ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দামেস্কে ঢুকে পড়েছেন বিদ্রোহীরা, পালালেন প্রেসিডেন্ট আসাদ

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আর আসাদ পালিয়ে গেছেন। বিদ্রোহী যোদ্ধারা প্রায় বিনা বাধায় রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়ার পর বিমানে করে শহরটি ছেড়ে যান আসাদ।

অবশ্য তিনি কোথায় গেছেন তা জানা যায়নি। রোববার (৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রোববার একটি বিমানে চড়ে দামেস্ক থেকে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে দুই সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে বিদ্রোহীরা বলেছে, তারা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছে। তবে এই শহরে প্রবেশের পথে সরকারি বাহিনীকে কোথাও দেখা যায়নি।

বিদ্রোহীরা বলেছে, “আমরা সিরিয়ার জনগণের সাথে আমাদের বন্দিদের মুক্ত করার এবং তাদের শিকল মুক্ত করার এবং সেদনায়া কারাগারে অন্যায়ের যুগের সমাপ্তি ঘোষণা করার খবর উদযাপন করছি।”

রয়টার্স বলছে, সেদনায়া হচ্ছে দামেস্কের উপকণ্ঠে অবস্থিত এমন একটি বড় সামরিক কারাগার যেখানে সিরিয়ার সরকার হাজার হাজারকে বন্দিকে আটক করে রেখেছিল।

এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বিদ্রোহীরা জানিয়েছিল, তারা মাত্র এক দিনের লড়াইয়ের পরে সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমস সম্পূর্ণরূপে দখল করে নিয়েছে। এতে করে আসাদের ২৪ বছরের শাসন বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল।

এদিকে দামেস্কের প্রাণকেন্দ্রে গুলির তীব্র শব্দ শোনা গেছে বলে রোববার সেখানকার দুই বাসিন্দা জানিয়েছেন। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে গোলাগুলির উৎস কী তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

অন্যদিকে রাজধানীর দক্ষিণ-পশ্চিমের গ্রামীণ এলাকায় স্থানীয় যুবকরা এবং সাবেক বিদ্রোহীরা ক্ষমতা হারানোর সুযোগ নিয়ে আসাদ পরিবারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছেন।

এর আগে মধ্যাঞ্চলীয় শহর হোমস থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর হাজার হাজার বাসিন্দা রাস্তায় নেমে আসেন এবং স্লোগান দেন, “আসাদ চলে গেছে, হোমস মুক্ত” এবং “সিরিয়া দীর্ঘজীবী হোক এবং বাশার আল-আসাদের পতন হোক”।প্রসঙ্গত, বাশার আল-আসাদ ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার ক্ষমতায় রয়েছেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।

তবে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। এরপর বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন। এতে করে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।

যদিও ২০১৫ সালে বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে রাশিয়া। সে বছর সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় তারা। এরপর বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এবং ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিদ্রোহীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠে। এরই একপর্যায়ে সম্প্রতি বিদ্রোহীরা হামলা শুরু করে এবং এই হামলার মুখে নাটকীয়ভাবে দামেস্ক ছেড়ে পালালেন প্রেসিডেন্ট আসাদ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

দামেস্কে ঢুকে পড়েছেন বিদ্রোহীরা, পালালেন প্রেসিডেন্ট আসাদ

আপডেট টাইম : ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আর আসাদ পালিয়ে গেছেন। বিদ্রোহী যোদ্ধারা প্রায় বিনা বাধায় রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়ার পর বিমানে করে শহরটি ছেড়ে যান আসাদ।

অবশ্য তিনি কোথায় গেছেন তা জানা যায়নি। রোববার (৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রোববার একটি বিমানে চড়ে দামেস্ক থেকে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে দুই সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে বিদ্রোহীরা বলেছে, তারা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছে। তবে এই শহরে প্রবেশের পথে সরকারি বাহিনীকে কোথাও দেখা যায়নি।

বিদ্রোহীরা বলেছে, “আমরা সিরিয়ার জনগণের সাথে আমাদের বন্দিদের মুক্ত করার এবং তাদের শিকল মুক্ত করার এবং সেদনায়া কারাগারে অন্যায়ের যুগের সমাপ্তি ঘোষণা করার খবর উদযাপন করছি।”

রয়টার্স বলছে, সেদনায়া হচ্ছে দামেস্কের উপকণ্ঠে অবস্থিত এমন একটি বড় সামরিক কারাগার যেখানে সিরিয়ার সরকার হাজার হাজারকে বন্দিকে আটক করে রেখেছিল।

এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বিদ্রোহীরা জানিয়েছিল, তারা মাত্র এক দিনের লড়াইয়ের পরে সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমস সম্পূর্ণরূপে দখল করে নিয়েছে। এতে করে আসাদের ২৪ বছরের শাসন বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল।

এদিকে দামেস্কের প্রাণকেন্দ্রে গুলির তীব্র শব্দ শোনা গেছে বলে রোববার সেখানকার দুই বাসিন্দা জানিয়েছেন। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে গোলাগুলির উৎস কী তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

অন্যদিকে রাজধানীর দক্ষিণ-পশ্চিমের গ্রামীণ এলাকায় স্থানীয় যুবকরা এবং সাবেক বিদ্রোহীরা ক্ষমতা হারানোর সুযোগ নিয়ে আসাদ পরিবারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছেন।

এর আগে মধ্যাঞ্চলীয় শহর হোমস থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর হাজার হাজার বাসিন্দা রাস্তায় নেমে আসেন এবং স্লোগান দেন, “আসাদ চলে গেছে, হোমস মুক্ত” এবং “সিরিয়া দীর্ঘজীবী হোক এবং বাশার আল-আসাদের পতন হোক”।প্রসঙ্গত, বাশার আল-আসাদ ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার ক্ষমতায় রয়েছেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।

তবে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। এরপর বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন। এতে করে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।

যদিও ২০১৫ সালে বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে রাশিয়া। সে বছর সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় তারা। এরপর বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এবং ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিদ্রোহীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠে। এরই একপর্যায়ে সম্প্রতি বিদ্রোহীরা হামলা শুরু করে এবং এই হামলার মুখে নাটকীয়ভাবে দামেস্ক ছেড়ে পালালেন প্রেসিডেন্ট আসাদ।