ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন

একের পর এক হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসল। চলতি বছরের আটাশ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নিমার্ণের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। ফলে এ বছরও জেলার চারটি উপজেলার ছোট-বড় ১২৮টি হাওরে ৪০ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমির একমাত্র বোরো ফসল হুমকিতে পড়েছে।

ডিঙ্গাপুতা, কির্তনখোলা, ঝালোখালিসহ বেশ কয়েকটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে শুক্রবার ভোরে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। সুনামগঞ্জের ও বেশ কয়েকটি হাওরে আগাম বন্যায় ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে শত-শত হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

চোখের সামনে বছরের একমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে যেতে দেখে অসহায় কৃষকেরা হয়ে পড়ছেন দিশেহারা। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের কোনো জোরালো পদক্ষেপ না দেখে শুধু চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছেন হাওরাঞ্চলের চাষিরা। পানিতে ডুবে যাওয়া ধান কাটা হচ্ছে নয়ন ভাগায়।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, উপদাখালি-হাইজদা-নাওটানা খাল প্রকল্পের ৯০.০০ কি.মি বাঁধ পুনঃনির্মাণের জন্য এ বছর বরাদ্দ ছিল ১৩.১৫ কোটি টাকা। আর হাওরের ডুবন্ত সড়কের ভাঙা অংশ মেরামতের জন্য বরাদ্দ ছিল ২.৫৩ কোটি টাকা।

সাতমা-ধলাই প্রকল্পসহ ছেচরাখালি বাজারের ৩৫০ মিটার বাঁধের জন্য বরাদ্দ ছিল ২.০৮ কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের কাজ নিয়ে কৃষকদের রয়েছে নানান অভিযোগ।

নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হুগলী, চন্দ্র সোনার তাল, কাটাখালী, রোয়াবিল, চাতলবিল, ঘণিয়াবিল, বড়বিল, ঘোড়ারচক্র হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। ধারাম হাওরের ও প্রায় ৮০ ভাগ ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

কৃষক ও স্থানীয় লোকজন জানায়, সময়মতো ফসল রক্ষা বাঁধগুলো নির্মাণ না হওয়ায় প্রতি বছর একমাত্র বোরো ফসল নষ্ট হচ্ছে। যেটুকুও হয়েছে সেগুলোর মান অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় সামান্য বৃষ্টির পানিতে সেগুলোর অধিকাংশই ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।

কৃষকরা জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা যোগসাজসে প্রকল্পের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়ে নিম্নমানের বাঁধ তৈরি করায় এই সর্বনাশ হয়েছে। চোখের সামনে নয়ন ভাগায় একমাত্র ফসল কেটে নিচ্ছে লোকজন (পুরো ধান যে কাটে সে নিয়ে যাওয়ার রীতিকে এ অঞ্চলে নয়ন ভাগা বলে, এক্ষেত্রে কৃষকের কিছুই থাকে না; শুধুমাত্র চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া)। বাঁধ নির্মাণের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।

তবে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার  জানান, সময়মতো বাঁধগুলো সংস্কার করে বোরো ফসল রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শুক্রবার রাতে বেশি বাতাস থাকায় নেত্রকোনার কয়েকটা বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকেছে বলেও জানান তিনি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন

আপডেট টাইম : ০৫:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০১৬

একের পর এক হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসল। চলতি বছরের আটাশ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নিমার্ণের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। ফলে এ বছরও জেলার চারটি উপজেলার ছোট-বড় ১২৮টি হাওরে ৪০ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমির একমাত্র বোরো ফসল হুমকিতে পড়েছে।

ডিঙ্গাপুতা, কির্তনখোলা, ঝালোখালিসহ বেশ কয়েকটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে শুক্রবার ভোরে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। সুনামগঞ্জের ও বেশ কয়েকটি হাওরে আগাম বন্যায় ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে শত-শত হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

চোখের সামনে বছরের একমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে যেতে দেখে অসহায় কৃষকেরা হয়ে পড়ছেন দিশেহারা। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের কোনো জোরালো পদক্ষেপ না দেখে শুধু চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছেন হাওরাঞ্চলের চাষিরা। পানিতে ডুবে যাওয়া ধান কাটা হচ্ছে নয়ন ভাগায়।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, উপদাখালি-হাইজদা-নাওটানা খাল প্রকল্পের ৯০.০০ কি.মি বাঁধ পুনঃনির্মাণের জন্য এ বছর বরাদ্দ ছিল ১৩.১৫ কোটি টাকা। আর হাওরের ডুবন্ত সড়কের ভাঙা অংশ মেরামতের জন্য বরাদ্দ ছিল ২.৫৩ কোটি টাকা।

সাতমা-ধলাই প্রকল্পসহ ছেচরাখালি বাজারের ৩৫০ মিটার বাঁধের জন্য বরাদ্দ ছিল ২.০৮ কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের কাজ নিয়ে কৃষকদের রয়েছে নানান অভিযোগ।

নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হুগলী, চন্দ্র সোনার তাল, কাটাখালী, রোয়াবিল, চাতলবিল, ঘণিয়াবিল, বড়বিল, ঘোড়ারচক্র হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। ধারাম হাওরের ও প্রায় ৮০ ভাগ ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

কৃষক ও স্থানীয় লোকজন জানায়, সময়মতো ফসল রক্ষা বাঁধগুলো নির্মাণ না হওয়ায় প্রতি বছর একমাত্র বোরো ফসল নষ্ট হচ্ছে। যেটুকুও হয়েছে সেগুলোর মান অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় সামান্য বৃষ্টির পানিতে সেগুলোর অধিকাংশই ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।

কৃষকরা জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা যোগসাজসে প্রকল্পের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়ে নিম্নমানের বাঁধ তৈরি করায় এই সর্বনাশ হয়েছে। চোখের সামনে নয়ন ভাগায় একমাত্র ফসল কেটে নিচ্ছে লোকজন (পুরো ধান যে কাটে সে নিয়ে যাওয়ার রীতিকে এ অঞ্চলে নয়ন ভাগা বলে, এক্ষেত্রে কৃষকের কিছুই থাকে না; শুধুমাত্র চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া)। বাঁধ নির্মাণের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।

তবে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার  জানান, সময়মতো বাঁধগুলো সংস্কার করে বোরো ফসল রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শুক্রবার রাতে বেশি বাতাস থাকায় নেত্রকোনার কয়েকটা বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকেছে বলেও জানান তিনি।