ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
টাকার পাহাড় গড়েছেন তারা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে শেখ হাসিনা: সেলিমা রহমান ভারতে থাকার বৈধ মেয়াদ শেষ, কী ঘটবে শেখ হাসিনার ভাগ্যে ভারতে ‘এক দেশ এক ভোট’ কি সত্যিই হবে পুলিশের কাজ পুলিশকে দিয়েই করাতে হবে, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না জাতিসংঘ অধিবেশন নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে ড. ইউনূসের বৈশ্বিক-আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক জরুরি: বাইডেন ইলিশের দাম কমছে না কেন বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মধ্যে হাতাহাতি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মধ্যে হাতাহাতি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন

নির্যাতনের কথা গণমাধ্যমকে জানালেন রোহিঙ্গারা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  সেনা অভিযানের নামে রাখাইন প্রদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনের কথা শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিল মায়ানমার সরকার। কিন্তু এবার গুমর ফাঁস করে দিলেন সেই নির্যাতিতরা।

গণ্যমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের কাছে পেয়ে জানালেন, সেনা অভিযানে নামে তাদের স্বামী, মা ও ছেলেকে গুম করার কথা। শোনালেন, চোখের সামনে স্বজনদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের কথা।

গত বছরের অক্টোবর থেকে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রবেশে বাঁধা ছিল। কিন্তু ১৩ জুলাই দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের মায়ুং না-মা গ্রামে বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর সংবাদকর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। তারা তুলে আনেন রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের নানা অজানা গল্প।

এসময় ওই গ্রামের সারবিদা নামের এক নারী রয়টার্স-কে জানান, তার ছেলে খামারে কাজ করছিলেন। এমন সময় তাকে অস্ত্রের মুখে ঘিরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরে তারা তাকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে যান।

একই গ্রামের অন্য নারীরা জানিয়েছেন, তাদের স্বামীরা নির্দোষ থাকার পরও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি।

অন্য গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিয়ার গং তাং ও কিছু গ্রামে অভিযানের নামে বোমা নিক্ষেপের পর সেই গ্রামগুলো জ্বলে আগুনে পুঁড়ে ছাঁই যায়। তারা ভয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

কেয়ার গং তাং গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, তার গ্রাম থেকে ২৩ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১০ জনকে হত্যা করা হয়।

তিনি আরো জানান, অভিযানের সময় ওই গ্রামের প্রায় ৬ হাজার মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ছিল।

অন্য গ্রামের বাসিন্দা লালমুতি (২৩) তার বাবার কবর দেখিয়ে বলেন, অভিযানের সময় তার বাবাকে ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। পরে তার বাবাকে মেরে ফেলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আগুন নিক্ষেপ করে। এরপর তার মাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তিনি এখনো জেলে আটক আছেন। সেসময় এমন অভিযোগের কথা তাদের কোন গণমাধ্যমকে জানাতে দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

তবে বার্মা বর্ডার গার্ড পুলিশের ব্রি. জে. থুরা সান লিউইন গ্রামবাসীর এমন অভিযোগকে ভুল দাবি করেছেন।

গত মার্চে রয়টার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনে বলেছিল, দেশটিতে অভিযান চলাকালীন সময়ে ১৮ বছরের কম ১৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে দেশটিতে ৪২৩ জন বিদ্রোহী গোষ্ঠির একটি তালিকাও প্রকাশ করে তারা।

গত বছরের নভেম্বরে মুসলিম রোহিঙ্গা বসবাসরত মংডু গ্রামে অভিযানের নামে সেনাবাহিনী ছড়িয়ে পড়ে। আর এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছিল বলে জানিয়েছিল জাতিসংঘ।

এরপর ঘটনা তদন্ত করে জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের সদস্যরা জানিয়েছিলেন, সীমান্তে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা গণধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছেন। আর এ ধরনের অপরাধকে তারা মানবতা বিরোধী অপরাধ বলেও জানান।

জাতিসংঘের এমন দাবিকে সেসময় দেশটির সরকার নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি অস্বীকার ও মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সুচির এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করলেন নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম গ্রামবাসীরা।

সাংবাদিকরা ওইসব গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বললে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর সত্যতা খুঁজে পান।

১৩ জুলাই দেশটির তিনটি গ্রামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হলেও সময় বেঁধে দিয়েছিল অং সান সুচির সরকার।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

টাকার পাহাড় গড়েছেন তারা

নির্যাতনের কথা গণমাধ্যমকে জানালেন রোহিঙ্গারা

আপডেট টাইম : ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  সেনা অভিযানের নামে রাখাইন প্রদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনের কথা শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিল মায়ানমার সরকার। কিন্তু এবার গুমর ফাঁস করে দিলেন সেই নির্যাতিতরা।

গণ্যমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের কাছে পেয়ে জানালেন, সেনা অভিযানে নামে তাদের স্বামী, মা ও ছেলেকে গুম করার কথা। শোনালেন, চোখের সামনে স্বজনদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের কথা।

গত বছরের অক্টোবর থেকে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রবেশে বাঁধা ছিল। কিন্তু ১৩ জুলাই দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের মায়ুং না-মা গ্রামে বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর সংবাদকর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। তারা তুলে আনেন রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের নানা অজানা গল্প।

এসময় ওই গ্রামের সারবিদা নামের এক নারী রয়টার্স-কে জানান, তার ছেলে খামারে কাজ করছিলেন। এমন সময় তাকে অস্ত্রের মুখে ঘিরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরে তারা তাকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে যান।

একই গ্রামের অন্য নারীরা জানিয়েছেন, তাদের স্বামীরা নির্দোষ থাকার পরও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি।

অন্য গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিয়ার গং তাং ও কিছু গ্রামে অভিযানের নামে বোমা নিক্ষেপের পর সেই গ্রামগুলো জ্বলে আগুনে পুঁড়ে ছাঁই যায়। তারা ভয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

কেয়ার গং তাং গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, তার গ্রাম থেকে ২৩ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১০ জনকে হত্যা করা হয়।

তিনি আরো জানান, অভিযানের সময় ওই গ্রামের প্রায় ৬ হাজার মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ছিল।

অন্য গ্রামের বাসিন্দা লালমুতি (২৩) তার বাবার কবর দেখিয়ে বলেন, অভিযানের সময় তার বাবাকে ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। পরে তার বাবাকে মেরে ফেলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আগুন নিক্ষেপ করে। এরপর তার মাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তিনি এখনো জেলে আটক আছেন। সেসময় এমন অভিযোগের কথা তাদের কোন গণমাধ্যমকে জানাতে দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

তবে বার্মা বর্ডার গার্ড পুলিশের ব্রি. জে. থুরা সান লিউইন গ্রামবাসীর এমন অভিযোগকে ভুল দাবি করেছেন।

গত মার্চে রয়টার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনে বলেছিল, দেশটিতে অভিযান চলাকালীন সময়ে ১৮ বছরের কম ১৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে দেশটিতে ৪২৩ জন বিদ্রোহী গোষ্ঠির একটি তালিকাও প্রকাশ করে তারা।

গত বছরের নভেম্বরে মুসলিম রোহিঙ্গা বসবাসরত মংডু গ্রামে অভিযানের নামে সেনাবাহিনী ছড়িয়ে পড়ে। আর এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছিল বলে জানিয়েছিল জাতিসংঘ।

এরপর ঘটনা তদন্ত করে জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের সদস্যরা জানিয়েছিলেন, সীমান্তে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা গণধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছেন। আর এ ধরনের অপরাধকে তারা মানবতা বিরোধী অপরাধ বলেও জানান।

জাতিসংঘের এমন দাবিকে সেসময় দেশটির সরকার নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি অস্বীকার ও মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সুচির এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করলেন নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম গ্রামবাসীরা।

সাংবাদিকরা ওইসব গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বললে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর সত্যতা খুঁজে পান।

১৩ জুলাই দেশটির তিনটি গ্রামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হলেও সময় বেঁধে দিয়েছিল অং সান সুচির সরকার।