ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়ি এলাকা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আবারও চরম অশান্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়ি এলাকা। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই প্রাণ গেছে পাঁচজনের। শক্তিমান চাকমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদানের উদ্দেশে মাইক্রোবাসে যাওয়ার পথে ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছেন তারা। এর আগে গত পাঁচ মাসে পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছিলেন। অপহরণের ঘটনাও ঘটেছে একাধিক।

পার্বত্য অঞ্চলের পারস্পরিক বিরোধ এবং এর ফলে সৃষ্ট সহিংসতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। জমি নিয়ে বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাই এ সহিংসতার মূল কারণ। পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির পর আশা করা হয়েছিল অঞ্চলটিতে শান্তির সুবাতাস বইবে। কিন্তু চুক্তির বিরোধিতা করে জন্ম নেয়া ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সঙ্গে চুক্তির পক্ষাবলম্বনকারীদের বিরোধে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সশস্ত্র সংঘাতে মারা গেছেন প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী। এরপর একটি অলিখিত ও অপ্রকাশ্য চুক্তির পর সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ হলেও গত পাঁচ মাস ধরে আবারও শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত।

পাহাড়ি এলাকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত কেন্দ্রীভূত হয়েছে মূলত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দুটি দলের বিরোধে। জমি নিয়ে অবৈধ বাণিজ্য, আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা, চাঁদাবাজি ইত্যাদি জন্ম দিয়েছে এই বিরোধের। লক্ষ করা গেছে, পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এই চুক্তিকে অকার্যকর করার একটা অপচেষ্টাও চলছে।

পরপর দু’দফায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পর এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে যে, পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। সরকারকে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বসহকারে আমলে নিতে হবে। একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যার পরপরই আবারও কীভাবে ব্রাশফায়ারে পাঁচজনকে হত্যা ও আরও অনেককে আহত করা সম্ভব হল, তা গভীর উদ্বেগের বিষয়।

তবে কি পাহাড়ি উত্তেজনার প্রশমন বলে কিছু নেই? পার্বত্য চট্টগ্রামে পুলিশ, র‌্যাব, এমনকি সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাদের উপস্থিতিতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কীভাবে সংঘটিত হতে পারে, তা এক প্রশ্ন বটে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কী কী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, পার্বত্য অঞ্চলের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বাস্তবতা দেশের অপরাপর অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন, ফলে এখানকার সংকটের চরিত্রও ভিন্ন। এ ভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দরকার বিশেষ অন্তর্দৃষ্টি।

বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে কীভাবে ঐকমত্য সৃষ্টি করা যায়, তা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। আমরা পাহাড়ি এলাকায় স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে সরকারসহ সমগ্র দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়ি এলাকা

আপডেট টাইম : ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ মে ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আবারও চরম অশান্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়ি এলাকা। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই প্রাণ গেছে পাঁচজনের। শক্তিমান চাকমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদানের উদ্দেশে মাইক্রোবাসে যাওয়ার পথে ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছেন তারা। এর আগে গত পাঁচ মাসে পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছিলেন। অপহরণের ঘটনাও ঘটেছে একাধিক।

পার্বত্য অঞ্চলের পারস্পরিক বিরোধ এবং এর ফলে সৃষ্ট সহিংসতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। জমি নিয়ে বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাই এ সহিংসতার মূল কারণ। পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির পর আশা করা হয়েছিল অঞ্চলটিতে শান্তির সুবাতাস বইবে। কিন্তু চুক্তির বিরোধিতা করে জন্ম নেয়া ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সঙ্গে চুক্তির পক্ষাবলম্বনকারীদের বিরোধে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সশস্ত্র সংঘাতে মারা গেছেন প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী। এরপর একটি অলিখিত ও অপ্রকাশ্য চুক্তির পর সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ হলেও গত পাঁচ মাস ধরে আবারও শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত।

পাহাড়ি এলাকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত কেন্দ্রীভূত হয়েছে মূলত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দুটি দলের বিরোধে। জমি নিয়ে অবৈধ বাণিজ্য, আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা, চাঁদাবাজি ইত্যাদি জন্ম দিয়েছে এই বিরোধের। লক্ষ করা গেছে, পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এই চুক্তিকে অকার্যকর করার একটা অপচেষ্টাও চলছে।

পরপর দু’দফায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পর এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে যে, পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। সরকারকে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বসহকারে আমলে নিতে হবে। একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যার পরপরই আবারও কীভাবে ব্রাশফায়ারে পাঁচজনকে হত্যা ও আরও অনেককে আহত করা সম্ভব হল, তা গভীর উদ্বেগের বিষয়।

তবে কি পাহাড়ি উত্তেজনার প্রশমন বলে কিছু নেই? পার্বত্য চট্টগ্রামে পুলিশ, র‌্যাব, এমনকি সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাদের উপস্থিতিতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কীভাবে সংঘটিত হতে পারে, তা এক প্রশ্ন বটে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কী কী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, পার্বত্য অঞ্চলের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বাস্তবতা দেশের অপরাপর অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন, ফলে এখানকার সংকটের চরিত্রও ভিন্ন। এ ভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দরকার বিশেষ অন্তর্দৃষ্টি।

বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে কীভাবে ঐকমত্য সৃষ্টি করা যায়, তা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। আমরা পাহাড়ি এলাকায় স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে সরকারসহ সমগ্র দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।