ঢাকা , শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে প্রতি বছর ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নিচ্ছে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশে প্রতি বছর ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। এই হিসেবে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে ২০ জনেরও অধিক শিশু। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা বাড়িয়ে প্রতিরোধই এ রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ। আর বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার জিনের বাহক। এর মধ্যে ৪ শতাংশ লোক থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত, বেঁচে থাকার জন্য যাদের নিয়মিত রক্ত নিতে হয়। থ্যালাসেমিয়া নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন অব থ্যালাসেমিয়া’ এ তথ্য জানায়।
এ বছর বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসে সচেতনতা বাড়াতে তাই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল-‘বিয়ের আগে পরীক্ষা করলে রক্ত, সন্তান থাকবে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত।’ গতকাল নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশব্যাপি বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া একটি নীরব মহামারী রোগ। দেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। প্রতি বছর বাংলাদেশে ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এ রোগে মারাত্মক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় না। ফলে তাদের মারাত্মক রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। সাধারণত জন্মের ১-২ বছরের মধ্যে শিশুদের থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ে। এ রোগীদের বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মাসে ১-২ ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করতে হয়। চিকিত্সা না করা হলে এ রোগী ১০-১৫ বছরের মধ্যে মারা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক প্রায় ২৫০ মিলিয়ন। বিশ্বে প্রতি বছর ১ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উত্পাদনে ক্রটি থাকে। অর্থাত্ ক্রটিপূর্ণ  হিমোগ্লোবিন জিনের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে, থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা এনিমিয়াতে ভুগে থাকেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মা-বাবা দুজনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মায়। আর বাবা অথবা মা যে কোনো একজন জিন বাহক বলে ঝুঁকি থাকে না। তাই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া জরুরী। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরে থাকা লোহিত কণিকা অর্থাত্ রেড ব্লাড সেল (আরবিসি) তৈরি হয়ে তা নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভেঙে যায়। ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায়।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারিভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। সচেতনতা বাড়লে ধীরে ধীরে মানুষ বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক এটা মেনে নিবে।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. মো. আবদুর রহিম বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ। স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে তাদের গর্ভের সন্তানের এই রোগ হতে পারে। যদি স্বামী-স্ত্রী দুজনের একজন বাহক হন এবং অন্যজন সুস্থ হন, তাহলে তাদের সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কোনো আশংকা নেই। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৭ লক্ষ বিয়ে হয়। বিয়ের আগে বাধ্যতামূলক রক্ত পরীক্ষা করা হলে ঝুঁকিপূর্ণ দম্পতি নির্ণয় করা সম্ভব এবং এইসব দম্পতিকে থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ থেকে বাঁচানোও সম্ভব।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

দেশে প্রতি বছর ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নিচ্ছে

আপডেট টাইম : ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ মে ২০১৮
বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশে প্রতি বছর ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। এই হিসেবে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে ২০ জনেরও অধিক শিশু। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা বাড়িয়ে প্রতিরোধই এ রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ। আর বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার জিনের বাহক। এর মধ্যে ৪ শতাংশ লোক থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত, বেঁচে থাকার জন্য যাদের নিয়মিত রক্ত নিতে হয়। থ্যালাসেমিয়া নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন অব থ্যালাসেমিয়া’ এ তথ্য জানায়।
এ বছর বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসে সচেতনতা বাড়াতে তাই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল-‘বিয়ের আগে পরীক্ষা করলে রক্ত, সন্তান থাকবে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত।’ গতকাল নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশব্যাপি বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া একটি নীরব মহামারী রোগ। দেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। প্রতি বছর বাংলাদেশে ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এ রোগে মারাত্মক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় না। ফলে তাদের মারাত্মক রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। সাধারণত জন্মের ১-২ বছরের মধ্যে শিশুদের থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ে। এ রোগীদের বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মাসে ১-২ ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করতে হয়। চিকিত্সা না করা হলে এ রোগী ১০-১৫ বছরের মধ্যে মারা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক প্রায় ২৫০ মিলিয়ন। বিশ্বে প্রতি বছর ১ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উত্পাদনে ক্রটি থাকে। অর্থাত্ ক্রটিপূর্ণ  হিমোগ্লোবিন জিনের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে, থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা এনিমিয়াতে ভুগে থাকেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মা-বাবা দুজনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মায়। আর বাবা অথবা মা যে কোনো একজন জিন বাহক বলে ঝুঁকি থাকে না। তাই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া জরুরী। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরে থাকা লোহিত কণিকা অর্থাত্ রেড ব্লাড সেল (আরবিসি) তৈরি হয়ে তা নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভেঙে যায়। ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায়।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারিভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। সচেতনতা বাড়লে ধীরে ধীরে মানুষ বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক এটা মেনে নিবে।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. মো. আবদুর রহিম বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ। স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে তাদের গর্ভের সন্তানের এই রোগ হতে পারে। যদি স্বামী-স্ত্রী দুজনের একজন বাহক হন এবং অন্যজন সুস্থ হন, তাহলে তাদের সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কোনো আশংকা নেই। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৭ লক্ষ বিয়ে হয়। বিয়ের আগে বাধ্যতামূলক রক্ত পরীক্ষা করা হলে ঝুঁকিপূর্ণ দম্পতি নির্ণয় করা সম্ভব এবং এইসব দম্পতিকে থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ থেকে বাঁচানোও সম্ভব।