ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজ: ধাক্কাধাক্কি করে পার

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেট। প্রতিদিনই ফার্মগেট হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন। পথচারীদের দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদে চলাচলের জন্য ফার্মগেটের মোড়ে রয়েছে ফুটওভার ব্রিজ।কিন্তু হকারদের জন্য ফুটওভার ব্রিজ পার হতে একে অন্যকে ধাক্কাধাক্কি করে পার হতে হয়।

ব্রিজটি সব শ্রেণির মানুষ ব্যবহার করলেও বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরা এটি বেশি ব্যবহার করেন। ফার্মগেট এলাকায় একাধিক স্কুল ও কলেজ। রয়েছে কোচিং সেন্টারও। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ফুটওভার ব্রিজটির একপাশ পুরো দখলে নিয়েছেন হকাররা।

হকার বসার কারণে এক পর্যায়ে হাঁটাচলার রাস্তাও সরু হয়ে যায়। পথচারীরা ধাক্কাধাক্কি করে ব্রিজ পার হয়। ভিড়ের মধ্যে পকেটমার নির্বিঘ্নে তাদের কাজ চালাতে পারে। ব্রিজটি ব্যবসার অন্যতম স্থানে পরিণত হয়েছে। ফার্মগেট ব্রিজে এমন কোনো পণ্য নেই যা বিক্রি হচ্ছে না। এছাড়া ব্রিজটির ইন্দিরা রোডের প্রবেশমুখে রয়েছে অনেক বিকলাঙ্গ ভিক্ষুক।

ফুটওভার ব্রিজটিতে বিক্রয় হচ্ছে বাচ্চাদের খেলনা, মেয়েদের চুড়ি-ক্লিপ, কানের দুল, লিপস্টিক। ছেলেদের মানিব্যাগ, গেঞ্জি, জুতা, পানির বোতল ইত্যাদি। এ কারণে নিরাপদে রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার করতে হিমশিম খাচ্ছেন পথচারীরা। হকারদের দখলের কারণে ধাক্কাধাক্কি করে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। হকারদের ঠেলে বাধ্য হয়েই চলছেন পথচারীরা।

ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজে গিয়ে দেখা গেল, হকাররা তাদের পশরা নিয়ে দখল করে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছেন। ফলে, হাঁটাচলার রাস্তা ছোট হয়ে গেছে।

মেডিকেল ভর্তি শিক্ষার্থী ফারিয়া ইসলাম চৈতি বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, একদিকে হকার দখল করে আছে, অপরদিকে মানুষের চাপ। মেয়েদের অনেক কষ্ট করে এ পথ দিয়ে চলতে হয়। হকাররা না থাকলেই ভালো হতো। মেডিকো কোচিং সেন্টারে প্রায়দিনই আমার আসতে হয়।

মিরপুর থেকে ফার্মগেটের উদ্ভাস শাখায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের জন্য সপ্তাহে চারদিন আসেন সৌরভ। বাঙালী কণ্ঠকে সৌরভ জানান, হকাররা ব্রিজের ওপর না বসলে সহজভাবে চলাচল করা যেতো। এখন একটু ধাক্কাধাক্কি করে আসতে হয়।

তেজগাঁও কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর ওলিউর রহমান বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ফার্মগেট এলাকায় একাধিক স্কুল-কলেজ রয়েছে। সকাল থেকেই ফুটওভার ব্রিজটি দখলে নেন হকাররা। এ জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর দিয়ে চলাচল করতে কষ্ট হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের অবহেলার কারণে এমনটি হচ্ছে। দেখছেন না সিটি করপোরেশন ব্রিজটি পরিষ্কারও করে না। চারদিকে ময়লা জমে আছে। বৃষ্টি হলে ব্রিজের ওপর পানি জমে।

চৌরঙ্গী ও ফার্মভিউ মার্কেটের কেয়া অপটিকস (চশমার দোকান) বিক্রয়কর্মী মোস্তাফা বলেন, বৃষ্টির দিন ব্রিজের ওপর কাদা জমে যায়। এ কারণে অনেক পিছলে পড়ে যান।

ব্রিজের ওপরের পানির বোতল বিক্রি করছেন জসিম। বাঙালী কণ্ঠকে জসিম বলেন, পেটের জন্য এখানে ব্যবসা করি। মাঝে মাঝে পুলিশ এসে আমাদের উঠিয়ে দেয়।

পথচারীদের যাতায়াতের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সরকার তো আমাদের জন্য কিছু করছে না। আমরা তাহলে কী করে খাবো!

সাগর নামের এক হকার বলেন, ভাই, আমরা কই যামু। ব্যবসা না করলে খামু ক্যামনে। এহানে বসলে কাউকে টাকা দেই না। এমনকি পুলিশকেও না। একারণে পুলিশ কয়েক দিন পরপর আমাদের উচ্ছেদ করে। তারা চলে গেলে আমরা আবার যার যার জায়গায় এসে বসি পড়ি।

ব্রিজের ওপরে আরেক হকার সানোয়ার বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, আমাদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন, আমরা হকারি ছেড়ে দেবো। এখানে আর বসবো না। এখান দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের অনেকে গালিগালাজ করেন। আমরা কিছু বলতে পারি না।

ফুটওভার ব্রিজটি দখলের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ফুটওভার ব্রিজে হকার বসার বিষয়টি আমি দেখবো। ফুটওভার ব্রিজে পানি জমার বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজ: ধাক্কাধাক্কি করে পার

আপডেট টাইম : ০২:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেট। প্রতিদিনই ফার্মগেট হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন। পথচারীদের দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদে চলাচলের জন্য ফার্মগেটের মোড়ে রয়েছে ফুটওভার ব্রিজ।কিন্তু হকারদের জন্য ফুটওভার ব্রিজ পার হতে একে অন্যকে ধাক্কাধাক্কি করে পার হতে হয়।

ব্রিজটি সব শ্রেণির মানুষ ব্যবহার করলেও বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরা এটি বেশি ব্যবহার করেন। ফার্মগেট এলাকায় একাধিক স্কুল ও কলেজ। রয়েছে কোচিং সেন্টারও। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ফুটওভার ব্রিজটির একপাশ পুরো দখলে নিয়েছেন হকাররা।

হকার বসার কারণে এক পর্যায়ে হাঁটাচলার রাস্তাও সরু হয়ে যায়। পথচারীরা ধাক্কাধাক্কি করে ব্রিজ পার হয়। ভিড়ের মধ্যে পকেটমার নির্বিঘ্নে তাদের কাজ চালাতে পারে। ব্রিজটি ব্যবসার অন্যতম স্থানে পরিণত হয়েছে। ফার্মগেট ব্রিজে এমন কোনো পণ্য নেই যা বিক্রি হচ্ছে না। এছাড়া ব্রিজটির ইন্দিরা রোডের প্রবেশমুখে রয়েছে অনেক বিকলাঙ্গ ভিক্ষুক।

ফুটওভার ব্রিজটিতে বিক্রয় হচ্ছে বাচ্চাদের খেলনা, মেয়েদের চুড়ি-ক্লিপ, কানের দুল, লিপস্টিক। ছেলেদের মানিব্যাগ, গেঞ্জি, জুতা, পানির বোতল ইত্যাদি। এ কারণে নিরাপদে রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার করতে হিমশিম খাচ্ছেন পথচারীরা। হকারদের দখলের কারণে ধাক্কাধাক্কি করে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। হকারদের ঠেলে বাধ্য হয়েই চলছেন পথচারীরা।

ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজে গিয়ে দেখা গেল, হকাররা তাদের পশরা নিয়ে দখল করে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছেন। ফলে, হাঁটাচলার রাস্তা ছোট হয়ে গেছে।

মেডিকেল ভর্তি শিক্ষার্থী ফারিয়া ইসলাম চৈতি বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, একদিকে হকার দখল করে আছে, অপরদিকে মানুষের চাপ। মেয়েদের অনেক কষ্ট করে এ পথ দিয়ে চলতে হয়। হকাররা না থাকলেই ভালো হতো। মেডিকো কোচিং সেন্টারে প্রায়দিনই আমার আসতে হয়।

মিরপুর থেকে ফার্মগেটের উদ্ভাস শাখায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের জন্য সপ্তাহে চারদিন আসেন সৌরভ। বাঙালী কণ্ঠকে সৌরভ জানান, হকাররা ব্রিজের ওপর না বসলে সহজভাবে চলাচল করা যেতো। এখন একটু ধাক্কাধাক্কি করে আসতে হয়।

তেজগাঁও কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর ওলিউর রহমান বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ফার্মগেট এলাকায় একাধিক স্কুল-কলেজ রয়েছে। সকাল থেকেই ফুটওভার ব্রিজটি দখলে নেন হকাররা। এ জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর দিয়ে চলাচল করতে কষ্ট হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের অবহেলার কারণে এমনটি হচ্ছে। দেখছেন না সিটি করপোরেশন ব্রিজটি পরিষ্কারও করে না। চারদিকে ময়লা জমে আছে। বৃষ্টি হলে ব্রিজের ওপর পানি জমে।

চৌরঙ্গী ও ফার্মভিউ মার্কেটের কেয়া অপটিকস (চশমার দোকান) বিক্রয়কর্মী মোস্তাফা বলেন, বৃষ্টির দিন ব্রিজের ওপর কাদা জমে যায়। এ কারণে অনেক পিছলে পড়ে যান।

ব্রিজের ওপরের পানির বোতল বিক্রি করছেন জসিম। বাঙালী কণ্ঠকে জসিম বলেন, পেটের জন্য এখানে ব্যবসা করি। মাঝে মাঝে পুলিশ এসে আমাদের উঠিয়ে দেয়।

পথচারীদের যাতায়াতের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সরকার তো আমাদের জন্য কিছু করছে না। আমরা তাহলে কী করে খাবো!

সাগর নামের এক হকার বলেন, ভাই, আমরা কই যামু। ব্যবসা না করলে খামু ক্যামনে। এহানে বসলে কাউকে টাকা দেই না। এমনকি পুলিশকেও না। একারণে পুলিশ কয়েক দিন পরপর আমাদের উচ্ছেদ করে। তারা চলে গেলে আমরা আবার যার যার জায়গায় এসে বসি পড়ি।

ব্রিজের ওপরে আরেক হকার সানোয়ার বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, আমাদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন, আমরা হকারি ছেড়ে দেবো। এখানে আর বসবো না। এখান দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের অনেকে গালিগালাজ করেন। আমরা কিছু বলতে পারি না।

ফুটওভার ব্রিজটি দখলের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ফুটওভার ব্রিজে হকার বসার বিষয়টি আমি দেখবো। ফুটওভার ব্রিজে পানি জমার বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে হবে।