ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একসঙ্গে চার সন্তানের মা হলেন প্রবাসীর স্ত্রী

খুশির বন্যা বইছে এক প্রবাসীর ঘরে। একসঙ্গে চারটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন প্রবাসীর স্ত্রী সুমী আক্তার। এদের মধ্যে দুটি ছেলে আর দুটি কন্যাশিশু। একসঙ্গে নতুন চার অতিথি পেয়ে খুশিতে যেমন আত্মহারা গোটা পরিবার, অন্যদিকে চিকিৎসা ব্যয় নিয়েও শেষ নেই ভাবনার।

মঙ্গলবার রাতে চারটি সন্তানের জন্ম দেন টাঙ্গাইলের বাসাইল থানার কাঞ্চনপুর গ্রামের সুমী আক্তার। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ডাক্তার ও নার্সদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রয়েছে চার নবজাতক।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. রীনা নাসরিনের তত্ত্বাবধানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হয় চার নবজাতক। চারটি নবজাতকই সুস্থ আছেন; তবে তাদের মধ্যে দুজনের ওজন অপেক্ষাকৃত কম। প্রত্যেককেই রাখা হয়েছে নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের নার্স ইনচার্জ সোনিয়া খাতুন জানান, সর্বোচ্চমানের চিকিৎসা চলছে। সবাই বেশ যত্নবান।

নবজাতকদের চিকিৎসা তত্ত্বাবধানে থাকা এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইসমাঈল হোসেন জানান, সব বেবি মোটামুটি স্টেইল বলা যায়, তবে অপরিপক্বতাজনিত বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো অতিক্রম করতে পারলে সুস্থ অবস্থায় আমরা মায়ের কাছে স্থানান্তর করব।

চিকিৎসক জানান, ৩১ সপ্তাহে ভূমিষ্ঠ হওয়া বেবিদের ওজন ১১শ গ্রাম থেকে ১২শ গ্রামের মধ্যে। এদের মধ্যে দুজনের বেশি অক্সিজেন লাগছে।

একটি সুস্থ-সবল নবজাতকের বয়স হতে হবে ৩৭ সপ্তাহ। আর ওজন হতে হবে ২ হাজার ৫শ গ্রাম। ওরা হয়েছে ৩১ সপ্তাহে। তাই নতুন করে ওজন কম ও অপরিপক্বতাজনিত কোনো সমস্যা না হলেও আমরা আশা করছি ওদের দ্রুত ছাড়পত্র দিতে পারব।

নবজাতকদের মা সুমী আক্তার সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, হাসপাতালের নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রের খরচ বহনের মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। ওষুধ আর বিল পরিশোধের দুশ্চিন্তা সব আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে রোমানিয়া থেকে নবজাতকদের বাবা আব্বাস খান মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান, মাত্র সাত মাস আগে স্ত্রীকে রেখে আমি প্রবাসে চলে এসেছি। একসঙ্গে চার নবজাতকের জন্ম নেওয়ার খবরে আমি এতো খুশি হয়েছি যে, মনে হচ্ছে এখনই বাংলাদেশে ছুটে যাই; কিন্তু ইচ্ছে হলেও আমার সেই উপায় নেই। আমি একজন প্রবাসী।

তিনি বলেন, সংসারের অভাব ঘোচাতে আমি রোমানিয়া এসেছি। অভিবাসন ব্যয় ওঠাতেই আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তার ওপর আইসিইউতে চারটি নবজাতকের চিকিৎসা বিল কোথা থেকে পরিশোধ করব, সেই টেনশনে আছি।

দেশবাসীর সাহায্য প্রার্থনা করে তিনি বলেন, আমি সামান্য আয়ের একজন প্রবাসী। সরকার যদি সদয় হয়ে আমার নবজাতকদের চিকিৎসায় উদ্যোগ নিত তাহলে আমি খুশি হতাম। এ ব্যাপারে দেশ ও প্রবাসে থাকা সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

রোমানিয়া প্রবাসী আব্বাস খান ও সুমী আক্তার দম্পতির ঘরে জান্নাতুল ইসলাম মৌ নামের সাত বছরের একটি কন্যাসন্তান আছে। এবার একসঙ্গে চার নবজাতকের বাবা হতে পেরে যেমন গর্বিত তেমনি চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রবাসী আব্বাস খান। নবজাতক চারটিকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরতে চায় তাদের পরিবার। তাদের নিয়ে সাজাতে চায় নতুন দিনের স্বপ্ন। এজন্য দেশবাসীর দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছে অসহায় পরিবারটি।

এর আগে গত ৩ নভেম্বর চার কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ফারজানা আক্তার নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী। এই সংবাদটি সেই সময় যুগান্তর অনলাইনে ও ৪ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায়  প্রকাশিত হয়। ফারজানা আক্তার নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার মাদুশাল গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী মজনু মিয়ার স্ত্রী।

ফারজানাও আগে এক পুত্র সন্তানের জননী ছিলেন। পরে ফারজানা আবার গর্ভবতী হলে নরসিংদীতে ডাক্তার দেখানো হয়। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রামে তিন সন্তান রয়েছে বলে জানান ডাক্তার। পরে পরিবারের সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করান। এরপর ৩ নভেম্বর একে একে ফারজানার চার কন্যা সন্তান সিজারের মাধ্যমে জন্ম হয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

একসঙ্গে চার সন্তানের মা হলেন প্রবাসীর স্ত্রী

আপডেট টাইম : ৫ ঘন্টা আগে

খুশির বন্যা বইছে এক প্রবাসীর ঘরে। একসঙ্গে চারটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন প্রবাসীর স্ত্রী সুমী আক্তার। এদের মধ্যে দুটি ছেলে আর দুটি কন্যাশিশু। একসঙ্গে নতুন চার অতিথি পেয়ে খুশিতে যেমন আত্মহারা গোটা পরিবার, অন্যদিকে চিকিৎসা ব্যয় নিয়েও শেষ নেই ভাবনার।

মঙ্গলবার রাতে চারটি সন্তানের জন্ম দেন টাঙ্গাইলের বাসাইল থানার কাঞ্চনপুর গ্রামের সুমী আক্তার। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ডাক্তার ও নার্সদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রয়েছে চার নবজাতক।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. রীনা নাসরিনের তত্ত্বাবধানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হয় চার নবজাতক। চারটি নবজাতকই সুস্থ আছেন; তবে তাদের মধ্যে দুজনের ওজন অপেক্ষাকৃত কম। প্রত্যেককেই রাখা হয়েছে নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের নার্স ইনচার্জ সোনিয়া খাতুন জানান, সর্বোচ্চমানের চিকিৎসা চলছে। সবাই বেশ যত্নবান।

নবজাতকদের চিকিৎসা তত্ত্বাবধানে থাকা এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইসমাঈল হোসেন জানান, সব বেবি মোটামুটি স্টেইল বলা যায়, তবে অপরিপক্বতাজনিত বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো অতিক্রম করতে পারলে সুস্থ অবস্থায় আমরা মায়ের কাছে স্থানান্তর করব।

চিকিৎসক জানান, ৩১ সপ্তাহে ভূমিষ্ঠ হওয়া বেবিদের ওজন ১১শ গ্রাম থেকে ১২শ গ্রামের মধ্যে। এদের মধ্যে দুজনের বেশি অক্সিজেন লাগছে।

একটি সুস্থ-সবল নবজাতকের বয়স হতে হবে ৩৭ সপ্তাহ। আর ওজন হতে হবে ২ হাজার ৫শ গ্রাম। ওরা হয়েছে ৩১ সপ্তাহে। তাই নতুন করে ওজন কম ও অপরিপক্বতাজনিত কোনো সমস্যা না হলেও আমরা আশা করছি ওদের দ্রুত ছাড়পত্র দিতে পারব।

নবজাতকদের মা সুমী আক্তার সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, হাসপাতালের নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রের খরচ বহনের মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। ওষুধ আর বিল পরিশোধের দুশ্চিন্তা সব আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে রোমানিয়া থেকে নবজাতকদের বাবা আব্বাস খান মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান, মাত্র সাত মাস আগে স্ত্রীকে রেখে আমি প্রবাসে চলে এসেছি। একসঙ্গে চার নবজাতকের জন্ম নেওয়ার খবরে আমি এতো খুশি হয়েছি যে, মনে হচ্ছে এখনই বাংলাদেশে ছুটে যাই; কিন্তু ইচ্ছে হলেও আমার সেই উপায় নেই। আমি একজন প্রবাসী।

তিনি বলেন, সংসারের অভাব ঘোচাতে আমি রোমানিয়া এসেছি। অভিবাসন ব্যয় ওঠাতেই আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তার ওপর আইসিইউতে চারটি নবজাতকের চিকিৎসা বিল কোথা থেকে পরিশোধ করব, সেই টেনশনে আছি।

দেশবাসীর সাহায্য প্রার্থনা করে তিনি বলেন, আমি সামান্য আয়ের একজন প্রবাসী। সরকার যদি সদয় হয়ে আমার নবজাতকদের চিকিৎসায় উদ্যোগ নিত তাহলে আমি খুশি হতাম। এ ব্যাপারে দেশ ও প্রবাসে থাকা সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

রোমানিয়া প্রবাসী আব্বাস খান ও সুমী আক্তার দম্পতির ঘরে জান্নাতুল ইসলাম মৌ নামের সাত বছরের একটি কন্যাসন্তান আছে। এবার একসঙ্গে চার নবজাতকের বাবা হতে পেরে যেমন গর্বিত তেমনি চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রবাসী আব্বাস খান। নবজাতক চারটিকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরতে চায় তাদের পরিবার। তাদের নিয়ে সাজাতে চায় নতুন দিনের স্বপ্ন। এজন্য দেশবাসীর দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছে অসহায় পরিবারটি।

এর আগে গত ৩ নভেম্বর চার কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ফারজানা আক্তার নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী। এই সংবাদটি সেই সময় যুগান্তর অনলাইনে ও ৪ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায়  প্রকাশিত হয়। ফারজানা আক্তার নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার মাদুশাল গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী মজনু মিয়ার স্ত্রী।

ফারজানাও আগে এক পুত্র সন্তানের জননী ছিলেন। পরে ফারজানা আবার গর্ভবতী হলে নরসিংদীতে ডাক্তার দেখানো হয়। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রামে তিন সন্তান রয়েছে বলে জানান ডাক্তার। পরে পরিবারের সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করান। এরপর ৩ নভেম্বর একে একে ফারজানার চার কন্যা সন্তান সিজারের মাধ্যমে জন্ম হয়।