ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেরেসা মে সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি

ব্রিটেনের লৌহমানবীখ্যাত মার্গারেট থ্যাচারের পর ব্রিটিশ মুলুকের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গতকাল (বুধবার) দায়িত্ব নিয়েছেন নব্যনির্বাচিত সর্বোচ্চ টরি নেতা ও দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেরেসা মে। তার জীবন পঞ্জিকা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। তেরেসা মে ১৯৫৬ সালের ১ অক্টোবর সাসেক্সের ইস্টবোর্নে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন ধর্মযাজক। পূর্ব অক্সফোর্ডের হুইটলি অঞ্চলের এক চার্চের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পিতার সান্নিধ্যে থাকা অবস্থাতেই অক্সফোর্ডশায়ার থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন তেরেসা মে। এরপর রোমান ক্যাথলিকদের দ্বারা পরিচালিত বেগব্রোকের সেইন্ট জুলিয়ানা কনভার্ট গার্লস স্কুলে অধ্যয়ন করেন তিনি। পরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বছর ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে চাকরি করেন তিনি। পরের দুই বছর তিনি অর্থনৈতিক পরামর্শক এবং আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অ্যাসোসিয়েশন ফর পেমেন্ট ক্লিয়ারিং সার্ভিসেস নামক একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। এরপরই ধীরে ধীরে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন তেরেসা মে। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত লন্ডন বোর অব মার্টনে পালন করেন কাউন্সিলরের দায়িত্ব। সেখানে তিনি শিক্ষা ও আবাসন সংক্রান্ত মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। নর্থ ওয়েস্ট ডারহামে থেকে ১৯৯২ সালে নির্বাচনে তিনি পরাজয়বরণ করেন কিন্তু ১৯৯৪ সালেই লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে মেইডেনল্যান্ডের এমপি নির্বাচিত হন। কনজারভেটিভদের দলে ভেড়ার পর ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি দলটির শিক্ষা, প্রতিবন্ধী ও নারীবিষয়ক ছায়ামুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রকৃতপক্ষে ১৯৯৭ সালেই তিনি ছায়ামন্ত্রিসভার সদস্যপদ লাভ করেন। পরে ২০০২ সালের জুলাই মাসে কনজারভেটিভ পার্টির প্রথম নারী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। ২০১২ সালের ১২ মে তার ওপর ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ক্যামেরনের প্রথম মেয়াদের মন্ত্রিসভায় তেরেসাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি নারী ও সমতাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও নিয়োজিত করা হয়। এই পদায়নের মাধ্যমে ব্রিটেনের ইতিহাসে শীর্ষপদধারী চতুর্থ নারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তার আগে নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মার্গারেট থ্যাচার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্গারেট চেকেট এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শীর্ষ নারী হলেন জ্যাকি স্মিথ। তবে দেশটির ৬০ বছরের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

যে কারণে তিনি ব্রিটেনের জনপ্রশাসন ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব আরোপ করেছেন এবং ঢেলে সাজিয়েছেন দেশটির আইনশৃংখলা বাহিনী, মাদকনীতি, অভিবাসী ব্যবস্থাপনা, পারিবারিক অভিবাসন এবং বিতাড়ন প্রক্রিয়ার নিয়মাবলী। সমকামী বিবাহের স্বীকৃতির পক্ষেও সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম কোনো এমপি হিসেবে ২০১২ সালে প্রকাশ্যে সমকামী বিবাহের প্রতি সমর্থন জানান তিনি। সে সময় তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যদি দু’জন ব্যক্তি পরস্পরের প্রতি দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে চায় এবং পরস্পরের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় তাহলে তাদের বিবাহ করার অধিকার থাকা উচিত এবং এই অধিকার সবার জন্যই প্রযোজ্য।’ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন বিনিয়োগকারী ও ব্যাংকারকে বিয়ে করেছেন। তার স্বামী ফিলিপ মে ১৯৮০ সাল থেকে ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনালে কর্মরত। তাদের কোনো সন্তান-সন্তনি নেই এবং তা নিয়ে হতাশাবোধও আছে তাদের মধ্যে। ২০০৬ সালে সমাজের অনুপ্রেরণাদায়ী নারী হিসেবে পুরস্কার লাভ করেছেন এই নারী। সুবক্তা হিসেবে তেরেসা মের ব্যাপক পরিচিতি। লৈঙ্গিক সমতা বিষয়ে সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও তিনি দীর্ঘদিন থেকে জড়িত।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

তেরেসা মে সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি

আপডেট টাইম : ০৬:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০১৬

ব্রিটেনের লৌহমানবীখ্যাত মার্গারেট থ্যাচারের পর ব্রিটিশ মুলুকের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গতকাল (বুধবার) দায়িত্ব নিয়েছেন নব্যনির্বাচিত সর্বোচ্চ টরি নেতা ও দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেরেসা মে। তার জীবন পঞ্জিকা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। তেরেসা মে ১৯৫৬ সালের ১ অক্টোবর সাসেক্সের ইস্টবোর্নে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন ধর্মযাজক। পূর্ব অক্সফোর্ডের হুইটলি অঞ্চলের এক চার্চের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পিতার সান্নিধ্যে থাকা অবস্থাতেই অক্সফোর্ডশায়ার থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন তেরেসা মে। এরপর রোমান ক্যাথলিকদের দ্বারা পরিচালিত বেগব্রোকের সেইন্ট জুলিয়ানা কনভার্ট গার্লস স্কুলে অধ্যয়ন করেন তিনি। পরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বছর ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে চাকরি করেন তিনি। পরের দুই বছর তিনি অর্থনৈতিক পরামর্শক এবং আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অ্যাসোসিয়েশন ফর পেমেন্ট ক্লিয়ারিং সার্ভিসেস নামক একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। এরপরই ধীরে ধীরে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন তেরেসা মে। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত লন্ডন বোর অব মার্টনে পালন করেন কাউন্সিলরের দায়িত্ব। সেখানে তিনি শিক্ষা ও আবাসন সংক্রান্ত মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। নর্থ ওয়েস্ট ডারহামে থেকে ১৯৯২ সালে নির্বাচনে তিনি পরাজয়বরণ করেন কিন্তু ১৯৯৪ সালেই লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে মেইডেনল্যান্ডের এমপি নির্বাচিত হন। কনজারভেটিভদের দলে ভেড়ার পর ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি দলটির শিক্ষা, প্রতিবন্ধী ও নারীবিষয়ক ছায়ামুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রকৃতপক্ষে ১৯৯৭ সালেই তিনি ছায়ামন্ত্রিসভার সদস্যপদ লাভ করেন। পরে ২০০২ সালের জুলাই মাসে কনজারভেটিভ পার্টির প্রথম নারী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। ২০১২ সালের ১২ মে তার ওপর ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ক্যামেরনের প্রথম মেয়াদের মন্ত্রিসভায় তেরেসাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি নারী ও সমতাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও নিয়োজিত করা হয়। এই পদায়নের মাধ্যমে ব্রিটেনের ইতিহাসে শীর্ষপদধারী চতুর্থ নারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তার আগে নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মার্গারেট থ্যাচার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্গারেট চেকেট এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শীর্ষ নারী হলেন জ্যাকি স্মিথ। তবে দেশটির ৬০ বছরের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

যে কারণে তিনি ব্রিটেনের জনপ্রশাসন ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব আরোপ করেছেন এবং ঢেলে সাজিয়েছেন দেশটির আইনশৃংখলা বাহিনী, মাদকনীতি, অভিবাসী ব্যবস্থাপনা, পারিবারিক অভিবাসন এবং বিতাড়ন প্রক্রিয়ার নিয়মাবলী। সমকামী বিবাহের স্বীকৃতির পক্ষেও সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম কোনো এমপি হিসেবে ২০১২ সালে প্রকাশ্যে সমকামী বিবাহের প্রতি সমর্থন জানান তিনি। সে সময় তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যদি দু’জন ব্যক্তি পরস্পরের প্রতি দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে চায় এবং পরস্পরের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় তাহলে তাদের বিবাহ করার অধিকার থাকা উচিত এবং এই অধিকার সবার জন্যই প্রযোজ্য।’ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন বিনিয়োগকারী ও ব্যাংকারকে বিয়ে করেছেন। তার স্বামী ফিলিপ মে ১৯৮০ সাল থেকে ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনালে কর্মরত। তাদের কোনো সন্তান-সন্তনি নেই এবং তা নিয়ে হতাশাবোধও আছে তাদের মধ্যে। ২০০৬ সালে সমাজের অনুপ্রেরণাদায়ী নারী হিসেবে পুরস্কার লাভ করেছেন এই নারী। সুবক্তা হিসেবে তেরেসা মের ব্যাপক পরিচিতি। লৈঙ্গিক সমতা বিষয়ে সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও তিনি দীর্ঘদিন থেকে জড়িত।