ঢাকা , মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাতা মাথায় ক্লাস ছাদের নিচে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পথ-প্রান্তরসহ খোলা আকাশের নিচে ছাতার ব্যবহার থাকলেও ঘরের মধ্যে ছাতার ব্যবহার চোখে পড়ার কথা নয়। তাও আবার শ্রেণিকক্ষের ভেতরে। এই অবস্থা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ঈশানগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বৃষ্টি হলে ভাঙাচোরা ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় নিরুপায় হয়ে কোমলমতি শিশুরা পাঠদানের সময় শ্রেণিকক্ষেই ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাস করে। একই অবস্থা শিক্ষকদেরও। এই বিদ্যালয়টির মতো অধিক ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে আরও ২৯টি বিদ্যালয়। এছাড়া ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন মধ্যম ও স্বল্প মেরামত এবং সংস্কারের তালিকায় রয়েছে।

সচেতনমহলসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি টাকার যথাযথ ব্যবহার না হওয়ায় ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও কম সময়ের মধ্যে ভবনগুলো অকেজো হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, লোহাগড়া উপজেলার ঈশানগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার ৭২৫ টাকা ব্যয়ে ১৯৯৯ সালের ৩০ মার্চ একতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

তিন কক্ষ বিশিষ্ট এই ভবনটিতেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দুই ভাগে পাঠদান দেয়া হয়। অথচ, তিন বছর ধরে বৃষ্টি হলেই ভবনটির ছাদ দিয়ে পানি পড়ছে। ভবনের সব কক্ষেরই এই অবস্থা।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমিন নাহার জানায়, বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। এজন্য তারা ঠিকমত ক্লাস ও পড়ালেখা করতে পারে না। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তার।

দ্বিতীয় শ্রেণির আরিফুজ্জামান ও মারিয়া আক্তার বলেন, বৃষ্টি হলেই ছাতা মাথায় দিয়ে আমাদের ক্লাস করতে হয়। ছাদ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়ে। একদিন জোরে বৃষ্টি হলে দুই-তিন দিন ধরে ছাদ দিয়ে পানি ঝরে। এ কারণে আমরা ভালো ভাবে পড়ালেখা করতে পারি না। শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বাইরে ক্লাস করছে তারা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক জেসমিন নাহার বলেন, বিদ্যালয়ের ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় বেঞ্চ এবং মেঝেতে পানি জমে থাকে। ব্লাকবোর্ড ভিজে যাওয়ায় লিখতে পারছি না। এতে করে লেখাপড়ার দিক থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা। এমন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় উপস্থিতি কমে যায়।

শিক্ষক জলি পারভীন বলেন, বিদ্যালয়ের এ পরিস্থিতিতে বার্ষিকসহ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল নিয়ে চিন্তিত আমরা।

সহকারী শিক্ষক আব্দুর রউপ মোল্যা বলেন, বিদ্যালয়ের ছাদে বড় ফাটল রয়েছে। যে কারণে বৃষ্টির পানি ভেতরে প্রবেশ করে শ্রেণিকক্ষসহ অফিস রুমের সবকিছু ভিজে যায়। পলিথিন দিয়ে ছাদ ডেকে দেয়ার পরও বৃষ্টির পানি ভেতরে প্রবেশ করে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ছাদ ধসে যাওয়ার আতঙ্কে আছি। অপর শিক্ষক তারিকুল ইসলাম বলেন, একদিকে বিদ্যালয় ভবনটি জরাজীর্ণ; অপরদিকে রয়েছে শ্রেণিকক্ষের সংকট। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের সামনে খোলা আকাশের নিচে শিশু শ্রেণির পাঠদান চলছে। তবে, বৃষ্টি শুরু হলে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়।

প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় তিন বছর ধরে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ছাতা মাথায় শ্রেণিকক্ষে যান। এ বছর বেশি বৃষ্টি হওয়ায় বিড়ম্বনা বেড়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এক হাতে ছাতা, অন্য হাতে বই-খাতা-কলম নিয়ে ক্লাস করছে। এতে করে লেখাপড়ায় ঠিকমত মন দিতে পারছে না। জরাজীর্ণ ভবনের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু, কোনো সুরাহা মেলেনি। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৬ জন এবং শিক্ষক আছেন পাঁচজন।

এদিকে, ঈশানগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো লোহাগড়া উপজেলায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা আরো ২৯টি। এর মধ্যে কোনটি আবার পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে হাজার হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। এ অবস্থায় চিন্তিত অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।

কে মঙ্গলহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র পরশ ভূঁইয়া জানায়, ভাঙা দেওয়াল ও ছাদের নিচে ক্লাস করতে তাদের ভয় হয়। হঠাৎ করে মেঘ বা বাতাস শুরু হলে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যায় তারা। অনেকে বাড়ি চলে যায়।

কে মঙ্গলহাটার প্রধান শিক্ষক তছলিম হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে পাঠদান চলছে। মাঝে-মধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গায়ে পলেস্তাঁরা খসে পড়ে আহতের ঘটনা ঘটছে। ছাদ ও পিলারের রডগুলো মরিচা পড়ে দুর্বল হয়ে গেছে।

তেঁতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ২০১৫ সালের আগস্টে মধুমতির ভাঙনে তাদের বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পর ছোট একটি টিনের ঘরে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলছে। খোলামেলা ঘরটিতে সব শ্রেণির পাঠদান এক সাথে হওয়ায় শব্দ দূষণে ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারছে না তারা। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই জোয়ার এবং বর্ষার পানিতে শ্রেণিকক্ষসহ মাঠ প্লাবিত হয়ে যায়। অব্যাহত নদী ভাঙনে পথঘাট বিলীন হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতেও ছাত্রছাত্রীদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।

তেঁতুলিয়ার প্রধান শিক্ষক শওকত হোসেন জানান, পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনের ঘরের নির্মাণ কাজ প্রায় দুই মাস আগে শেষ হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর না করায় খুপড়ি ঘরের মধ্যেই সব শ্রেণির পাঠদান চলছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।

লোহাগড়া নাগরিক আন্দোলনের নেতা সরদার আব্দুল হাই বলেন, যে পরিমাণ টাকা ব্যয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়, ওই টাকা দিয়ে বাড়িঘর নির্মিত হলে স্বাভাবিকভাবে ৫০ বছরেও কিছু হয় না। অথচ ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনটি ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সরকারি টাকার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

লোহাগড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, লোহাগড়ায় ১৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। এর মধ্যে ৭১টি বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কারের তালিকায় রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে এসব বিদ্যালয়ে সংস্কার কাজ শুরু হবে। এছাড়া ১৯টি বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিলামের (অকশন) ব্যবস্থা করা হয়েছে।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে নতুন ভবন নির্মাণ এবং সংস্কারের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনগুলো বরাদ্দ হবে। এছাড়া মেরামত কাজও দ্রুত শুরু করতে পারব।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ছাতা মাথায় ক্লাস ছাদের নিচে

আপডেট টাইম : ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পথ-প্রান্তরসহ খোলা আকাশের নিচে ছাতার ব্যবহার থাকলেও ঘরের মধ্যে ছাতার ব্যবহার চোখে পড়ার কথা নয়। তাও আবার শ্রেণিকক্ষের ভেতরে। এই অবস্থা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ঈশানগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বৃষ্টি হলে ভাঙাচোরা ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় নিরুপায় হয়ে কোমলমতি শিশুরা পাঠদানের সময় শ্রেণিকক্ষেই ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাস করে। একই অবস্থা শিক্ষকদেরও। এই বিদ্যালয়টির মতো অধিক ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে আরও ২৯টি বিদ্যালয়। এছাড়া ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন মধ্যম ও স্বল্প মেরামত এবং সংস্কারের তালিকায় রয়েছে।

সচেতনমহলসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি টাকার যথাযথ ব্যবহার না হওয়ায় ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও কম সময়ের মধ্যে ভবনগুলো অকেজো হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, লোহাগড়া উপজেলার ঈশানগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার ৭২৫ টাকা ব্যয়ে ১৯৯৯ সালের ৩০ মার্চ একতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

তিন কক্ষ বিশিষ্ট এই ভবনটিতেই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দুই ভাগে পাঠদান দেয়া হয়। অথচ, তিন বছর ধরে বৃষ্টি হলেই ভবনটির ছাদ দিয়ে পানি পড়ছে। ভবনের সব কক্ষেরই এই অবস্থা।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমিন নাহার জানায়, বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। এজন্য তারা ঠিকমত ক্লাস ও পড়ালেখা করতে পারে না। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তার।

দ্বিতীয় শ্রেণির আরিফুজ্জামান ও মারিয়া আক্তার বলেন, বৃষ্টি হলেই ছাতা মাথায় দিয়ে আমাদের ক্লাস করতে হয়। ছাদ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়ে। একদিন জোরে বৃষ্টি হলে দুই-তিন দিন ধরে ছাদ দিয়ে পানি ঝরে। এ কারণে আমরা ভালো ভাবে পড়ালেখা করতে পারি না। শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বাইরে ক্লাস করছে তারা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক জেসমিন নাহার বলেন, বিদ্যালয়ের ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় বেঞ্চ এবং মেঝেতে পানি জমে থাকে। ব্লাকবোর্ড ভিজে যাওয়ায় লিখতে পারছি না। এতে করে লেখাপড়ার দিক থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা। এমন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় উপস্থিতি কমে যায়।

শিক্ষক জলি পারভীন বলেন, বিদ্যালয়ের এ পরিস্থিতিতে বার্ষিকসহ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল নিয়ে চিন্তিত আমরা।

সহকারী শিক্ষক আব্দুর রউপ মোল্যা বলেন, বিদ্যালয়ের ছাদে বড় ফাটল রয়েছে। যে কারণে বৃষ্টির পানি ভেতরে প্রবেশ করে শ্রেণিকক্ষসহ অফিস রুমের সবকিছু ভিজে যায়। পলিথিন দিয়ে ছাদ ডেকে দেয়ার পরও বৃষ্টির পানি ভেতরে প্রবেশ করে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ছাদ ধসে যাওয়ার আতঙ্কে আছি। অপর শিক্ষক তারিকুল ইসলাম বলেন, একদিকে বিদ্যালয় ভবনটি জরাজীর্ণ; অপরদিকে রয়েছে শ্রেণিকক্ষের সংকট। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের সামনে খোলা আকাশের নিচে শিশু শ্রেণির পাঠদান চলছে। তবে, বৃষ্টি শুরু হলে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়।

প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় তিন বছর ধরে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ছাতা মাথায় শ্রেণিকক্ষে যান। এ বছর বেশি বৃষ্টি হওয়ায় বিড়ম্বনা বেড়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এক হাতে ছাতা, অন্য হাতে বই-খাতা-কলম নিয়ে ক্লাস করছে। এতে করে লেখাপড়ায় ঠিকমত মন দিতে পারছে না। জরাজীর্ণ ভবনের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু, কোনো সুরাহা মেলেনি। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৬ জন এবং শিক্ষক আছেন পাঁচজন।

এদিকে, ঈশানগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো লোহাগড়া উপজেলায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা আরো ২৯টি। এর মধ্যে কোনটি আবার পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে হাজার হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। এ অবস্থায় চিন্তিত অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।

কে মঙ্গলহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র পরশ ভূঁইয়া জানায়, ভাঙা দেওয়াল ও ছাদের নিচে ক্লাস করতে তাদের ভয় হয়। হঠাৎ করে মেঘ বা বাতাস শুরু হলে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যায় তারা। অনেকে বাড়ি চলে যায়।

কে মঙ্গলহাটার প্রধান শিক্ষক তছলিম হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে পাঠদান চলছে। মাঝে-মধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গায়ে পলেস্তাঁরা খসে পড়ে আহতের ঘটনা ঘটছে। ছাদ ও পিলারের রডগুলো মরিচা পড়ে দুর্বল হয়ে গেছে।

তেঁতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ২০১৫ সালের আগস্টে মধুমতির ভাঙনে তাদের বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পর ছোট একটি টিনের ঘরে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলছে। খোলামেলা ঘরটিতে সব শ্রেণির পাঠদান এক সাথে হওয়ায় শব্দ দূষণে ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারছে না তারা। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই জোয়ার এবং বর্ষার পানিতে শ্রেণিকক্ষসহ মাঠ প্লাবিত হয়ে যায়। অব্যাহত নদী ভাঙনে পথঘাট বিলীন হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতেও ছাত্রছাত্রীদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।

তেঁতুলিয়ার প্রধান শিক্ষক শওকত হোসেন জানান, পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনের ঘরের নির্মাণ কাজ প্রায় দুই মাস আগে শেষ হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর না করায় খুপড়ি ঘরের মধ্যেই সব শ্রেণির পাঠদান চলছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।

লোহাগড়া নাগরিক আন্দোলনের নেতা সরদার আব্দুল হাই বলেন, যে পরিমাণ টাকা ব্যয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়, ওই টাকা দিয়ে বাড়িঘর নির্মিত হলে স্বাভাবিকভাবে ৫০ বছরেও কিছু হয় না। অথচ ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনটি ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সরকারি টাকার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

লোহাগড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, লোহাগড়ায় ১৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। এর মধ্যে ৭১টি বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কারের তালিকায় রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে এসব বিদ্যালয়ে সংস্কার কাজ শুরু হবে। এছাড়া ১৯টি বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিলামের (অকশন) ব্যবস্থা করা হয়েছে।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে নতুন ভবন নির্মাণ এবং সংস্কারের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনগুলো বরাদ্দ হবে। এছাড়া মেরামত কাজও দ্রুত শুরু করতে পারব।