ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসলেই কী ঘটেছিল, ব্যাখ্যা দিলেন সমন্বয়ক রিফাত

রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছেন।এ ঘটনায় সমন্বয়ক রিফাত রশিদসহ কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর ও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে।

তবে মঙ্গলবার রাতেই ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সমন্বয়ক রিফাত। সেই সঙ্গে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।

ফেসবুকে রিফাত লিখেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসে আজকে যাত্রাবাড়ী জোনের দু’পক্ষের মারামারির ঘটনায় হামলাটি আমার নেতৃত্বে করা হয়েছে বলে প্রেস কনফারেন্সে অভিযোগ করা হয়েছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পুরো ঘটনা নিচে বর্ণনা করছি।’

‘গতকাল ডেমরা থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর উদ্যোগে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রোগ্রাম শেষে আমরা কেন্দ্রীয় অফিসে ব্যাক করার সময় স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে যাত্রাবাড়ী জোনের দুই গ্রুপের মাঝে হাতাহাতি হয় এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা পরিস্থিতি অবগত করি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাঈম আবেদীন ঢাকা মেডিকেলে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে যায়। সংগঠনের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তদন্ত করার জন্য আমরা হামলায় জড়িত দুটো গ্রুপকে আলাদা আলাদাভাবে অফিসে ডেকে দোষীদের চিহ্নিত করে ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম।

কিন্তু আজকে দুপুর দুইটায় যাত্রাবাড়ী জোনের একদল শিক্ষার্থী গত রাতের হামলার বিচারের দাবীতে রূপায়ণ টাওয়ারে অবস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় অফিসের মূল গেটের শাটার নামিয়ে দেয় এবং অফিসের সামনে স্ট্রাইক শুরু করে। কিছুক্ষণ পর নির্বাহী সদস্য নাঈম আবেদীন অফিসে আসে এবং গেট দিয়ে অফিসের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে ওই ছাত্রছাত্রীদের মাঝে অতি উৎসাহী একটি অংশ তার ওপর হামলা চালায়।

এই ঘটনায় নাঈম আবেদীনের হাতে ফ্রাচকার হয়, সেইসঙ্গে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ওয়াহিদুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলে দীর্ঘসময় বাকবিতণ্ডা হয়। সেই মুহূর্তে যাত্রাবাড়ী জোনের অন্য গ্রুপের লোকজনও সেখানে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। এই সময় কয়েকজনকে বেশ আক্রমণাত্মক অবস্থায় দেখা যায়।

এরপর ঘটনাস্থলে আমি ও নির্বাহী সদস্য আহনাফ সাঈদ খান অফিসে যাই এবং যাত্রাবাড়ী জোনের দুটো গ্রুপকেই পরস্পরের উপর আক্রমণাত্মক অবস্থায় দেখতে পাই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ তদন্ত সাপেক্ষে নিশ্চিত করে যে, আক্রমণাত্মক অবস্থায় যারা ছিলেন তাদের বেশ কয়েকজন ছাত্র অধিকার পরিষদ, নিরাপদ সড়ক চাইসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত। সেই মুহূর্তে আমি স্ট্রাইক করা শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্ন করি,‘আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে এখানে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও প্লাটফর্মের লোকজন এসে আপনাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে সিচুয়েশনকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। যারা অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন ও প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত আছেন তারা নিজ পরিচয় স্বীকার করুন।’

তখন দুজন সামনে এগিয়ে আসেন এবং একজন নিজেকে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অন্যজন নিজেকে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নারী বিষয়ক সম্পাদক বলে দাবী করে।

পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি আমরা। আমরা জানাই যে, আমরা বিবাদমান দুপক্ষের সঙ্গে আলাদা আলাদা কথা বলবো এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবো। সেইসঙ্গে এটাও স্পষ্ট করে বলি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের ব্যতীত অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনে যারা পোস্টেড আছেন সঙ্গে আমরা কোনো প্রকার কথা বলব না।

অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের পরিচয় যারা দিয়েছেন তাদেরকে জানাই আমরা আপনাদের সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে আমি অবগত করছি, তার দলের নেতাকর্মীরা কেনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসের সামনে এসে গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি করছে এর জবাব তাদেরকে দিতে হবে। এই কথা বলে আমি জটলার থেকে সরে গিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ভাইকে আমি কল দেই। উনি অনলাইনে না থাকায় আমি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ভাইকে কল দিয়ে জানাই তার সংগঠনের নেতাকর্মী দাবী করে একদল এখানে এসে গ্যাঞ্জাম লাগানোর চেষ্টা করছে।

আপনাদের দায়িত্বশীল কেউ এসে তাদেরকে চিহ্নিত করুন, আপনাদের নেতাকর্মী হলে আমাদের অফিস থেকে নিয়ে যান। এই কথা বলা শেষ হতে না হতেই যাত্রাবাড়ী জোনের দু’পক্ষের মাঝে মারামারি শুরু হয়। আমি ফোন কেটে ঘটনাস্থলে যেতে যেতে দেখি দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত এবং একজনের অবস্থা গুরুতর। তখন আমি, আহনাফ ভাই, হামজা ভাই সহ বাকিরা আহতদেরকে ভেতরে নিয়ে যাই এবং দ্রুততম সময়ে পরিস্থিতি শান্ত করে তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি।’

রিফাত রশিদ আরও লেখেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার বহু আগে থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। আমি গিয়ে বরং পরিস্থিতি প্রায় শান্ত করে ফেলেছিলাম। মূলত যখন আমি ফোনকলে কথা বলার জন্য সরে যাই সেই সু্যোগেই বিপথগামী কিছু লোকজন পরিস্থিতি পুনরায় উত্তপ্ত করে দেয় ,ফলশ্রুতিতে দু’পক্ষের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে। আমি তখন দু’পক্ষের মারামারি থামানোর ব্যবস্থা করি এবং আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করি। তথাপি কেনো আমি হামলার নেতৃত্ব দিয়েছি বলে প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত লোকজনের মনে হলো এটা বুঝতে পারছি না।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘যাত্রাবাড়ী জোনের এই দুটো গ্রুপের কারও সঙ্গেই আমার পূর্ব ঘনিষ্ঠতা বা শত্রুতা নেই। যেহেতু এই হামলায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও প্লাটফর্মের লোকজন যুক্ত ছিল তাই ঘটনার প্রকৃত সত্যতা কি এবং পেছন থেকে কারা কলকাঠি নেড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ’

আগাগোড়া জেন্টেলম্যান পলিটিক্স এ বিশ্বাসী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পেশিশক্তির রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি না। ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ ব্যতীত কারও গায়েই কখনো হাত তুলিনি, তোলার ইচ্ছেও নেই। আমার আদর্শিক মানদণ্ড চব্বিশ। চব্বিশের অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী কাউকে শত্রুজ্ঞান করা আমার ইনসাফের মানদণ্ডে হারাম। সেইসঙ্গে গণমাধ্যমকে আহ্বান করছি, আপনারা এই ঘটনার তদন্ত করুন। যদি হামলার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা খুঁজে পান তবে তা সামনে তুলে আনুন।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সকল সাংগঠনিক সমস্যার সমাধান টেবিলে কথা বলে মিটমাট সম্ভব। যারা আমাকে হামলাকারী সাব্যস্ত করে অভিযোগ এনেছেন তারা যদি অন্য কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী না হয়ে ভুলের বশবর্তী হয়ে এমন অভিযোগ এনে থাকে, আমি তাদের সঙ্গে অতীত ভুলে গিয়ে সাংগঠনিক উপায়ে সমাধানের টেবিলে বসতেও রাজি আছি। তবে কোনো পক্ষ যদি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাঝে ফাঁটল সৃষ্টি করে ব্যক্তিগত বা দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে তাহলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসলেই কী ঘটেছিল, ব্যাখ্যা দিলেন সমন্বয়ক রিফাত

আপডেট টাইম : ৫ ঘন্টা আগে

রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছেন।এ ঘটনায় সমন্বয়ক রিফাত রশিদসহ কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর ও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে।

তবে মঙ্গলবার রাতেই ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সমন্বয়ক রিফাত। সেই সঙ্গে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।

ফেসবুকে রিফাত লিখেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসে আজকে যাত্রাবাড়ী জোনের দু’পক্ষের মারামারির ঘটনায় হামলাটি আমার নেতৃত্বে করা হয়েছে বলে প্রেস কনফারেন্সে অভিযোগ করা হয়েছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পুরো ঘটনা নিচে বর্ণনা করছি।’

‘গতকাল ডেমরা থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর উদ্যোগে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রোগ্রাম শেষে আমরা কেন্দ্রীয় অফিসে ব্যাক করার সময় স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে যাত্রাবাড়ী জোনের দুই গ্রুপের মাঝে হাতাহাতি হয় এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা পরিস্থিতি অবগত করি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাঈম আবেদীন ঢাকা মেডিকেলে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে যায়। সংগঠনের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তদন্ত করার জন্য আমরা হামলায় জড়িত দুটো গ্রুপকে আলাদা আলাদাভাবে অফিসে ডেকে দোষীদের চিহ্নিত করে ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম।

কিন্তু আজকে দুপুর দুইটায় যাত্রাবাড়ী জোনের একদল শিক্ষার্থী গত রাতের হামলার বিচারের দাবীতে রূপায়ণ টাওয়ারে অবস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় অফিসের মূল গেটের শাটার নামিয়ে দেয় এবং অফিসের সামনে স্ট্রাইক শুরু করে। কিছুক্ষণ পর নির্বাহী সদস্য নাঈম আবেদীন অফিসে আসে এবং গেট দিয়ে অফিসের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে ওই ছাত্রছাত্রীদের মাঝে অতি উৎসাহী একটি অংশ তার ওপর হামলা চালায়।

এই ঘটনায় নাঈম আবেদীনের হাতে ফ্রাচকার হয়, সেইসঙ্গে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ওয়াহিদুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলে দীর্ঘসময় বাকবিতণ্ডা হয়। সেই মুহূর্তে যাত্রাবাড়ী জোনের অন্য গ্রুপের লোকজনও সেখানে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। এই সময় কয়েকজনকে বেশ আক্রমণাত্মক অবস্থায় দেখা যায়।

এরপর ঘটনাস্থলে আমি ও নির্বাহী সদস্য আহনাফ সাঈদ খান অফিসে যাই এবং যাত্রাবাড়ী জোনের দুটো গ্রুপকেই পরস্পরের উপর আক্রমণাত্মক অবস্থায় দেখতে পাই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ তদন্ত সাপেক্ষে নিশ্চিত করে যে, আক্রমণাত্মক অবস্থায় যারা ছিলেন তাদের বেশ কয়েকজন ছাত্র অধিকার পরিষদ, নিরাপদ সড়ক চাইসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত। সেই মুহূর্তে আমি স্ট্রাইক করা শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্ন করি,‘আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে এখানে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও প্লাটফর্মের লোকজন এসে আপনাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে সিচুয়েশনকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। যারা অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন ও প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত আছেন তারা নিজ পরিচয় স্বীকার করুন।’

তখন দুজন সামনে এগিয়ে আসেন এবং একজন নিজেকে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অন্যজন নিজেকে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নারী বিষয়ক সম্পাদক বলে দাবী করে।

পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি আমরা। আমরা জানাই যে, আমরা বিবাদমান দুপক্ষের সঙ্গে আলাদা আলাদা কথা বলবো এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবো। সেইসঙ্গে এটাও স্পষ্ট করে বলি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের ব্যতীত অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনে যারা পোস্টেড আছেন সঙ্গে আমরা কোনো প্রকার কথা বলব না।

অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের পরিচয় যারা দিয়েছেন তাদেরকে জানাই আমরা আপনাদের সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে আমি অবগত করছি, তার দলের নেতাকর্মীরা কেনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসের সামনে এসে গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি করছে এর জবাব তাদেরকে দিতে হবে। এই কথা বলে আমি জটলার থেকে সরে গিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ভাইকে আমি কল দেই। উনি অনলাইনে না থাকায় আমি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ভাইকে কল দিয়ে জানাই তার সংগঠনের নেতাকর্মী দাবী করে একদল এখানে এসে গ্যাঞ্জাম লাগানোর চেষ্টা করছে।

আপনাদের দায়িত্বশীল কেউ এসে তাদেরকে চিহ্নিত করুন, আপনাদের নেতাকর্মী হলে আমাদের অফিস থেকে নিয়ে যান। এই কথা বলা শেষ হতে না হতেই যাত্রাবাড়ী জোনের দু’পক্ষের মাঝে মারামারি শুরু হয়। আমি ফোন কেটে ঘটনাস্থলে যেতে যেতে দেখি দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত এবং একজনের অবস্থা গুরুতর। তখন আমি, আহনাফ ভাই, হামজা ভাই সহ বাকিরা আহতদেরকে ভেতরে নিয়ে যাই এবং দ্রুততম সময়ে পরিস্থিতি শান্ত করে তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি।’

রিফাত রশিদ আরও লেখেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার বহু আগে থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। আমি গিয়ে বরং পরিস্থিতি প্রায় শান্ত করে ফেলেছিলাম। মূলত যখন আমি ফোনকলে কথা বলার জন্য সরে যাই সেই সু্যোগেই বিপথগামী কিছু লোকজন পরিস্থিতি পুনরায় উত্তপ্ত করে দেয় ,ফলশ্রুতিতে দু’পক্ষের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে। আমি তখন দু’পক্ষের মারামারি থামানোর ব্যবস্থা করি এবং আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করি। তথাপি কেনো আমি হামলার নেতৃত্ব দিয়েছি বলে প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত লোকজনের মনে হলো এটা বুঝতে পারছি না।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘যাত্রাবাড়ী জোনের এই দুটো গ্রুপের কারও সঙ্গেই আমার পূর্ব ঘনিষ্ঠতা বা শত্রুতা নেই। যেহেতু এই হামলায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও প্লাটফর্মের লোকজন যুক্ত ছিল তাই ঘটনার প্রকৃত সত্যতা কি এবং পেছন থেকে কারা কলকাঠি নেড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ’

আগাগোড়া জেন্টেলম্যান পলিটিক্স এ বিশ্বাসী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পেশিশক্তির রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি না। ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ ব্যতীত কারও গায়েই কখনো হাত তুলিনি, তোলার ইচ্ছেও নেই। আমার আদর্শিক মানদণ্ড চব্বিশ। চব্বিশের অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী কাউকে শত্রুজ্ঞান করা আমার ইনসাফের মানদণ্ডে হারাম। সেইসঙ্গে গণমাধ্যমকে আহ্বান করছি, আপনারা এই ঘটনার তদন্ত করুন। যদি হামলার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা খুঁজে পান তবে তা সামনে তুলে আনুন।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সকল সাংগঠনিক সমস্যার সমাধান টেবিলে কথা বলে মিটমাট সম্ভব। যারা আমাকে হামলাকারী সাব্যস্ত করে অভিযোগ এনেছেন তারা যদি অন্য কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী না হয়ে ভুলের বশবর্তী হয়ে এমন অভিযোগ এনে থাকে, আমি তাদের সঙ্গে অতীত ভুলে গিয়ে সাংগঠনিক উপায়ে সমাধানের টেবিলে বসতেও রাজি আছি। তবে কোনো পক্ষ যদি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাঝে ফাঁটল সৃষ্টি করে ব্যক্তিগত বা দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে তাহলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’