আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের নেতারা, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে প্রতিটি ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদে পদোন্নতির দাবি জানান।
তারা বলেন, সব ক্যাডারের জন্য সমানসংখ্যক পদ সোপান তৈরি করে গ্রেডভিত্তিক পদমর্যাদাক্রম নির্ধারণ জরুরি। তাদের দাবি আইন প্রয়োগের জন্য সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার। মাঠ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী দায়িত্ব দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরপ্রধানকে। উপসচিব পদে পদোন্নতির কোটা বাতিল করে সুপিরিয়র সার্ভিস পুল (এসএসপি) মাধ্যমে পদোন্নতির কথা বলেন তারা।
শনিবার খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ আয়োজিত জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রত্যাশিত সিভিল সার্ভিস শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংগঠনের আহ্বায়ক ড. মুহাম্মদ আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সেক্রেটারি, সিনিয়র নেতারাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নেতারা বলেন, দক্ষ, পেশাদার ও গতিশীল সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যথাসময়ে পদোন্নতিসহ সব ক্যাডারের মধ্যে সমতার প্রয়োজন। একই দেশে একটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদ না থাকলেও পদোন্নতি পাবে, অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা পদ থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি পাবে না, এটা কোনো আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থা হতে পারে না। এটা প্রশাসন ক্যাডারের ইচ্ছাকৃত সৃষ্ট জটিলতা ও ঔপনিবেশিক মনোভাব বলে মনে করেন তারা। সেজন্য এ অনিয়ম দূর করতে তারা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, বিদ্যমান প্রশাসনিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে ২৫ ক্যাডারের প্রায় সব শীর্ষ পদে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন হয় না। এতে সংশ্লিষ্ট ক্যাডার কর্মকর্তারা কাজের স্পৃহা হারিয়ে ফেলছেন। ফলে জনগণ তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ২৫ ক্যাডার সরকারকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রের উন্নয়নে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নে ব্যাপক অবদানের পরও এসব ক্যাডারের কর্মকর্তারা বঞ্চিত। এ বঞ্চনা দূর করতে বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান। নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র ও জনকল্যাণে এ কমিশন একটি আধুনিক সেবামূলক সিভিল সার্ভিস গঠনে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পেশ করবে বলে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভায় বক্তারা বলেন, প্রশাসনের সব স্তরে অনিয়ম, কোটাবৈষম্য, অসমতা দূর করে একটি গতিশীল জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়তে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় করে গঠিত হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাই সব ধরনের কোটা বিলোপের মাধ্যমে মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়।
সেমিনারে বক্তৃতা করেন লেখক ও কলামিস্ট ফিরোজ আহমেদ, প্রফেসর নাসরিন বেগম, কৃষিবিদ আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ড. শাহজাহান সাজু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এসসিবিএ সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদেকুর রহমান সানি।