বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী আর উদ্ভিদের অন্যরকম এক সংগ্রহশালা রয়েছে চট্টগ্রামের বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্কে। এখানে গেলেই মন ভরিয়ে দেবে দেশের একমাত্র বন ছাগল, আসামি বানর, মেছো বিড়াল, বন বিড়াল, লিওপার্ড ক্যাট, নীলকান বসন্তু, কাউ ধনেশ, হলুদ পা হরিয়ালের মতো বিরল প্রজাতির হরেক রকমের বন্যপ্রাণী। একইভাবে এখানে দেখা মিলবে বিরল প্রজাতির নানা উদ্ভিদেরও। বাংলাদেশ বন গবেষণাগারের (বিএফআরআই) উদ্যোগে পার্কের
প্রজাতি সংখ্যা নির্ধারণ এবং তাদের সংরক্ষণের জন্য পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্কে অন্তত ১৬১ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য এবং ৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। গবেষকরা দীর্ঘ চার বছর ধরে এই পার্কে গবেষণা চালান। আর তাতে উঠে আসে বিরল প্রজাতির অনেক বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ থাকার তথ্যপ্রমাণ। গবেষণায় ১০২ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১২ প্রজাতির উভচর এবং ২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর সন্ধানও পাওয়া যায়।
বিএফআরআইর সিনিয়র গবেষক বরিউল আলম বলেন, ‘চার বছর ধরে আমরা বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্কের জীববৈচিত্র্যের ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করি। গবেষণায় এই পার্কে বিরল প্রজাতির অনেক বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ পাওয়া গেছে। এগুলো দেশের জীববৈচিত্র্যের বড় ধরনের সংগ্রহ বলে মনে করি।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিমে দেড় কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ড এবং মিরসরাইয়ে অবস্থিত বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্ক। দুই হাজার ৯৩৩ একর বনভূমি নিয়ে এ পার্কে রয়েছে ছোট-বড় ১২টি ছড়া ও খাল। সরাসরি জরিপ, বন্যপ্রাণীর পদচিহ্ন, তাদের চলাফেরার স্থান এবং ক্যামেরা ট্রাফিং এবং স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে প্রায় চার বছর ধরে গবেষণা করে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা। বাংলাদেশ বন গবেষণাগারের বন্যপ্রাণী বিভাগের সিনিয়র গবেষণা কর্মকর্তা এসএম রবিউল আলমের নেতৃত্বে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় প্রজাতিগুলো সংরক্ষণের জন্য পাঁচ দফা সুপারিশও দেওয়া হয়। সুপারিশগুলো হলো- প্রজাতিগুলোর জন্য আলাদা আলাদা জোন করা, স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতির মাধ্যমে বাসস্থান পুনর্নির্মাণ করা, জীববৈচিত্র্যের সঠিক মনিটরিং নিশ্চিত করা, এ জন্য পাহারাদার ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে, আচরণ ও পরিবেশগত কার্যাবলি পর্যবেক্ষণ করা।
বাংলাদেশ বন গবেষণাগার সূত্রে জানা যায়, পার্কে ১২ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১০২ প্রজাতির পাখি ও ৬০ প্রজাতির গাছ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এই বন নিয়ে গবেষণা করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বন বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে একমাত্র সাইকাস আছে এ বনে। এখানে যেসব জীববৈচিত্র্য রয়েছে তা অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু স্থানীয়দের হরিণ শিকারের জন্য আগুন দেওয়া আর জ্বালানি সংগ্রহ করা রোধ করা গেলে আরও সমৃদ্ধ হবে এ বন। তাই ন্যাশনাল পার্ক ঘোষণা করা হলেও যথাযথ মনিটর করা প্রয়োজন এটার।’