১৫ আগস্ট ঘিরে ‘পাল্টা অভ্যুত্থানের’ চেষ্টা করা হলে ‘জনতার স্রোতে’ তাঁদের পিষে ফেলা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। এজন্য আগামীকাল সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এই আহ্বান জানান। সমাবেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
‘একতার বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীরা ভারতে বসে পাল্টা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করছে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে! পাল্টা গণ–অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হলে আপনাদের জানাজা পড়ার লোক খুঁজে পাবে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করলে কোটি মানুষের সমাগমে পিষে ফেলব।
‘এই বাংলাদেশ ১৬ বছর পর স্বাধীনতার নতুন মুখ দেখেছে। সেই মুখের দিকে কেউ নজর দেওয়ার চেষ্টা করলে তার জায়গা এই দেশে হবে না’, দৃঢ় কণ্ঠে বলেন তিনি।
সারজিস আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রতিহত করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে সব দল, মত ও ধর্ম-বর্ণের সম্মিলিত আন্দোলন ছিল। সামনে বিন্দুমাত্র বাধা এলে জনতার স্রোতে পিষে দিতে হবে। আমাদের লড়াই জারি রাখতে হবে। ’
জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা না যাওয়া পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘১৬ বছর ধরে যারা অত্যাচার-জুলুম করে আমাদের টুঁটি চেপে ধরেছে, তারা বাংলার মাটিতে কোনো ষড়যন্ত্র করতে চাইলে প্রতিরোধ করতে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ১৫ আগস্টে ফ্যাসিস্টদের দোসররা ক্যু করার জন্য রাস্তায় সংগঠিত হবে বলে আমরা খবর পেয়েছি। তারা রাস্তায় আসার কোনো ধরনের চিন্তা করলে ছাত্র-জনতা তাদের পা ভেঙে দেবে। ’
সরকারের পতনের প্রাথমিক বিজয়কে স্থায়ী করতে না পারা পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান হাসানাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘এই দেশে সবার প্রাথমিক পরিচয়, আমরা সবাই বাংলাদেশি। এখানে কেউ সংখ্যালঘু নয়। এই দেশে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না। ’
আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে খুনি হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে। একটি সফল গণবিপ্লবের পর দেশের সংখ্যালঘু ভাইদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র আমরা সফল হতে দেব না। আগামীকাল কেউ ষড়যন্ত্র করতে এলে তাদের প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত আছি। ’
সমাবেশে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় (সাহস) বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এখন ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র করছে। দ্বিতীয় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে শেখ হাসিনার দোসরেরা। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা কেউ সংখ্যালঘু নই, সবাই বাংলাদেশি। ষড়ন্ত্রের অপচেষ্টা হলে আমরা সবাই মিলে তা রুখে দেব। ’
সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছি। মুসলমান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা একসঙ্গে পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে এসেছে। কিন্তু আমরা দেখছি, দেশে একটি সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র আমরা বাস্তবায়ন করতে দেব না। আগামীতে কোনো ষড়যন্ত্র হলে জীবন দিয়ে আমরা তা মোকাবিলা করব। ’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তি ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য থেকে কেউ আমাদের বিচ্যুত করতে পারবে না। দেশে যারা অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে যা করা দরকার, তা করতে আমরা প্রস্তুত থাকব। ’