ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। খাদ্যব্যবস্থাপনা এ রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রথম সোপান। রোগীর খাদ্যতালিকা হবে সুষম পুষ্টি গুণসম্পন্ন, যেখানে খাবারে শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ লবণের পরিমাণ নিশ্চিত করতে হয়।
শর্করা : দৈনিক মোট ক্যালরির ৫০-৬০ ভাগ আসতে হবে শর্করা থেকে। শর্করা দুরকম- এর একটি সহজ শর্করা। যেমন- গ্লুকোজ, মধু, চিনি, গুড় ইত্যাদি খাওয়ামাত্র রক্তে গ্লুকোজ বাড়ে। আরেকটি হলো জটিল শর্করা। ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীকে শর্করা জাতীয় খাদ্য নির্বাচনে খাবারটির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (এও) বিবেচনায় নিতে হবে। এও হলো শর্করাযুক্ত খাবার কত দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়, তা পরিমাণ করে। এও পরিমাপের স্কেল হলো শূন্য (০) থেকে ১০০ পর্যন্ত। কম এও যুক্ত খাবার (এও<৫৫) ধীরে ধীরে হজম হয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজ খুব ধীরে শোষিত হয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। তাই কম এও যুক্ত খাবার নির্বাচন করুন। যেমন- ব্রাউন বাইস, লাল আটা, ওট্স, পুরো শস্য দানা, জব, ভুট্টা, ছোলা, মটরশুঁটি, ডাল, মিষ্টিআলু, শিম, গাজর ও ব্রকলি ইত্যাদি। উচ্চ এও যুক্ত খাবার (এও>=৭০), যেমন- চিনি, জিলাপি, সাদা আটা, সাদা ভাত, কর্নফ্লেক্স, চালের মিষ্টি পিঠা, কেক, পেস্টি, পিৎজা ইত্যাদি। এসব খাবার দ্রুত হজম ও রক্তে শোষিত হয়ে রক্তের শর্করা দ্রুত বাড়ায়।
প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাদ্য : আমিষ দুধরনের- প্রাণীজ ও উদ্ভিজ। প্রাণীজ আমিষ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি। উদ্ভিজ আমিষ ডাল, ছোলা, সয়াবিন, বাদাম, শীমের বিচি ইত্যাদি। উদ্ভিজ আমিষের গুনগত মান প্রাণীজ আমিষের চেয়ে কম। উভয় আমিষই এমাইনো অ্যাসিডরূপে রক্তে শোষিত হয়। মাছ, মুরগির মাংস (চামড়া ছাড়া), দুধ, ডিম, ডাল, ছোলা, সয়াবিন ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখুন। গরু ও খাসির মাংস কম খাবেন। আমিষজাতীয় খাদ্য শরীর গঠন, বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করে, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
চর্বি বা স্নেহজাতীয় খাবার : চর্বি বা স্নেহজাতীয় খাবার দুধরনের- সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত চর্বি। যেসব চর্বি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় জমে যায়, সেগুলো সম্পৃক্ত চর্বি খাবার। যেমন- ঘি, মাখন, ডালডা, মার্জারিন মেয়নেজ, পনির ইত্যাদি। এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ এসব খাবার হৃৎপি- ও রক্ত সংবহনতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে। অসম্পৃক্ত চর্বিও দুধরনের- মনো-অসম্পৃক্ত চর্বি (অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, চীনাবাদাম ও চীনা বাদামতেল, তিলের তেল, আমন্ড, কাজু বাদাম ইত্যাদি। পলি-অসম্পৃক্ত চর্বি (সামুদ্রিক মাছ, সানফ্লাওয়ার তেল, সয়াবিন তেল, কর্নঅয়েল, চিয়াসিড, ফ্লাক্সসিড ইত্যাদি)। সম্পৃক্ত চর্বি গ্রহণ কমিয়ে অসম্পৃক্ত চর্বি বেশি খাওয়া ভালো। নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে অসম্পৃক্ত চর্বি গ্রহণে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। প্রাণীজ চর্বির মধ্যে সামুদ্রিক মাছের তেল উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রক্ত জমাট বাঁধা ঠেকাতে সাহায্য করে।
শাকসবজি ও ফলমূল : যেসব সবজিতে শর্করা কম সেগুলো খেতে বাঁধা নেই। সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, মুলা, কাঁচা মরিচ, কাঁচা আম, কাঁচা পেঁপে, শশা, উচ্ছে, খিরা, করলা, পটল, লাউ চালকুমড়া, চিচিংগা ইত্যাদি খেতে বাঁধা নেই। সব ধরনের শাক খাওয়া যেতে পারে।
ফলমূল খাওয়ার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের রোগীকে সচেতন হতে হবে। যেসব ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম ও ফাইবার-সমৃদ্ধ, এ ধরনের ফল উপযুক্ত। যেমন- আপেল, নাসপাতি , পেয়ারা ,আমড়া , জাম্বুরা, আমলকি, জলপাই , জামরুল, বাঙ্গি, চালতা, সবুজ বড়ই, কালোজাম, তেঁতুল, পানি ফল, কচি ডাবের পানি ইত্যাদি কিছু ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিস রোগী খেতে পারবেন। তবে কমলা, কলা, আনারস, তরমুজ, আঙুর, লিচু, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি ফলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি। পরিমাণে কম খেতে হবে। এ ব্যাপারে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
একজন ডায়াবেটিক রোগীকে অবশ্যই নিয়মিত ও পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকা এড়িয়ে চলতে হবে।