ঢাকা , সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোট দিবে জিন পেত্নী-ভূত

জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকারের বক্তব্যকে পুঁজি করেই চলছে সরাইলের নির্বাচনী প্রচারণা। সরকারদলীয় প্রার্থী ও কর্মীরা সারাক্ষণ চাউর করছেন ‘ভোট দিবে জিন, পেত্নী ও ভূতে।’ নৌকা না করলে যে কোনো সময় গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। ২৩শে এপ্রিল সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে ভোট। ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ আবার ফেল করে কিভাবে?’

এ ছাড়া রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রাণনাশের হুমকি। এসব প্রচারণায় অনেকটা গুটিয়ে রয়েছে বিএনপি। কিছুটা চাপে আছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। গত কয়েক দিনে ৩-৪ জন গ্রেপ্তারের পর ৯ ইউনিয়নেই বিরাজ করছে আতঙ্ক।

রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত গ্রামের বাজার চায়ের দোকান রাস্তা ঘাটে নির্বাচনের আলোচনায় থাকতো মাতোয়ারা। আর এখন রাত ৯টার পরই গ্রেপ্তার আতঙ্কে অধিকাংশ এলাকা হয়ে পড়ে জনমানব শূন্য। বিরাজ করে সুনসান নীবতা। সর্বত্র শুধু হা-হুতাশ।

২৩ তারিখের নির্বাচন আদৌ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে কিনা। এতে অনেকটাই টেনশন বেড়ে গেছে সরকারদলীয় প্রার্থী, দলটির স্থানীয় ও উপজেলার নেতাদের। তাই তারা তৃণমূলে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কখনও হাসছেন। কখনো না পাওয়ার সম্ভাবনার ক্ষোভে হচ্ছেন উত্তেজিত।

কিছু আওয়ামী লীগ নেতা দিনে করছেন নৌকা। আবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার চাপে সেখানকার জাতীয় পার্টির নেতাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে পুলিশ।

আবদুল হাকিম বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে আমার নেতা-কর্মীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। চুন্টা ইউনিয়নে সরকারদলীয় প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়া ও বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ হাবিবুর


রহমানের সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। ভোটের মাঠে তাদের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই জাপার প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর মিয়া।

ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে শাহজাহান মিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রাণনাশের হুমকি ও তার সমর্থকদের গ্রেপ্তার মামলা মারধরের ভয় দেখানোর অভিযোগ করেছেন হাবিবুর রহমান। সেখানে সকাল ১০টার মধ্যে ভোট শেষ করার বিষয়টিও চাউর রয়েছে। সেখানে কবির নামের দরিদ্র যুবলীগ নেতাকে প্রথমে অভিযোগ ছাড়া গ্রেপ্তার ও জামিনের পর অন্য উপজেলার দাঙ্গার একটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করায় গোটা চুন্টায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গ্রেপ্তারের ভয়ে এখানে কোনো ধরনের সভা সমাবেশ ও মিছিল করছেন না বিএনপি প্রার্থী মো. জয়নাল উদ্দিন রাজু। সরাইল সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১১ প্রার্থী। এখানে স্বতন্ত্রসহ চতুর্মুখী লড়াইয়ের আভাস দিয়েছেন ভোটাররা। তবে এখানেও চলছে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান। গত শুক্রবার আরিফাইল গ্রামের বিএনপি’র কর্মী শওকত আলী (৫৫)কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভয়ে গুটিয়ে যায় এখানকার বিএনপি।

প্রার্থী আবদুল জব্বার বলেন, আমার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। আমিই এখন গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছি। আর কর্মীরা তো ভয় পাচ্ছেই। শাহবাজপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান উদ্দিন খালেদের মধ্যে মূল লড়াই হবে। কিন্তু পিছিয়ে নেই বিদ্রোহী প্রার্থী রাজীব আহমেদ রাজ্জি ও বিএনপি প্রার্থী আমান মুন্সী।

সম্প্রতি সেখান থেকে মহিউদ্দিন সরকার নামের এক লোককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফলে সেখানে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়। রাজ্জি তার কর্মীদের  গ্রেপ্তারের হুমকির অভিযোগে নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। শাহজাদাপুর ইউনিয়নে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই সরকার দলীয় প্রার্থী শহিদুজ্জামান।

সাবেক চেয়ারম্যান জাপার প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম খাদেম বলেন, সকাল ১০টার মধ্যে সিল মেরে ভোট শেষ করা হবে- এমন প্রচারণা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর আমাকে ও আমার সমর্থকদের উর্শিউড়া পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। নোয়াগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ মুছলেহ উদ্দিন হেলালের অবস্থা তেমন ভাল নেই।

সেখানকার লোকজনের সাফ কথা হেলালকে ইউনিয়নের ৮০ ভাগ লোকই চিনে না। তাকে পাস করানো কঠিন। সেখানে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও তেমন গতি নেই। তেরকান্দা গ্রামের যুবলীগ নেতা মো. হারুন মিয়া বলেন, হেলাল ভাই কাউকে ডাকেন না। উনি নাকি এমনিই পাস করবেন। তবে এ ইউনিয়নে বন্ধ নেই পুলিশের অভিযান। এখানে রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দিয়েছে নৌকা। গত বুধবার গভীর রাতে আঁখিতারা বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে কোনো ইউনিয়নেই স্বস্তিতে নেই অন্য দলের প্রার্থী ও সমর্থকরা।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রূপক কুমার সাহা বলেন, এন্টি ইলেকশন এক্টিভিটিজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। যথাযথ অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে কেবল তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, এখানকার নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। এ লক্ষ্যেই উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। -মানব জমিন

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ভোট দিবে জিন পেত্নী-ভূত

আপডেট টাইম : ১১:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০১৬

জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকারের বক্তব্যকে পুঁজি করেই চলছে সরাইলের নির্বাচনী প্রচারণা। সরকারদলীয় প্রার্থী ও কর্মীরা সারাক্ষণ চাউর করছেন ‘ভোট দিবে জিন, পেত্নী ও ভূতে।’ নৌকা না করলে যে কোনো সময় গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। ২৩শে এপ্রিল সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে ভোট। ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ আবার ফেল করে কিভাবে?’

এ ছাড়া রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রাণনাশের হুমকি। এসব প্রচারণায় অনেকটা গুটিয়ে রয়েছে বিএনপি। কিছুটা চাপে আছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। গত কয়েক দিনে ৩-৪ জন গ্রেপ্তারের পর ৯ ইউনিয়নেই বিরাজ করছে আতঙ্ক।

রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত গ্রামের বাজার চায়ের দোকান রাস্তা ঘাটে নির্বাচনের আলোচনায় থাকতো মাতোয়ারা। আর এখন রাত ৯টার পরই গ্রেপ্তার আতঙ্কে অধিকাংশ এলাকা হয়ে পড়ে জনমানব শূন্য। বিরাজ করে সুনসান নীবতা। সর্বত্র শুধু হা-হুতাশ।

২৩ তারিখের নির্বাচন আদৌ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে কিনা। এতে অনেকটাই টেনশন বেড়ে গেছে সরকারদলীয় প্রার্থী, দলটির স্থানীয় ও উপজেলার নেতাদের। তাই তারা তৃণমূলে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কখনও হাসছেন। কখনো না পাওয়ার সম্ভাবনার ক্ষোভে হচ্ছেন উত্তেজিত।

কিছু আওয়ামী লীগ নেতা দিনে করছেন নৌকা। আবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার চাপে সেখানকার জাতীয় পার্টির নেতাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে পুলিশ।

আবদুল হাকিম বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে আমার নেতা-কর্মীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। চুন্টা ইউনিয়নে সরকারদলীয় প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়া ও বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ হাবিবুর


রহমানের সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। ভোটের মাঠে তাদের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই জাপার প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর মিয়া।

ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে শাহজাহান মিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রাণনাশের হুমকি ও তার সমর্থকদের গ্রেপ্তার মামলা মারধরের ভয় দেখানোর অভিযোগ করেছেন হাবিবুর রহমান। সেখানে সকাল ১০টার মধ্যে ভোট শেষ করার বিষয়টিও চাউর রয়েছে। সেখানে কবির নামের দরিদ্র যুবলীগ নেতাকে প্রথমে অভিযোগ ছাড়া গ্রেপ্তার ও জামিনের পর অন্য উপজেলার দাঙ্গার একটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করায় গোটা চুন্টায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গ্রেপ্তারের ভয়ে এখানে কোনো ধরনের সভা সমাবেশ ও মিছিল করছেন না বিএনপি প্রার্থী মো. জয়নাল উদ্দিন রাজু। সরাইল সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১১ প্রার্থী। এখানে স্বতন্ত্রসহ চতুর্মুখী লড়াইয়ের আভাস দিয়েছেন ভোটাররা। তবে এখানেও চলছে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান। গত শুক্রবার আরিফাইল গ্রামের বিএনপি’র কর্মী শওকত আলী (৫৫)কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভয়ে গুটিয়ে যায় এখানকার বিএনপি।

প্রার্থী আবদুল জব্বার বলেন, আমার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। আমিই এখন গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছি। আর কর্মীরা তো ভয় পাচ্ছেই। শাহবাজপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান উদ্দিন খালেদের মধ্যে মূল লড়াই হবে। কিন্তু পিছিয়ে নেই বিদ্রোহী প্রার্থী রাজীব আহমেদ রাজ্জি ও বিএনপি প্রার্থী আমান মুন্সী।

সম্প্রতি সেখান থেকে মহিউদ্দিন সরকার নামের এক লোককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফলে সেখানে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়। রাজ্জি তার কর্মীদের  গ্রেপ্তারের হুমকির অভিযোগে নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। শাহজাদাপুর ইউনিয়নে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই সরকার দলীয় প্রার্থী শহিদুজ্জামান।

সাবেক চেয়ারম্যান জাপার প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম খাদেম বলেন, সকাল ১০টার মধ্যে সিল মেরে ভোট শেষ করা হবে- এমন প্রচারণা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর আমাকে ও আমার সমর্থকদের উর্শিউড়া পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। নোয়াগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ মুছলেহ উদ্দিন হেলালের অবস্থা তেমন ভাল নেই।

সেখানকার লোকজনের সাফ কথা হেলালকে ইউনিয়নের ৮০ ভাগ লোকই চিনে না। তাকে পাস করানো কঠিন। সেখানে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও তেমন গতি নেই। তেরকান্দা গ্রামের যুবলীগ নেতা মো. হারুন মিয়া বলেন, হেলাল ভাই কাউকে ডাকেন না। উনি নাকি এমনিই পাস করবেন। তবে এ ইউনিয়নে বন্ধ নেই পুলিশের অভিযান। এখানে রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দিয়েছে নৌকা। গত বুধবার গভীর রাতে আঁখিতারা বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে কোনো ইউনিয়নেই স্বস্তিতে নেই অন্য দলের প্রার্থী ও সমর্থকরা।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রূপক কুমার সাহা বলেন, এন্টি ইলেকশন এক্টিভিটিজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। যথাযথ অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে কেবল তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, এখানকার নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। এ লক্ষ্যেই উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। -মানব জমিন