ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিকা নিয়ে সরকারের গা-ছাড়া ভাব, দুশ্চিন্তায় ওমরাহ যাত্রীরা

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি যারা পবিত্র ওমরাহ ও ভিজিট ভিসায় সৌদি আরবে যাবেন, তাদের বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা (মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা) নিতে হবে। এ টিকা নিতে হবে যাত্রার ১০ দিন আগে। দুই দেশের বিমানবন্দরে টিকার সার্টিফিকেট দেখালেই মিলবে প্রবেশ ও বের হওয়ার ছাড়পত্র। নতুন এ নিয়ম চালু হলেও সরকারের পক্ষ থেকে টিকাকেন্দ্রিক কোনো তোড়জোড় দেখা যায়নি। ফলে অনেকেই ওমরাহ যাওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দিচ্ছেন। যাত্রীদের সঙ্গে ‍দুশ্চিন্তায় রয়েছে হজ-ওমরাহ এজেন্সিগুলোও।

ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, যাত্রার আগে হজযাত্রীদের মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দুটি ফ্রি দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজস্ব বাজেট থেকে এসব টিকা দিয়ে থাকে। এতে হাজিপ্রতি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। অন্যদিকে, ওমরাহ যাত্রীদের যাওয়া-আসার কোনো ক্ষেত্রেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। সৌদি সরকার বা দূতাবাস এ নিয়ে অফিসিয়ালি তাদের কিছু জানায়নি। ফলে আগ বাড়িয়ে এ নিয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।

সৌদি সরকারের চাহিদা অনুযায়ী, ওমরাহ ও ভিজিট করতে আগ্রহীদের কোয়াড্রিভ্যালেন্ট নেইসেরিয়া মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন নিতে হবে। এ ভ্যাকসিনের ধরন হতে হবে পলিস্যাকরাইড বা কনজুগেট। এ টিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরবরাহ করে থাকে। বাংলাদেশে কোনো ওষুধ কোম্পানির কাছে এ টিকা নেই। এখন ওমরাহ যাত্রীদের জন্য এ টিকার সরবরাহ পর্যাপ্ত করতে হলে সরকারি মেডিকেল বা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকে টিকা আমদানির অনুমতি দিতে হবে। সেটিও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ওমরাহ পালন করতে যে দুটি টিকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেগুলো কোথায় মিলবে, কত টাকা লাগবে— সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। টিকা আমদানির অনুমতি বা বিক্রির অনুমতি দেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মোট কথা, যারা ওমরাহ করতে যাবেন তাদেরকে টিকা কিনতে হবে, এটা নিশ্চিত। এখন এ টিকা কোথায় পাওয়া যাবে, কত টাকায় বিক্রি হবে তা ঠিক হবে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর। তবে, সরকারের এমন সিদ্ধান্তহীনতায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন ওমরাহ যাত্রী ও এজেন্সিগুলো।

অন্যদিকে, সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ধর্ম মন্ত্রণালয় কোনো দায় নিতে রাজি নয়। মন্ত্রণালয় বলছে, হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মন্ত্রণালয় সরাসরি যুক্ত বিধায় হাজীদের দুটি টিকা ফ্রি দেওয়া হয়। কিন্তু ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় সরকার বা মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই এ বিষয়ে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

সৌদি সরকারের চাহিদা অনুযায়ী, ওমরাহ ও ভিজিট করতে আগ্রহীদের কোয়াড্রিভ্যালেন্ট নেইসেরিয়া মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন নিতে হবে। এ ভ্যাকসিনের ধরন হতে হবে পলিস্যাকরাইড বা কনজুগেট। এ টিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরবরাহ করে থাকে। বাংলাদেশে কোনো ওষুধ কোম্পানির কাছে এ টিকা নেই। এখন ওমরাহ যাত্রীদের জন্য এ টিকার সরবরাহ পর্যাপ্ত করতে হলে সরকারি মেডিকেল বা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকে টিকা আমদানির অনুমতি দিতে হবে। সেটিও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

১০ দিনের মধ্যে এ প্রক্রিয়ায় যাওয়া এবং সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওমরাহ ও টিকা নিয়ে গা-ছাড়া ভাব সরকারের

গত ২০ জানুয়ারি হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য মেনিনজাইটিসের টিকা বাধ্যতামূলক করে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সৌদি সরকারের নতুন নির্দেশনার আলোকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অথচ সৌদি সরকার তিন মাস আগেই এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। তারপরও এতদিনে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।

সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যারা ওমরাহ ও ভিজিট ভিসায় সৌদি আসবে তাদের টিকাগুলো নিতে হবে। এরপরও ধর্ম মন্ত্রণালয় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

তবে, এক্ষেত্রে ছাড় পাবেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা তথা প্রবাসী শ্রমিকরা। তাদের সৌদি আরবে যেতে টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। এ প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মেনিনজাইটিসের টিকা শুধু তাদের জন্য বাধ্যতামূলক যারা সৌদি আরবে হজ ও ওমরাহ করতে যাবেন। যারা  ভিজিট ভিসায় যাবেন তাদেরও এ টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে, যারা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যাবেন এবং যারা প্রবাসী শ্রমিক তাদের জন্য এ টিকা বাধ্যতামূলক নয়।’

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ওমরাহ নিয়ে সৌদি সরকার ও এজেন্সিগুলো ব্যবসা করছে। এখানে ধর্ম মন্ত্রণালয় কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয়। সৌদি সরকার ও দূতাবাসকে ধর্ম মন্ত্রণালয় বারবার বলেছে যে, যারা ওমরাহ করতে যাবেন তাদের তথ্যগুলো যেন মন্ত্রণালয় পায় সেই ব্যবস্থা করা। শুধু তা-ই নয়, সবশেষে বলা হয়েছে যে, যারা ওমরাহ করতে যাবেন তারা মন্ত্রণালয়ের একটি ফরম পূরণ করে গেলেও সরকারের কাছে তথ্য থাকে। কিন্তু সেটি হয়নি। ফলে প্রতি বছর বা মাসে কতজন ওমরাহ করতে যান তার কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই।

এ অবস্থায় সরকার কীসের ভিত্তিতে এ টিকা বিক্রি বা আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করবে— সেই প্রশ্নও রাখেন তারা।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ বলছে, যারা পবিত্র হজ পালন করতে যান তাদের বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা (মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা) নিতে হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ টিকা হজযাত্রীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করে। দুটি টিকায় সরকারের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। ওমরাহ যাত্রীদের জন্য সেটি বাধ্যতামূলক করা হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক কথায়, এটি সরকারের সর্বোচ্চ মহল বা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

এ প্রসঙ্গে হজ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মঞ্জুরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, ওমরাহ হয় ব্যক্তি টু সৌদি সরকারের মধ্যে। সৌদি সরকার ভিসা দেয়, আর ব্যক্তি টিকিট কেটে চলে যান। এখানে মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এখন টিকার ইস্যু সামনে আসতেই সবাই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছে। আমরা তো টিকা আমদানি বা বিক্রি করি না। এটি করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয়ত, সৌদি সরকার ও দূতাবাস এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। ফলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এখানে কার্যত কিছুই করার নেই।’

দুশ্চিন্তায় ওমরাহ যাত্রীরা

লালবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম। পরিবার নিয়ে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি তার সৌদি আরবে ওমরাহ করতে যাওয়ার কথা। ভিসা ও বিমানের টিকিট কাটাও শেষ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এজেন্সির মাধ্যমে জানতে পারেন যে, যাত্রার ১০ দিন আগে তাকে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিতে হবে। এ টিকার খোঁজ করতে গিয়ে কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি। সবশেষ তিনি বিমানের টিকিট বাতিল করেছেন।

শুধু সাইফুল নয়, যারা এ বছর ওমরাহ করতে যাবেন তাদের সবাই টিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

হজ ও ওমরাহ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান মক্কা-মদিনা হজ ট্যুর এজেন্সির ম্যানেজার মোজাফ্ফর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘টিকা বাধ্যতামূলক, এ খবর জানার পর যারা ১০ ফেব্রুয়ারির পরে ওমরাহ করতে যাবেন, তাদের প্রায় সবাই ফোন দিচ্ছেন। আমরা কোনো জবাব দিতে পারছি না। অনেকেই টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করে জানুয়ারিতে আনতে চাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে বিমানগুলোর ফ্লাইট পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও দ্বিগুণের বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে টিকিট বাতিল করছেন।’

‘ওমরাহ করতেও টিকা নিতে হবে— সৌদি সরকার এমন ঘোষণা তিন মাস আগে দিলেও বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এজেন্সি যোগাযোগ করলে ধর্ম মন্ত্রণালয় দায় এড়িয়ে যায়।’

সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ফলে ওমরাহ যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে— জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এজেন্সির মালিক। তিনি বলেন, ‘নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে অনেকেই ওমরাহ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। টিকা নিতে গিয়ে তারা নানা বিড়ম্বনায় পড়বেন।’

হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের বিশেষ নির্দেশনা

হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য মেনিনজাইটিসের টিকা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা দিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সৌদি সরকারের নতুন নির্দেশনার আলোকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে।

গত ২০ জানুয়ারি বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম দেশের সব এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নির্দেশনার বিষয়ে চিঠি দিয়ে বলেছেন, যারা ওমরাহ বা হজ করতে যাবেন অথবা ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব যাবেন তাদের সবার জন্যই এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। ভ্রমণের কমপক্ষে ১০ দিন আগে মেনিনজাইটিসের টিকা নিতে হবে। ভ্রমণের সময় সেই টিকা নেওয়ার সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।

একই নির্দেশনা সব এয়ারলাইন্সগুলোকে দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন দপ্তর।

সেখানে বলা হয়েছে, এক বছরের নিচের শিশুদের এ টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কেউ যদি গত তিন বছরের মধ্যে টিকা নিয়ে থাকেন তাহলে তাকেও সৌদি প্রবেশে নতুন করে টিকা দিতে হবে না।

ভ্যাকসিন সম্পর্কিত শর্তাবলি

• ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির তারিখ : ভ্রমণের অন্তত ১০ দিন আগে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে।

• পলিস্যাকরাইড টাইপ ভ্যাকসিন : সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে।

• কনজুগেট টাইপ ভ্যাকসিন : সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে।

• যাত্রীদের চেক-ইন কাউন্টারে একটি বৈধ টিকা সনদপত্র (ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট) জমা দিতে হবে।

টিকার আমদানি ও বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক প্রয়োজন

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এস এম আব্দুল্লাহ-আল-মুরাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শুধু হজযাত্রীদের এ টিকা দিয়ে থাকি। এখন ওমরাহ যাত্রীদের টিকা নিয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয়, সৌদি সরকার, দূতাবাস বা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ; কেউ কিছু জানায়নি। ফলে এ টিকার আমদানি ও বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

টিকা নিয়ে সরকারের গা-ছাড়া ভাব, দুশ্চিন্তায় ওমরাহ যাত্রীরা

আপডেট টাইম : ৩৭ মিনিট আগে

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি যারা পবিত্র ওমরাহ ও ভিজিট ভিসায় সৌদি আরবে যাবেন, তাদের বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা (মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা) নিতে হবে। এ টিকা নিতে হবে যাত্রার ১০ দিন আগে। দুই দেশের বিমানবন্দরে টিকার সার্টিফিকেট দেখালেই মিলবে প্রবেশ ও বের হওয়ার ছাড়পত্র। নতুন এ নিয়ম চালু হলেও সরকারের পক্ষ থেকে টিকাকেন্দ্রিক কোনো তোড়জোড় দেখা যায়নি। ফলে অনেকেই ওমরাহ যাওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দিচ্ছেন। যাত্রীদের সঙ্গে ‍দুশ্চিন্তায় রয়েছে হজ-ওমরাহ এজেন্সিগুলোও।

ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, যাত্রার আগে হজযাত্রীদের মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দুটি ফ্রি দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজস্ব বাজেট থেকে এসব টিকা দিয়ে থাকে। এতে হাজিপ্রতি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। অন্যদিকে, ওমরাহ যাত্রীদের যাওয়া-আসার কোনো ক্ষেত্রেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। সৌদি সরকার বা দূতাবাস এ নিয়ে অফিসিয়ালি তাদের কিছু জানায়নি। ফলে আগ বাড়িয়ে এ নিয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।

সৌদি সরকারের চাহিদা অনুযায়ী, ওমরাহ ও ভিজিট করতে আগ্রহীদের কোয়াড্রিভ্যালেন্ট নেইসেরিয়া মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন নিতে হবে। এ ভ্যাকসিনের ধরন হতে হবে পলিস্যাকরাইড বা কনজুগেট। এ টিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরবরাহ করে থাকে। বাংলাদেশে কোনো ওষুধ কোম্পানির কাছে এ টিকা নেই। এখন ওমরাহ যাত্রীদের জন্য এ টিকার সরবরাহ পর্যাপ্ত করতে হলে সরকারি মেডিকেল বা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকে টিকা আমদানির অনুমতি দিতে হবে। সেটিও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ওমরাহ পালন করতে যে দুটি টিকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেগুলো কোথায় মিলবে, কত টাকা লাগবে— সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। টিকা আমদানির অনুমতি বা বিক্রির অনুমতি দেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মোট কথা, যারা ওমরাহ করতে যাবেন তাদেরকে টিকা কিনতে হবে, এটা নিশ্চিত। এখন এ টিকা কোথায় পাওয়া যাবে, কত টাকায় বিক্রি হবে তা ঠিক হবে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর। তবে, সরকারের এমন সিদ্ধান্তহীনতায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন ওমরাহ যাত্রী ও এজেন্সিগুলো।

অন্যদিকে, সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ধর্ম মন্ত্রণালয় কোনো দায় নিতে রাজি নয়। মন্ত্রণালয় বলছে, হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মন্ত্রণালয় সরাসরি যুক্ত বিধায় হাজীদের দুটি টিকা ফ্রি দেওয়া হয়। কিন্তু ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় সরকার বা মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই এ বিষয়ে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

সৌদি সরকারের চাহিদা অনুযায়ী, ওমরাহ ও ভিজিট করতে আগ্রহীদের কোয়াড্রিভ্যালেন্ট নেইসেরিয়া মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন নিতে হবে। এ ভ্যাকসিনের ধরন হতে হবে পলিস্যাকরাইড বা কনজুগেট। এ টিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরবরাহ করে থাকে। বাংলাদেশে কোনো ওষুধ কোম্পানির কাছে এ টিকা নেই। এখন ওমরাহ যাত্রীদের জন্য এ টিকার সরবরাহ পর্যাপ্ত করতে হলে সরকারি মেডিকেল বা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকে টিকা আমদানির অনুমতি দিতে হবে। সেটিও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

১০ দিনের মধ্যে এ প্রক্রিয়ায় যাওয়া এবং সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওমরাহ ও টিকা নিয়ে গা-ছাড়া ভাব সরকারের

গত ২০ জানুয়ারি হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য মেনিনজাইটিসের টিকা বাধ্যতামূলক করে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সৌদি সরকারের নতুন নির্দেশনার আলোকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অথচ সৌদি সরকার তিন মাস আগেই এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। তারপরও এতদিনে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।

সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যারা ওমরাহ ও ভিজিট ভিসায় সৌদি আসবে তাদের টিকাগুলো নিতে হবে। এরপরও ধর্ম মন্ত্রণালয় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

তবে, এক্ষেত্রে ছাড় পাবেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা তথা প্রবাসী শ্রমিকরা। তাদের সৌদি আরবে যেতে টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। এ প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মেনিনজাইটিসের টিকা শুধু তাদের জন্য বাধ্যতামূলক যারা সৌদি আরবে হজ ও ওমরাহ করতে যাবেন। যারা  ভিজিট ভিসায় যাবেন তাদেরও এ টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে, যারা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যাবেন এবং যারা প্রবাসী শ্রমিক তাদের জন্য এ টিকা বাধ্যতামূলক নয়।’

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ওমরাহ নিয়ে সৌদি সরকার ও এজেন্সিগুলো ব্যবসা করছে। এখানে ধর্ম মন্ত্রণালয় কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয়। সৌদি সরকার ও দূতাবাসকে ধর্ম মন্ত্রণালয় বারবার বলেছে যে, যারা ওমরাহ করতে যাবেন তাদের তথ্যগুলো যেন মন্ত্রণালয় পায় সেই ব্যবস্থা করা। শুধু তা-ই নয়, সবশেষে বলা হয়েছে যে, যারা ওমরাহ করতে যাবেন তারা মন্ত্রণালয়ের একটি ফরম পূরণ করে গেলেও সরকারের কাছে তথ্য থাকে। কিন্তু সেটি হয়নি। ফলে প্রতি বছর বা মাসে কতজন ওমরাহ করতে যান তার কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই।

এ অবস্থায় সরকার কীসের ভিত্তিতে এ টিকা বিক্রি বা আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করবে— সেই প্রশ্নও রাখেন তারা।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ বলছে, যারা পবিত্র হজ পালন করতে যান তাদের বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা (মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা) নিতে হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ টিকা হজযাত্রীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করে। দুটি টিকায় সরকারের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। ওমরাহ যাত্রীদের জন্য সেটি বাধ্যতামূলক করা হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক কথায়, এটি সরকারের সর্বোচ্চ মহল বা আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

এ প্রসঙ্গে হজ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মঞ্জুরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, ওমরাহ হয় ব্যক্তি টু সৌদি সরকারের মধ্যে। সৌদি সরকার ভিসা দেয়, আর ব্যক্তি টিকিট কেটে চলে যান। এখানে মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এখন টিকার ইস্যু সামনে আসতেই সবাই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছে। আমরা তো টিকা আমদানি বা বিক্রি করি না। এটি করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয়ত, সৌদি সরকার ও দূতাবাস এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। ফলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এখানে কার্যত কিছুই করার নেই।’

দুশ্চিন্তায় ওমরাহ যাত্রীরা

লালবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম। পরিবার নিয়ে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি তার সৌদি আরবে ওমরাহ করতে যাওয়ার কথা। ভিসা ও বিমানের টিকিট কাটাও শেষ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এজেন্সির মাধ্যমে জানতে পারেন যে, যাত্রার ১০ দিন আগে তাকে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিতে হবে। এ টিকার খোঁজ করতে গিয়ে কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি। সবশেষ তিনি বিমানের টিকিট বাতিল করেছেন।

শুধু সাইফুল নয়, যারা এ বছর ওমরাহ করতে যাবেন তাদের সবাই টিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

হজ ও ওমরাহ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান মক্কা-মদিনা হজ ট্যুর এজেন্সির ম্যানেজার মোজাফ্ফর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘টিকা বাধ্যতামূলক, এ খবর জানার পর যারা ১০ ফেব্রুয়ারির পরে ওমরাহ করতে যাবেন, তাদের প্রায় সবাই ফোন দিচ্ছেন। আমরা কোনো জবাব দিতে পারছি না। অনেকেই টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করে জানুয়ারিতে আনতে চাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে বিমানগুলোর ফ্লাইট পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও দ্বিগুণের বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে টিকিট বাতিল করছেন।’

‘ওমরাহ করতেও টিকা নিতে হবে— সৌদি সরকার এমন ঘোষণা তিন মাস আগে দিলেও বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এজেন্সি যোগাযোগ করলে ধর্ম মন্ত্রণালয় দায় এড়িয়ে যায়।’

সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ফলে ওমরাহ যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে— জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এজেন্সির মালিক। তিনি বলেন, ‘নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে অনেকেই ওমরাহ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। টিকা নিতে গিয়ে তারা নানা বিড়ম্বনায় পড়বেন।’

হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের বিশেষ নির্দেশনা

হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য মেনিনজাইটিসের টিকা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা দিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সৌদি সরকারের নতুন নির্দেশনার আলোকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে।

গত ২০ জানুয়ারি বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম দেশের সব এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নির্দেশনার বিষয়ে চিঠি দিয়ে বলেছেন, যারা ওমরাহ বা হজ করতে যাবেন অথবা ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব যাবেন তাদের সবার জন্যই এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। ভ্রমণের কমপক্ষে ১০ দিন আগে মেনিনজাইটিসের টিকা নিতে হবে। ভ্রমণের সময় সেই টিকা নেওয়ার সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।

একই নির্দেশনা সব এয়ারলাইন্সগুলোকে দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন দপ্তর।

সেখানে বলা হয়েছে, এক বছরের নিচের শিশুদের এ টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কেউ যদি গত তিন বছরের মধ্যে টিকা নিয়ে থাকেন তাহলে তাকেও সৌদি প্রবেশে নতুন করে টিকা দিতে হবে না।

ভ্যাকসিন সম্পর্কিত শর্তাবলি

• ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির তারিখ : ভ্রমণের অন্তত ১০ দিন আগে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে।

• পলিস্যাকরাইড টাইপ ভ্যাকসিন : সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে।

• কনজুগেট টাইপ ভ্যাকসিন : সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে।

• যাত্রীদের চেক-ইন কাউন্টারে একটি বৈধ টিকা সনদপত্র (ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট) জমা দিতে হবে।

টিকার আমদানি ও বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক প্রয়োজন

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এস এম আব্দুল্লাহ-আল-মুরাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শুধু হজযাত্রীদের এ টিকা দিয়ে থাকি। এখন ওমরাহ যাত্রীদের টিকা নিয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয়, সৌদি সরকার, দূতাবাস বা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ; কেউ কিছু জানায়নি। ফলে এ টিকার আমদানি ও বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করতে হবে।