রাজবাড়ীর এক নারী আইনজীবীকে গ্রেপ্তারের পর ধর্ষণচেষ্টা, শ্লীলতাহানি ও ৩০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী নারী আইনজীবী রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতে পুলিশের উপপরিদর্শকসহ (এসআই) পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। গতকাল শুক্রবার মামলাটি রাজবাড়ী সদর থানায় এফআইআর হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে।
রাজবাড়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে ১৩ জানুয়ারি মামলা করলে জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান রাজবাড়ী সদর থানার ওসিকে এফআইআর করার নির্দেশ দেন।
মামলার আসামিরা হলেন আরএমপি বোয়ালিয়া থানার এসআই মো. মাহফুজুর রহমান, রাজশাহী মহানগর চন্দ্রিমা থানার ছোট বনগ্রামের শেখ আব্দুল্লাহ, রাজশাহী শাহমখদুম এলাকার জাহিদ উল আলম, রাজশাহী রাজপাড়া থানার রোমান ইসলাম ও মো. ছালাম।মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল আড়াইটার দিকে রাজবাড়ী জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর সামনে থেকে পুলিশ আইনজীবীকে আটক করে গাড়িতে তোলেন। গাড়িতে একজন নারী কনস্টেবল থাকলেও আইনজীবীকে নিয়ে যাওয়ার সময় রাতে পরিকল্পিতভাবে নারী কনস্টেবলকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। লাইট বন্ধ করে গাড়ির ভেতর ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে এসআই মাহফুজ নারী আইনজীবীর মোবাইলফোন কেড়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
জাহিদ উল আলম ও মো. ছালাম আইনজীবীকে থাপ্পড় মারতে থাকে। চলন্ত গাড়িতে আব্দুল্লাহ ও মাহফুজুর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় এবং পরনের কাপড় আংশিক ছিড়ে ফেলে। ছালাম ও রৌমান অন্যায়ভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পৈশাচিকভাবে আচরণ করে। ধর্ষণের চেষ্টা চালাতে নারী আইনজীবীর সাথে জবরদস্তি করতে থাকলে তার চিৎকারে নারী কনেস্টবল জেগে ওঠলে তারা চুপ হয়ে যায়।
মামলায় আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে নারী আইনজীবী নিয়ে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার কক্ষে আটকে রাখেন। পরদিন ২ এপ্রিল রাজশাহীর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহানগর আদালতে পাঠায়। বাদী নারী হওয়া সত্ত্বেও এসআই মাহফুজুর রহমান তদন্তকারী কর্মকর্তা হওয়ায় রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ১৬ থেকে ১৮ এপ্রিল এসআই মাহফুজুর রহমান রিমান্ডে নারী আইনজীবীকে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করে। রিমান্ড কক্ষে লোকজন উপস্থিত থাকার বিধান না থাকলেও শেখ আব্দুল্লাহ, জাহিদ উল আলম, রোমান ইসলাম ও ছালামকে কক্ষে রাখেন।
আইনজীবীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করে ভিডিওচিত্র ও স্থিরচিত্র ধারণ করে। রিমান্ড চলাকালীন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থানা হেফাজতে ১০০ টাকা মূল্যের তিনটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয় এবং ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দারি করে। না হলে আইনজীবীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এসআই মাহফুজুর রহমান মোবাইল ফোন কেড়ে ব্যক্তিগত তথ্য বিভিন্ন লোকজনের কাছে পাচার করে।
অভিযুক্ত এসআই মাহফুজুর রহমান বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, নারী আইনজীবী, তার স্বামী, শ্বশুরের বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণা মামলা রয়েছে। তারা রেলওয়েতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ২০২৪ সালের মার্চে বোয়ালিয়া থানায় এমন একটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে হিসেবে তিনি তাকে গ্রেপ্তার করেন। ধর্ষণ চেষ্টা বা নির্যাতনের অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট বলে তিনি দাবি করেন।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) শরীফ আল রাজীব বলেন, ১৩ জানুয়ারি নারী আইনজীবী আদালতে মামলা করলে আদালত থানায় এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের আদেশ নামা হাতে পাওয়ার পর শুক্রবার মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করা হয়। এখন এ বিষয়ে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।