ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের ক্ষণগণনা চলছে। আর এক মাসের কম সময় বাকি রয়েছে সম্মেলনের। প্রস্তুতি যেমন চলছে জোরেশোরে, তেমনি চলছে দলের ভেতরে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে বিভিন্ন কমিটির পদপদবিতে কারা আসছেন এ নিয়েই আলোচনা বেশি। এই জল্পনায় আছে নারী নেতৃত্বের বিষয়টিও। দলের বিভিন্ন স্তরে কথা বলে জানা গেছে, এবার নতুন কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়তে পারে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক।
বর্তমান ৭৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি শেখ হাসিনাসহ নারী নেতা রয়েছেন নয়জন। গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে যে বর্ধিত কার্যনির্বাহী সংসদ গঠন হবে সম্মেলনে, তাতে সদস্যসংখ্যা হবে ৮১, যেখানে যোগ হচ্ছেন আরও বেশ কজন নারী নেত্রী।
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন চালুর সময় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে বিভিন্ন কমিটির এক-তৃতীয়াংশ পদে নারী সদস্য রাখার শর্ত ২০২০ সালের মধ্যে পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতো নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন নিয়েছে আওয়ামী লীগও। তবে এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সেই শর্ত পূরণ করতে পারবে না দলটি।
দলের নীতি-নির্ধারণী একাধিক নেতা জানান, আগামী ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নারী নেতৃত্বে অন্তর্ভুক্তি বা বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্তমান কমিটির কয়েকজন নারী নেতা বাদও পড়তে পারেন।
দলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে নারী নেতা ছিলেন ১০ জন। তাদের ম্যধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন মারা গেছেন। অন্য নয়জন হলেন- সভাপতি শেখ হাসিনা, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, কেন্দ্রীয় সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ও মুন্নুজান সুফিয়ান।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় কমিটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী নেতৃত্ব নিয়ে আসতে চান। কাকে কাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া যেতে পারে, সে সম্পর্কে তিনি ইতিমধ্যে ঘনিষ্ঠজনদের মতামত চেয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে জানায়।
সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য জানান, এর আগে দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে নারীদের প্রাধান্য দেয়া হয়নি। তাই আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে নারী নেত্রীর অন্তর্ভুক্তি ঘটবে উল্লেখযোগ্য হারে। বিষয়টি চমক হিসেবেও দেখা যাবে।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে পারেন এমন বেশ কজন নারী নেতা আলোচনায় আছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম; মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী; হুইপ মাহবুব আরা গিনি; মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন নেসা মোশাররফ; যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সানজিদা খানম, মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথী, ওয়াসিকা আয়শা খান, উমা চৌধুরী, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি, মারুফা আক্তার পপি, ডা. নুজহাত চৌধুরী, শমী কায়সার প্রমুখ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব নারী নেত্রী অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন, দলের জন্য নানা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিকভাবে মেধাবী ও শিক্ষিত, তাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনার চিন্তা-ভাবনা করছেন দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নেতৃত্বে কারা আসবে, সেটা আগে থেকে বলা না গেলেও দলের সব কমিটিতেই কিছু পদে নতুন মুখ আসবে এটা বলা যায়। আর নারী নেতৃত্বের সংখ্যা বাড়বে- এটাও নিশ্চিত করে বলা যায়।’