ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিতে কুষ্টিয়ায় আবাসন ব্যবসায় ধস নেমেছে। বিশেষ করে রড-সিমেন্টের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যেই অনেকেই ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। গত এক দশক ধরে কুষ্টিয়ায় আবাসন ব্যবসায়ীদের হাত ধরে ছোট, বড় ও মাঝারি সব মিলে প্রায় ১০০টির মতো বহুতল ভবন নির্মাণ করে সেখানে অন্তত প্রায় দুই হাজার পরিবারের আবাসনের সংস্থান হয়েছে। বেশ ভালোই চলছিল।

সম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বিপাকে পড়েছেন। আবাসন ক্রেতাদের সঙ্গে পূর্বের চুক্তিমতে নির্মাণ সম্পন্ন করতে লোকসানে পড়ছে বিল্ডার্স কোম্পানিগুলো। এতে অবকাঠামো নির্মাণের গতিশীলতায় পড়েছে ভাটা। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকারি কাজেও প্রাক্কলন ব্যয় অনেকটায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্বীকার করছেন সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা।

কুষ্টিয়া জেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তাইজাল হোসেন বলেন, জেলায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন ভবন নির্মাণ প্রকল্পগুলোর চলমান কার্যক্রম এখন স্থবির। হঠাৎ নির্মাণ সামগ্রীর ঊর্ধ্বমুখী মূল্যের প্রভাবে হিসাব মেলাতে পারছে না নির্মাণাধীন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এতে এই খাতে নিয়োজিত সব ধরনের শ্রমিক বেকারত্বের শঙ্কাসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক আয়ুব আলী বলেন, এমনিতেই মালিক পক্ষ সুযোগ পেলেই আমাদের ন্যায্য মজুরি থেকে ঠকান। তারপর আবার অধিকাংশ বিল্ডিং নির্মাণ এখন বন্ধ রেখেছে মালিকরা। দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমিকরা কাজের সন্ধানে যেখানে দু’একটা কাজ চলছে সেখানে গেলেই মালিকরা কম মজুরি দিয়ে কাজ করানোর সুযোগ নেয়। এভাবে বেশিদিন চললে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অন্য পথ ধরতে হবে।

শহরের মজমপুরের রড ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানালেন, ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত প্রধানত রড, সিমেন্ট, ইটসহ ধাতব জাতীয় সামগ্রীর আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধির ফলে শহরের অধিকাংশ বিল্ডিংয়ের কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদাররা। এমনও দিন যাচ্ছে সারাদিন আমাদের বওনি হচ্ছে না। দোকানের কর্মচারীদের বেতন মজুরি দিতে হচ্ছে ক্যাশ ভেঙে। এছাড়া এসব ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কুলিরাও সারাদিন পর খালি হাতে বাড়ি যাচ্ছে। তারা ব্যাংক ঋণসহ নানাবিধভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

বিল্ডার্স ব্যবসায়ী ইকবাল হাসান খোকন বলেন, গত এক দশকে কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে অন্তত ১০০টির মতো বহুতল ভবনের ৩০ লাখ বর্গফুট আয়তনে প্রায় ২ হাজার পরিবারের আবাসন সংস্থান নির্মাণ করে ক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তিমতে ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ কোনো প্রকার যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত প্রধানত রড, সিমেন্ট, ইটসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণ উপকরণের লাগামহীণ মূল্যবৃদ্ধির কারণে উন্নয়নের এই খাতটি স্থবির। বিল্ডার্স ব্যবসায়ীরা ভবন নির্মাণে হিসাব মেলাতে পারছেন না। তাই কাজ স্থবির।

কুষ্টিয়া বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মতিন জানান, ভবন বা যে কোনো ধরনের ভবন নির্মাণ সামগ্রীর সিংহভাগ দখলকারী উপকরণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রড, সিমেন্ট, ইট, বালি-পাথর ছাড়াও প্রায় ২০০শ‘ প্রকার নির্মাণ উপকরণের সমন্বয়ে একটি ভবন দৃশ্যত হয়। তিনি বলেন, আধুনিক নাগরিক জীবনের আশ্রয়/আবাসন তৈরির ব্যবসায়ের সঙ্গে জেলাতে প্রায় ২০টি বিল্ডার্স কোম্পানি জড়িত। মূল্যবৃদ্ধির নির্মাণ সামগ্রী মূল্যের কারণে চলমান কাজ বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ জেড এম শফিউল হান্নান জানান, নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সরকারি খাতের অবকাঠামো নির্মাণে কোনো বাধা না হলেও সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতে এর সীমাহীন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।তিনি বলেন, হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে আগামীতে সব প্রকার সরকারি অবকাঠামো নির্মাণেও প্রাক্কলন ব্যয় সংকুলন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন

আপডেট টাইম : ১১:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিতে কুষ্টিয়ায় আবাসন ব্যবসায় ধস নেমেছে। বিশেষ করে রড-সিমেন্টের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যেই অনেকেই ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। গত এক দশক ধরে কুষ্টিয়ায় আবাসন ব্যবসায়ীদের হাত ধরে ছোট, বড় ও মাঝারি সব মিলে প্রায় ১০০টির মতো বহুতল ভবন নির্মাণ করে সেখানে অন্তত প্রায় দুই হাজার পরিবারের আবাসনের সংস্থান হয়েছে। বেশ ভালোই চলছিল।

সম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বিপাকে পড়েছেন। আবাসন ক্রেতাদের সঙ্গে পূর্বের চুক্তিমতে নির্মাণ সম্পন্ন করতে লোকসানে পড়ছে বিল্ডার্স কোম্পানিগুলো। এতে অবকাঠামো নির্মাণের গতিশীলতায় পড়েছে ভাটা। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকারি কাজেও প্রাক্কলন ব্যয় অনেকটায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্বীকার করছেন সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা।

কুষ্টিয়া জেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তাইজাল হোসেন বলেন, জেলায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন ভবন নির্মাণ প্রকল্পগুলোর চলমান কার্যক্রম এখন স্থবির। হঠাৎ নির্মাণ সামগ্রীর ঊর্ধ্বমুখী মূল্যের প্রভাবে হিসাব মেলাতে পারছে না নির্মাণাধীন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এতে এই খাতে নিয়োজিত সব ধরনের শ্রমিক বেকারত্বের শঙ্কাসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক আয়ুব আলী বলেন, এমনিতেই মালিক পক্ষ সুযোগ পেলেই আমাদের ন্যায্য মজুরি থেকে ঠকান। তারপর আবার অধিকাংশ বিল্ডিং নির্মাণ এখন বন্ধ রেখেছে মালিকরা। দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমিকরা কাজের সন্ধানে যেখানে দু’একটা কাজ চলছে সেখানে গেলেই মালিকরা কম মজুরি দিয়ে কাজ করানোর সুযোগ নেয়। এভাবে বেশিদিন চললে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অন্য পথ ধরতে হবে।

শহরের মজমপুরের রড ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানালেন, ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত প্রধানত রড, সিমেন্ট, ইটসহ ধাতব জাতীয় সামগ্রীর আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধির ফলে শহরের অধিকাংশ বিল্ডিংয়ের কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদাররা। এমনও দিন যাচ্ছে সারাদিন আমাদের বওনি হচ্ছে না। দোকানের কর্মচারীদের বেতন মজুরি দিতে হচ্ছে ক্যাশ ভেঙে। এছাড়া এসব ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কুলিরাও সারাদিন পর খালি হাতে বাড়ি যাচ্ছে। তারা ব্যাংক ঋণসহ নানাবিধভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

বিল্ডার্স ব্যবসায়ী ইকবাল হাসান খোকন বলেন, গত এক দশকে কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে অন্তত ১০০টির মতো বহুতল ভবনের ৩০ লাখ বর্গফুট আয়তনে প্রায় ২ হাজার পরিবারের আবাসন সংস্থান নির্মাণ করে ক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তিমতে ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ কোনো প্রকার যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত প্রধানত রড, সিমেন্ট, ইটসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণ উপকরণের লাগামহীণ মূল্যবৃদ্ধির কারণে উন্নয়নের এই খাতটি স্থবির। বিল্ডার্স ব্যবসায়ীরা ভবন নির্মাণে হিসাব মেলাতে পারছেন না। তাই কাজ স্থবির।

কুষ্টিয়া বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মতিন জানান, ভবন বা যে কোনো ধরনের ভবন নির্মাণ সামগ্রীর সিংহভাগ দখলকারী উপকরণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রড, সিমেন্ট, ইট, বালি-পাথর ছাড়াও প্রায় ২০০শ‘ প্রকার নির্মাণ উপকরণের সমন্বয়ে একটি ভবন দৃশ্যত হয়। তিনি বলেন, আধুনিক নাগরিক জীবনের আশ্রয়/আবাসন তৈরির ব্যবসায়ের সঙ্গে জেলাতে প্রায় ২০টি বিল্ডার্স কোম্পানি জড়িত। মূল্যবৃদ্ধির নির্মাণ সামগ্রী মূল্যের কারণে চলমান কাজ বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ জেড এম শফিউল হান্নান জানান, নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সরকারি খাতের অবকাঠামো নির্মাণে কোনো বাধা না হলেও সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতে এর সীমাহীন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।তিনি বলেন, হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে আগামীতে সব প্রকার সরকারি অবকাঠামো নির্মাণেও প্রাক্কলন ব্যয় সংকুলন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।