ও মহেশখালীতে পাহাড় ধসে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ মারা গেছেন ছয়জন।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ায় দশ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে পাঁচ রোহিঙ্গাসহ মোট আটজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত দুদিনে পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০।

পাহাড় ধসে প্রাণহানি নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রায়ই এ ধরনের মৃত্যুর খবর শুনতে হয় আমাদের। পাহাড় ধসের অন্যতম কারণ পাহাড় কাটা, যার ফলে পাহাড়ের গাঠনিক শক্তি ক্ষয়ে যায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, পাহাড় কাটা যেমন বন্ধ হয়নি, তেমনি বন্ধ হয়নি পাহাড় দখল বা এর পাদদেশে বসবাস।

ফলে একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে পাহাড়, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ; অন্যদিকে ঘটছে প্রাণহানি। অথচ ধস রোধ ও দখল উচ্ছেদে নেওয়া হচ্ছে না স্থায়ী বা টেকসই ব্যবস্থা, নেই এর ন্যূনতম পরিকল্পনা। পরিবেশবিদরা বলছেন, টেকসই ব্যবস্থা ছাড়া সাময়িক উদ্যোগে সমস্যার সমাধান হবে না।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের প্রকৃত সংখ্যা প্রশাসন বা অন্য কোনো সংস্থার কাছে নেই। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তালিকা অনুযায়ী, ৩০টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রয়েছে, এর মধ্যে ১৫টি পাহাড় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা ৮৩৫।

পাহাড় থেকে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করতে গেলে একটির পর একটি রিট হয়। এমন অসংখ্য রিটের কারণে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। রিটগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার বলে মনে করি আমরা।

পাহাড় কাটার পেছনে শুধু দখলদাররাই দায়ী নয়, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে নিয়ম না মেনে সরকারিভাবেই পাহাড় কাটা হয়। আবার বাণিজ্যিক কারণে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, ফলে পাহাড় প্রাকৃতিকভাবে ধস প্রতিরোধের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।

অথচ এ অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি বলেছেন, সংশ্লিষ্ট আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ না থাকায় পাহাড় কাটার প্রবণতা বাড়ছে। আমরাও মনে করি, পাহাড় কাটা রোধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অতিবর্ষণ বা পাহাড়ি ঢল ঘটে প্রাকৃতিক নিয়মে। এটা রোধ করা সম্ভব নয়।

কিন্তু পাহাড় ধস ঠেকানো যায় অবশ্যই আর সেভাবে ঠেকানো যায় মৃত্যুঝুঁকিও। তাই প্রথমত, নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, ধসযোগ্য পাহাড়গুলো থেকে সরিয়ে নিতে হবে সেখানে বসবাসকারীদের।