বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখ মানুষ স্ট্রিট ফুড বা পথখাবার গ্রহণ করছে। স্বল্পমূল্য ও মুখরোচক বলে এ ধরনের খাবার জনপ্রিয় হচ্ছে।
একই সঙ্গে অর্থনীতির বিকাশেও অবদান রাখছে। যেকোনো দেশের পর্যটনের বিকাশে সে দেশের স্ট্রিট ফুড ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। সাশ্রয়ী হওয়ায় বিশ্বজুড়েই পর্যটকরা রকমারি খাবারের স্বাদ নিতে স্ট্রিট ফুড বেছে নেয়। জাপানের টোকিও, মরক্কোর মারাকেশ, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, চীনের পেইচিং, যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি, মিসরের কায়রো, ইন্দোনেশিয়ার বালি, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি থেকে শুরু করে ভারতের মুম্বাই ও কলকাতার স্ট্রিট ফুড বা পথখাবার এসব দেশের তো বটেই, বাইরে থেকে সেখানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদেরও অন্যতম আকর্ষণ। বিকেল থেকেই এসব শহরের রাস্তার ধারে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসে যায়। ব্যয়বহুল রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় না, এমন অনেক খাবার এসব দোকানে পাওয়া যায়। ঢাকায়ও রাস্তার ধারে এখন স্ট্রিট ফুডের পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা যায়। নগরীর অনেক এলাকায় পথখাবারের অস্থায়ী দোকান বসে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এসব দোকান খোলা থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে ঝালমুড়ি, ফুচকা-চটপটির দোকান তো আছেই। বিদেশের স্ট্রিট ফুডের সঙ্গে বাংলাদেশের স্ট্রিট ফুডের পার্থক্য এই যে বিদেশে এসব খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে। কিন্তু বাংলাদেশে এসবের বালাই নেই। সরকারের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক দূষণ ও জীবাণু সংক্রমণ বিষয়ক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার প্রায় ৯০ শতাংশ পথখাবারেই ই-কোলাই, সালমোনেলা ও ইস্ট মোল্ডের মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সারা দেশে বেশ কিছু ঘি-তেলে ভেজাল এবং সবজিতে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক পাওয়া গেছে। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা ১০৫টি সবজির নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫টিতে বিভিন্ন রকমের কীটনাশকের অস্তিত্ব মিলেছে। এর মধ্যে পাঁচ মিনিট করে প্রথমবার ধুয়ে ফেলার পর ২৯টি নমুনা কীটনাশকমুক্ত হয়। দুবার ধুয়ে ফেলার পর ১০টি কীটনাশকমুক্ত হয়। কিন্তু ছয়টিতে কীটনাশক অক্ষত পাওয়া যায়। এই যখন অবস্থা, তখন নিরাপদ খাদ্য নিয়ে তো আতঙ্কিত হতেই হয়।
স্ট্রিট ফুড বা পথখাবার উপেক্ষা করা যাবে না। কিন্তু এসব খাবার তৈরি ও পরিবেশন যাতে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে হয় সেদিকে এখন দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। পথখাবার বিপণন এখন একটি শ্রেণির উপার্জনের মাধ্যম। আবার এই খাবারের কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে—এটাও মেনে নেওয়া যায় না। কাজেই স্ট্রিট ফুড কিভাবে কতটা নিরাপদ করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। এ বিষয়ে বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এমন একটি কর্মসূচি শুরুও হয়েছিল। এর পাশাপাশি ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে।