দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্ণপাড়া জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম সাভার-এর দাওরায়ে হাদীসের এক দশক পূর্তি উপলক্ষে এক ইসলামি মহা-সম্মেলন অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত কর্ণপাড়া জামিয়া সংলগ্ন বিশাল মাঠে আয়োজিত এই সম্মেলনে দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামি ব্যক্তিত্ব এবং ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতার প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ ছিল।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, কর্ণপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি আলহাজ্ব রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, “আজকের এই মহতি আয়োজনের মাধ্যমে কর্ণপাড়াবাসী অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। আমাদের এই জামিয়া আল্লাহর অশেষ দয়া ও রহমত। আজ আমরা জামিয়ার দাওরায়ে হাদীসের এক দশক পূর্তির মহেন্দী ক্ষণে দাঁড়িয়েছি। যা আমাদের জন্য অনেক বড় নেয়ামত। মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানীর যোগ্য নেতৃত্বে এই জামিয়া থেকে অসংখ্য আলেম ও মুফতী বেরিয়ে এসে ইসলামের খেদমতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। জামিয়ার বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষকবৃন্দ, আমন্ত্রিত দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও অথিতিবৃন্দকে আন্তরিক মুবারকবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আল্লাহ যেনো আমাদের জামিয়াকে সমৃদ্ধ করেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত কবুল করেন।” এ সময় তিনি কর্ণপাড়া জামিয়ার উন্নয়ন কার্যক্রমে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন এবং এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামের খেদমত যেনো আরও বিস্তৃত হয়, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কর্ণপাড়া জামিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের দ্বীনের দূর্গ। এখান থেকে আল্লাহর অশেষ করুণায় যোগ্য আলেম ও মুফতী তৈরি হচ্ছে। যারা দেশে-বিদেশে ইসলামের দাওয়াত এবং সেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। আজকের এই ইসলামি মহাসম্মেলন নতুন প্রজন্মকে দ্বীনের পথে উদ্বুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
তিনি সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসন এবং নিরীহ বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। সীমান্তে বারবার ভারত আগ্রাসন চালিয়ে আমাদের দেশকে অবমাননা করছে, যা কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। সরকারের উচিত এসব বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একই সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে নিত্যপণ্যের মূল্য হ্রাস এবং সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবেও মনোযোগী হওয়া উচিত। আজ গরিব অসহায় মানুষের জীবন-যাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। আল্লাহর বিধান মেনে উলামায়ে কেরামের পরামর্শে দেশ পরিচালনা করলে দেশে শান্তি, শৃংখলা, সমূহ সমৃদ্ধি এবং বরকত বৃদ্ধি পাবে।’
কওমি মাদ্রাসার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসাগুলো দ্বীন রক্ষার দূর্গ হিসেবে কাজ করছে। যতদিন এদেশে কওমি মাদ্রাসা থাকবে, ততদিন ইসলামবিরোধী কোনো শক্তি এ দেশে টিকে থাকতে পারবে না। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, আলেমদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন এবং তাদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন। আলেমদের প্রতি জুলুমের কারণে অতীতেও অনেক সরকার ভয়াবহ পরিনাম ভোগ করেছে।’
সম্মেলনের সভাপতির বক্তব্যে জামিয়ার মুহতামীম ও শাইখুল হাদীস মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী বলেন, ‘দাওরায়ে হাদীসের দশক পূর্তির এই স্মরণীয় মুহূর্তে আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত। এই জামিয়ার মাধ্যমে আল্লাহ অসংখ্য আলেম তৈরি করেছেন। ইনশা-আল্লাহ, ধারাবাহিকভাবে ভবিষ্যতেও করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের দায়িত্ব হলো, দ্বীনের পথে অটুট থেকে ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করা।’
কাদিয়ানীদের সালানা জলসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কাদিয়ানীদের জলসা এই মুসলিমপ্রধান দেশে কখনোই বরদাশত করা হবে না। মুসলিম পরিচয়ে তাদের ধোঁকা দেওয়ার অপচেষ্টা এখনই বন্ধ করতে হবে। তাদের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আলেমদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল, তা এখনো আমাদের তৌহিদি জনতা বহন করছে। সরকারের উচিত অবিলম্বে এসব মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার করা এবং কাদিয়ানীদের সকল অপতৎপরতা বন্ধ করা। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, যদি এসব বিষয়ে গড়িমসি করা হয়, তাহলে দেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হবে।’
সম্মেলনে বক্তাগণ কর্ণপাড়া জামিয়ার এক দশক পূর্তির সফলতা ও দ্বীনি খেদমতের প্রশংসা করেন এবং দেশের ইসলামি শিক্ষার প্রসারে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে দ্বীনি শিক্ষার প্রসার, সকলকে দেশ-জাতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং আল্লাহর পথে নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে খেদমত করার আহ্বান জানানো হয়।