ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিস টিভি বন্ধের পর কি জঙ্গি তৎপরতা থামবে

গুলশান হামলাকারীদের দু’জন ভারতের বিতর্কিত বক্তা ড. জাকির নায়েকের টুইটার-অনুসারী ছিলেন৷ তাঁর বক্তব্য ধারাবাহিকভাবে পিস টিভিতে প্রচার হয়, যাতে জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার মতো উপাদান আছে বলে মনে করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷
গুলশান হামলার পর শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের অদূরেও হামলা হয়ে গেছে বাংলাদেশে৷ আর এ সব হামলার পর থেকেই ড. নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদকে মদত দেয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ সোমবার এ কারণে বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, চলছে তদন্তও৷
জঙ্গি তৎপরতা রোধে আরো কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃমন্ত্রণালয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু৷ এরমধ্যে রয়েছে জুমার নামাজের ওপর নজরদারি, ঢাকার গুলাশান এলকায় অনুমোদনহীন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া, নিখোঁজ তরুণদের তথ্য সংগ্রহ এবং কোনো ছাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তা রিপোর্ট করা৷
বাংলাদেশে পিস টিভির অনুষ্ঠান বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায়ই দেখা যেত৷ তাছাড়া পিস টিভির বাংলা অনুষ্ঠান মূলত ঢাকা শহরে তৈরি করেই সম্প্রচারের জন্য পাঠানো হতো৷ তারা ডাউন লিংক-এর অনুমোদন নিয়ে অনুষ্ঠান তৈরির কাজও করে আসছিল৷ এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের কিছু ইসলামি চিন্তাবিদ৷ তারা আবার পিস টিভির বক্তাও৷ তাই এবার সম্প্রচার বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে যারা অবৈধভাবে এখানে অনুষ্ঠান বানিয়ে দেশের বাইরে পাঠচ্ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়৷
তবে শুধুমাত্র পিস টিভি-র সম্প্রচার বন্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা কতটুকু বন্ধ করা যাবে, তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া অ্যান্ড ফিল্ম স্ট্যাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভূঁইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জঙ্গি তৎপরতার নানা ফ্রন্ট থাকে৷ মিলিটারি, ট্রেনিং, রিক্রুটমেন্ট, অর্থ, অপারেশন, মিডিয়া প্রভৃতি৷ পিস টিভির কোনো বক্তব্য যদি বাংলাদেশের তরুণদের কাউকে উদ্ধুদ্ধ করে থাকে, তাহলে সরকার ব্যবস্থা নিতেই পারে৷
আমরা জানতে পেরেছি, গুলশান হামলার দুই তরুণ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জাকির নায়েকের অনুসারী ছিল৷ তবে বিষয়টি আরো তদন্ত করে দেখতে হবে৷”
তাঁর কথায়, ‘‘পিস টিভি বন্ধ করলেই বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা প্রতিহত করা যাবে না৷ এটা যে পর্যায়ে গেছে, তাতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন আমাদের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের সক্ষমতা বাড়ানো৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠক্রমের দিকে নজর দেয়া আর বের করা এ পর্যন্ত কত তরুণ জঙ্গিদের দলে ভিড়েছে৷ দু-এক দিনে এ কাজ করা যাবে না৷ এর জন্য জঙ্গিবিরোধী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে৷”
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও জঙ্গি বিষয়ক গবেষক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনো কিছুর প্রচার বা সম্প্রচার বন্ধ করে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ সম্ভব নয়৷ বরং প্রয়োজন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম শুরু করা৷ সেজন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক পরিববেশ৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে হয়ত সাময়িকভাবে জঙ্গি দমন করা যায়৷ কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটা সম্ভব নয়৷”
এদিকে পিস টিভি বন্ধ নিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক চলছে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারকারীরা দৃশ্যত পিস টিভি বন্ধের ব্যাপারে দু’ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছেন৷ তারা পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত প্রকাশ করছেন৷
প্রসঙ্গত, ভারতে প্রথম পিস টিভি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হলেও, এখনো তা কার্যকর হয়নি৷ অথচ বাংলাদেশ তার আগেই এখানে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিল৷
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

পিস টিভি বন্ধের পর কি জঙ্গি তৎপরতা থামবে

আপডেট টাইম : ০৫:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ জুলাই ২০১৬
গুলশান হামলাকারীদের দু’জন ভারতের বিতর্কিত বক্তা ড. জাকির নায়েকের টুইটার-অনুসারী ছিলেন৷ তাঁর বক্তব্য ধারাবাহিকভাবে পিস টিভিতে প্রচার হয়, যাতে জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার মতো উপাদান আছে বলে মনে করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷
গুলশান হামলার পর শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের অদূরেও হামলা হয়ে গেছে বাংলাদেশে৷ আর এ সব হামলার পর থেকেই ড. নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদকে মদত দেয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ সোমবার এ কারণে বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, চলছে তদন্তও৷
জঙ্গি তৎপরতা রোধে আরো কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃমন্ত্রণালয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু৷ এরমধ্যে রয়েছে জুমার নামাজের ওপর নজরদারি, ঢাকার গুলাশান এলকায় অনুমোদনহীন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া, নিখোঁজ তরুণদের তথ্য সংগ্রহ এবং কোনো ছাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তা রিপোর্ট করা৷
বাংলাদেশে পিস টিভির অনুষ্ঠান বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায়ই দেখা যেত৷ তাছাড়া পিস টিভির বাংলা অনুষ্ঠান মূলত ঢাকা শহরে তৈরি করেই সম্প্রচারের জন্য পাঠানো হতো৷ তারা ডাউন লিংক-এর অনুমোদন নিয়ে অনুষ্ঠান তৈরির কাজও করে আসছিল৷ এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের কিছু ইসলামি চিন্তাবিদ৷ তারা আবার পিস টিভির বক্তাও৷ তাই এবার সম্প্রচার বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে যারা অবৈধভাবে এখানে অনুষ্ঠান বানিয়ে দেশের বাইরে পাঠচ্ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়৷
তবে শুধুমাত্র পিস টিভি-র সম্প্রচার বন্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা কতটুকু বন্ধ করা যাবে, তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া অ্যান্ড ফিল্ম স্ট্যাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভূঁইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জঙ্গি তৎপরতার নানা ফ্রন্ট থাকে৷ মিলিটারি, ট্রেনিং, রিক্রুটমেন্ট, অর্থ, অপারেশন, মিডিয়া প্রভৃতি৷ পিস টিভির কোনো বক্তব্য যদি বাংলাদেশের তরুণদের কাউকে উদ্ধুদ্ধ করে থাকে, তাহলে সরকার ব্যবস্থা নিতেই পারে৷
আমরা জানতে পেরেছি, গুলশান হামলার দুই তরুণ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জাকির নায়েকের অনুসারী ছিল৷ তবে বিষয়টি আরো তদন্ত করে দেখতে হবে৷”
তাঁর কথায়, ‘‘পিস টিভি বন্ধ করলেই বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা প্রতিহত করা যাবে না৷ এটা যে পর্যায়ে গেছে, তাতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন আমাদের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের সক্ষমতা বাড়ানো৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠক্রমের দিকে নজর দেয়া আর বের করা এ পর্যন্ত কত তরুণ জঙ্গিদের দলে ভিড়েছে৷ দু-এক দিনে এ কাজ করা যাবে না৷ এর জন্য জঙ্গিবিরোধী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে৷”
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও জঙ্গি বিষয়ক গবেষক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনো কিছুর প্রচার বা সম্প্রচার বন্ধ করে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ সম্ভব নয়৷ বরং প্রয়োজন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম শুরু করা৷ সেজন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক পরিববেশ৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে হয়ত সাময়িকভাবে জঙ্গি দমন করা যায়৷ কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটা সম্ভব নয়৷”
এদিকে পিস টিভি বন্ধ নিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক চলছে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারকারীরা দৃশ্যত পিস টিভি বন্ধের ব্যাপারে দু’ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছেন৷ তারা পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত প্রকাশ করছেন৷
প্রসঙ্গত, ভারতে প্রথম পিস টিভি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হলেও, এখনো তা কার্যকর হয়নি৷ অথচ বাংলাদেশ তার আগেই এখানে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিল৷