ঢাকা , সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝালকাঠিতে ৮০টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ঝালকাঠি জেলায় ৫৮৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি বিদ্যালয় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান। নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম।

উপজেলার সুগন্ধা নদীর পাশে বহরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। বিদ্যালয় ভবনটি নতুন হওয়া সত্ত্বেও নদী ভাঙনের ভয়ে পাশের পুরনো একটি টিনের ঘরে চলছে পাঠদান। এভাবেই জেলার রাজাপুর, কাঁঠালিয়া ও সদর উপজেলার মোট ৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকি নিয়ে লেখাপড়া করছে সহস্রাধিক কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার মোট ৫৮৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০টি বিদ্যালয় ভবন ইতিমধ্যেই অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এসব ভবন আশি-নব্বই দশকে নির্মাণ করা হয়েছে। ৩০-৩৫ বছর যেতে না যেতেই ভবনগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনটি আংশিক সংস্কার করা হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ছাদ ও দেয়াল খসে পড়ে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। পিলারগুলো ক্ষয় হয়ে ভবনের কাঠামো দুর্বল হয়ে যাওয়ায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী। এরপরও নিরুপায় হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এসব বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অনেক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় একই কক্ষে দুই-তিন শ্রেণির ক্লাস নিতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ভবনগুলোকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেই দায় সেরেছেন তারা।

নলছিটির পশ্চিম সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রোকেয়া আক্তার বলে, গত বছর ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে আমার মাথা ফেটে গিয়েছিল। তাই ক্লাসে বসতে ভয় লাগে।

উপজেলার রায়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. জুয়েল বলে, বৃষ্টির সময় আমাদের স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়। আমাদের বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন হলে আমরা পড়ালেখায় আরও মনোযোগী হতে পারতাম।

উপজেলার তারাবুনিয়া সরকারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী লিজা আক্তার বলে, আমাদের স্কুলটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝে-মধ্যেই ছাদ থেকে টুকরো খসে পড়ে আমরা আহত হই। আমাদের অনেক বন্ধু অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে।

এসব বিদ্যালয়ের দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের কাছে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছাইয়াদুজ্জামান বলেন, ইতিমধ্যে ৮০টি বিদ্যালয়কে চিহ্নিত করে অধিদফরে তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত এসব বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হবে। পুরাতন ভবনগুলোকে উপজেলা নিলাম কমিটির মাধ্যমে নিলাম প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ দর দাতাকে হস্তান্তর করা হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

ঝালকাঠিতে ৮০টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

আপডেট টাইম : ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অগাস্ট ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ঝালকাঠি জেলায় ৫৮৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি বিদ্যালয় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান। নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম।

উপজেলার সুগন্ধা নদীর পাশে বহরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। বিদ্যালয় ভবনটি নতুন হওয়া সত্ত্বেও নদী ভাঙনের ভয়ে পাশের পুরনো একটি টিনের ঘরে চলছে পাঠদান। এভাবেই জেলার রাজাপুর, কাঁঠালিয়া ও সদর উপজেলার মোট ৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকি নিয়ে লেখাপড়া করছে সহস্রাধিক কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার মোট ৫৮৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০টি বিদ্যালয় ভবন ইতিমধ্যেই অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এসব ভবন আশি-নব্বই দশকে নির্মাণ করা হয়েছে। ৩০-৩৫ বছর যেতে না যেতেই ভবনগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনটি আংশিক সংস্কার করা হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ছাদ ও দেয়াল খসে পড়ে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। পিলারগুলো ক্ষয় হয়ে ভবনের কাঠামো দুর্বল হয়ে যাওয়ায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী। এরপরও নিরুপায় হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এসব বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অনেক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় একই কক্ষে দুই-তিন শ্রেণির ক্লাস নিতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ভবনগুলোকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেই দায় সেরেছেন তারা।

নলছিটির পশ্চিম সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রোকেয়া আক্তার বলে, গত বছর ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে আমার মাথা ফেটে গিয়েছিল। তাই ক্লাসে বসতে ভয় লাগে।

উপজেলার রায়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. জুয়েল বলে, বৃষ্টির সময় আমাদের স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়। আমাদের বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন হলে আমরা পড়ালেখায় আরও মনোযোগী হতে পারতাম।

উপজেলার তারাবুনিয়া সরকারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী লিজা আক্তার বলে, আমাদের স্কুলটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝে-মধ্যেই ছাদ থেকে টুকরো খসে পড়ে আমরা আহত হই। আমাদের অনেক বন্ধু অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে।

এসব বিদ্যালয়ের দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের কাছে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছাইয়াদুজ্জামান বলেন, ইতিমধ্যে ৮০টি বিদ্যালয়কে চিহ্নিত করে অধিদফরে তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত এসব বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হবে। পুরাতন ভবনগুলোকে উপজেলা নিলাম কমিটির মাধ্যমে নিলাম প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ দর দাতাকে হস্তান্তর করা হবে।