বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
রমজানের বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসা অনুষ্ঠানের ১৫তম পর্বে টেলিফোনে বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেলে জান্নাত পাওয়া যায় কি না, সে সম্পর্কে পাবনা থেকে জানতে চেয়েছেন ইব্রাহিম। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : আমার আব্বু বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার মারা গেলে নাকি জান্নাত পাওয়া যায়?
উত্তর : আমরা দোয়া করব আপনার আব্বা যেন জান্নাত পান। তবে বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেলে জান্নাত পাওয়া যায়, এই মর্মে কোনো হাদিস সাব্যস্ত হয়নি। এটি গায়েবি বা অদৃশ্য একটি বিষয়। সুতরাং হাদিস ছাড়া, দলিল ছাড়া বলার কোনো সুযোগ নেই।
তবে এ রাতে মারা গেলে রাসুল (সা.) একটি ফজিলতের কথা উল্লেখ করেছেন। সেটি হচ্ছে, ‘কবরের যে ফেতনা আছে, সে ফেতনা থেকে তাঁকে রেহাই দেওয়া হবে।’ অর্থাৎ, কবরে যে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে সে প্রশ্ন তাঁর জন্য শিথিল হতে পারে।
এখানে একটি ভালো সংবাদ আছে। এটাকে এর জন্য ওলামায়েকেরাম উল্লেখ করেছেন, ‘উত্তম পরিণতি’ অর্থাৎ মৃত্যুটা ভালো মৃত্যু হয়েছে। এটি খুশি হওয়ার মতো মৃত্যু।
কিন্তু এই মৃত্যুর জন্য শর্ত আছে। যদি ইমানের সাথে, শিরকমুক্ত মৃত্যু হয়, তাহলেই শুধু এই সম্মানটুকু পাওয়া যাবে। কিন্তু যার মৃত্যু ইমানের সাথে হয়নি, অথবা শিরক অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে, তিনি এই ফজিলত পাবেন না।
কোন কাজ করলে নিশ্চতভাবে জান্নাত লাভ করা যায়?
আরবি হাদিস
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « يَقُولُ اللهُ تَعَالَى: مَا لِعَبْدِي المُؤمِن عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أهْل الدُّنْيَا، ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلاَّ الجَنَّةَ ». رواه البخاري
বাংলা হাদিস
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, যখন আমি আমার বান্দার পছন্দনীয় পার্থিব জিনিসকে কেড়ে নিই, অতঃপর সে (তাতে) সওয়াবের আশা রাখে, তখন তার জন্য আমার নিকট জান্নাত ছাড়া অন্য কোন বিনিময় নেই।’
[বুখারি ৬৪২৪, আহমদ ৯১২৭]
কেমন হবে জান্নাত!
আল্লাহ তাআলা সত্য জীবন ব্যবস্থাসহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যারা কুরআন অনুযায়ী রাসুলের দেখানো পথে এবং মতে চলবে তাদের জন্য রয়েছে পরকালীন জীবনে জান্নাতের সুখ এবং শান্তি। এ শান্তিময় জীবন-যাপন করতে আল্লাহ তাআলা কিয়ামাতের দিনে জান্নাতিদের খোশখবরী দেবেন তার বর্ণনা কুরআনে এসেছে এভাবে-
‘হে আমার বান্দাগণ আজকের দিনে তোমাদের কোনো ভয় নেই, তোমরা চিন্তিতও হবে না। যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং তোমরা আজ্ঞাবহ ছিলে (আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি)। তোমরা এবং তোমাদের বিবিগণ সানন্দে জান্নাতের প্রবেশ কর। (সুরা যুখরুফ : আয়াত ৬৮-৭০)
আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য যে জান্নাতের খোশখবরী দিলেন আসুন জেনে নিই তার বিবরণ-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিশে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জান্নাতের বিবরণ দান করুন।
তখন তিনি বর্ণনা করেন, জান্নাতের একটি ইট স্বর্ণের, আর একটি রৌপ্যের, কংকর হবে মুক্তার, জাফরানের মাটি, কস্তুরির গারা। যে জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে সর্বদা আনন্দ-উল্লাসে মত্ত, মুগ্ধ-মাতোয়ারা থাকবে।
বেহেশতে কেউ চিন্তিত হবে না, কোনো দিনও মৃত্য আসবে না। পোশাক-পরিচ্ছদ পুরনো হবে না, কোনো দিন বৃদ্ধকাল আসবে না। জান্নাতে দুধ, পানি, মধুর নহরসমূহ প্রবাহিত থাকবে। বেহেশতবাসীগণ যা চাইবে সঙ্গে সঙ্গে তা পাবে।
সুতরাং আখিরাতের সীমাহীন জিন্দেগিতে জান্নাতের নিয়ামাত, ভোগ-বিলাস এবং আল্লাহর দিদার লাভে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন-যাপন বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা সঠিক জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।