ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই বিজয়গাথা ধরে রাখতে হবে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সব শঙ্কা-আশঙ্কা, সন্দেহ, হুমকি-ধমকি, ষড়যন্ত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তর্ক-বিতর্ক শেষে গণতন্ত্রকামী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সুষ্ঠু প্রতিফলনের মাধ্যমে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সারাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রয়োগ করেছেন ভোটাররা। বিচ্ছিন্ন যেসব ঘটনায় বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তাতে মৃত্যুহার বিবেচনা করলে স্পষ্টই বোঝা যাবে—সেসব ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টই বেশি মারমুখী অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ফলে সরকার বা আওয়ামী লীগের কর্মীদেরই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বেশি। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি-জামায়াত যাই বলি না কেন অপঘাতে কোনো মৃত্যুই কারো কাম্য নয়।

আগেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের জরিপে উঠে এসেছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজয় সম্ভাবনার চিত্র। ৩০ ডিসেম্বর ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র! অবশেষে সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। চতুর্থবারের মতো বিজয় নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং টানা তৃতীয়বারের মতো অর্থাৎ এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদে জননেত্রী ‘হ্যাটট্রিক’ করলেন। পাশাপাশি, এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে আরেকটি সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো—দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠার জন্য পাঁচ বছর পর পর রাষ্ট্রক্ষমতায় দল পরিবর্তন বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, ক্ষমতাসীনদের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। আত্মমর্যাদার সঙ্গে দেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেধা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সহাবস্থান নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে জাতিকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ।

বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে উপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি আমরা সরকারকে যত্নশীল কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে দেখেছি বলেই এ দেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা স্থাপনে বিশ্বাসী হয়েছে। আর বিশ্বাসী হয়েছে বলেই টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় জনগণ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছে। শেখ হাসিনাকে পুনর্বার প্রধানমন্ত্রীরূপে এ দেশের মানুষ দেখতে চেয়েছে বলেই ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়েছে। তাকে ‘হ্যাটট্রিক’ করার সুযোগ দিয়েছে।

জনগণ ভুল করেনি। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং একইসঙ্গে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণের ভোটের রায় ও সঠিক সিদ্ধান্তের ফলে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন এবং নিরন্তর শুভেচ্ছা। একইসঙ্গে শুভেচ্ছা জানাই নতুন মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্যকে। চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী এবং ‘হ্যাটট্রিক’ করা প্রধানমন্ত্রীর এবারের বিজয়ে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার আমরা মানুষের কিছু আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি তুলে ধরতে চাই। যা তিনি তার বিগত অভিজ্ঞতার আলোকে দেশবাসীকে উপহার দেবেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ দেশের জনগণকে আপনি পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছেন, মেট্রোরেল উপহার দিয়েছেন, উপহার দিয়েছেন বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন নামের বিভিন্ন ‘মেগা’ প্রকল্প। যুদ্ধাপরাধীর বিচার উপহার দিয়ে আপনি সমগ্র জাতিকে করেছেন কলঙ্কমুক্ত। যে কলঙ্ক-কালিমায় বিগত চারটি দশক দেশের ভাগ্য ললাট ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রেরণা ছিল সতত অনিশ্চিত আশঙ্কার মুখোমুখি—আপনি তা থেকে এ দেশ ও এ দেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো সাড়া জাগানো কর্মকাণ্ড পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে কিনা জানি না—আপনার দিকনির্দেশনায় বিগত কয়েক বছর ধরে বছরের প্রথম দিন দেশের সব স্কুলে একসঙ্গে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর মাঝে নতুন নতুন বই উপহার দিয়েছেন।

আমাদের সময়ে যা ছিল কল্পনাতীত! বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীর হাতে সব বিষয়ের বই পৌঁছে দেওয়ার এমন গর্বিত নজির পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই। আপনি এ কাজটি করেছেন। আপনার মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে শিক্ষার হার বৃদ্ধি! বর্তমানে শিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়ে আপনার মনোযোগ আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সাফল্যে পর্যবসিত হবে। সামাজিক সক্ষমতার সব সূচকে দেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন আপনি। উপরন্তু আপনিই ২০৪০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ও অশিক্ষামুক্ত ‘উন্নত’ রাষ্ট্র গড়ে তোলার এক স্বপ্ন দেশবাসীর মনে বপন করেছেন। আপনি বিগত দশ বছরে দেশে স্থিতিশীলতা রক্ষা করেছেন সাফল্যের সঙ্গে যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

১৩, ১৪ ও ১৫ সালের কয়েকটি মাস ছাড়া বিগত দশ বছরের টানা স্থিতিশীলতায় বৃদ্ধি পেয়েছে দেশে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। বৃদ্ধি পেয়েছে মাথাপিছু প্রবৃদ্ধিও। বিগত দশ বছরের মতো আর কোনো সময় দেশের ভেতরকার স্থিতিশীলতা নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘস্থায়িত্ব অর্জন করতে পারেনি। প্রায় নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিশীলতার ফলেই অর্থনীতিসহ সামাজিক সক্ষমতার সব সূচকে বাংলাদেশ কেবলই সম্মুখের দিকেই এগিয়ে গেছে। যা পার্শ্ববর্তী অনেক রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। আপনি বিগত দুই মেয়াদে জনগণের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করেছেন বলেই রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আপনার সাফল্যের পাল্লা অতীতের যেকোনো সময়ের যেকোনো রাষ্ট্রপ্রধানের চেয়ে ভারী।

জনগণের আস্থা সৃষ্টিতে সেসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নই আপনাকে এবারের সাফল্যের দিকে নিয়ে গেছে। তাই এ দেশের মানুষ আবারো আপনাকে নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়ে তাদের ভোট দিয়ে আপনাকে এবং আপনার প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করেছে। আমরা সাধারণের সিদ্ধান্তকেও স্বাগত জানাই, তাদেরও অভিনন্দন জানাই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে পারলে আজকে বিগত সাফল্যের সূত্র ধরে যে বিজয় নিশ্চিত হলো তা পরবর্তী বিজয়কেও প্রভাবিত করতে সক্ষম হবে।

রাষ্ট্রপ্রধান বা সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আপনার সাফল্য এখন আর উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। বিদেশি গণমাধ্যম আপনাকে ‘কর্তৃৃত্ববাদী’ বলে সম্প্রতি যে বিশেষণ যুক্ত করেছে এখন আপনাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বনেতা হিসেবে আপনার ক্রম-অবস্থানকে আরো সুউচ্চে তুলে তার জবাব দিতে হবে। ‘কর্তৃৃত্ববাদী’ বলে তারা আপনার নেতিবাচক সমালোচনার প্রতি ইঙ্গিত করলেও আপনি তা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। আমরা আপনার এই ‘স্পিরিট’কেও অভিবাদন জানাই। পাশাপাশি, আপনার প্রতি এ প্রত্যাশাও ব্যক্ত করতে চাই, আপনি আপনার রাজনৈতিক মেধা ও প্রজ্ঞাকে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে মেলে ধরবেন। এ দেশের মানুষ আপনাকে সেই সুযোগটি এবার ভোটের মাধ্যমে করে দিয়েছে। ফলে আপনার প্রতি আমাদের প্রত্যাশা আরো আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে।

‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপমানজনক অপবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করে মর্যাদাশালীরূপে গড়ে তুলতে আপনিই জনগণের সম্মুখে মেলে দিয়েছেন অবারিত স্বপ্ন। অনুন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এবং পরে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে ‘উন্নত’ রাষ্ট্রের এক অসীম সাহসী স্বপ্নবীজ এ দেশের মানুষের মধ্যে আপনিই তো সঞ্চার করেছেন। এইবার, আপনার এই চতুর্থ মেয়াদে উন্নত রাষ্ট্রের লক্ষাভিমুখে যাত্রায় দেশবাসী আপনাকে দিয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। আপনার স্বাপ্নিক দর্শন ও অভিপ্রায় নিয়ে আপনি এগিয়ে চলুন। বাংলাদেশ চলবে আপনার সঙ্গে। দুঃখিনী বাংলাদেশকে আপনি স্বপ্ন দেখিয়ে ও কর্মোদ্যমে দেশবাসীকে আত্মনিয়োগের সুযোগদানের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলুন।

দেশ এগিয়ে যাক, এগিয়ে যাক এ দেশের মানুষ। দারিদ্র্যের সীমারেখা অতিক্রম করে ধনী ও উন্নত জীবনের অধিকারী হয়ে উঠুক। যে অভিপ্রায়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সে লক্ষ্যে এ দেশের মানুষকে নিয়ে চলাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, আপনার সাধ। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ আপনার মাধ্যমে সমাপ্ত হোক। আপনার মাধ্যমে এ দেশ প্রকৃত সোনার বাংলা হয়ে উঠুক। আপনার স্বপ্ন দর্শন ও উন্নয়নের হাত ধরে বাংলাদেশ প্রকৃত সোনার বাংলা হয়ে উঠুক। এজন্য আপনার একটি কঠোর নির্দেশনাই শুধু প্রয়োজন—আর তাহলো, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনার সহনশীলতাকে একেবারে শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে তার গুণগুলোও আপনার মধ্যে আছে—তাহলো, আপনিও অনেককে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু অযোগ্যদের ক্ষমা না করে ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে মাঝেমধ্যে কিছুটা কঠোর হলেও সর্বসাধারণের কাছে আপনার যে বার্তাটি পৌঁছাবে তা সাধারণের ব্যক্তিক সক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

এই বিজয়গাথা ধরে রাখতে হবে

আপডেট টাইম : ১০:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সব শঙ্কা-আশঙ্কা, সন্দেহ, হুমকি-ধমকি, ষড়যন্ত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তর্ক-বিতর্ক শেষে গণতন্ত্রকামী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সুষ্ঠু প্রতিফলনের মাধ্যমে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সারাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রয়োগ করেছেন ভোটাররা। বিচ্ছিন্ন যেসব ঘটনায় বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তাতে মৃত্যুহার বিবেচনা করলে স্পষ্টই বোঝা যাবে—সেসব ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টই বেশি মারমুখী অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ফলে সরকার বা আওয়ামী লীগের কর্মীদেরই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বেশি। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি-জামায়াত যাই বলি না কেন অপঘাতে কোনো মৃত্যুই কারো কাম্য নয়।

আগেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের জরিপে উঠে এসেছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজয় সম্ভাবনার চিত্র। ৩০ ডিসেম্বর ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র! অবশেষে সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। চতুর্থবারের মতো বিজয় নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং টানা তৃতীয়বারের মতো অর্থাৎ এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদে জননেত্রী ‘হ্যাটট্রিক’ করলেন। পাশাপাশি, এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে আরেকটি সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো—দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠার জন্য পাঁচ বছর পর পর রাষ্ট্রক্ষমতায় দল পরিবর্তন বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, ক্ষমতাসীনদের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। আত্মমর্যাদার সঙ্গে দেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেধা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সহাবস্থান নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে জাতিকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ।

বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে উপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি আমরা সরকারকে যত্নশীল কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে দেখেছি বলেই এ দেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা স্থাপনে বিশ্বাসী হয়েছে। আর বিশ্বাসী হয়েছে বলেই টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় জনগণ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছে। শেখ হাসিনাকে পুনর্বার প্রধানমন্ত্রীরূপে এ দেশের মানুষ দেখতে চেয়েছে বলেই ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়েছে। তাকে ‘হ্যাটট্রিক’ করার সুযোগ দিয়েছে।

জনগণ ভুল করেনি। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং একইসঙ্গে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণের ভোটের রায় ও সঠিক সিদ্ধান্তের ফলে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন এবং নিরন্তর শুভেচ্ছা। একইসঙ্গে শুভেচ্ছা জানাই নতুন মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্যকে। চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী এবং ‘হ্যাটট্রিক’ করা প্রধানমন্ত্রীর এবারের বিজয়ে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার আমরা মানুষের কিছু আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি তুলে ধরতে চাই। যা তিনি তার বিগত অভিজ্ঞতার আলোকে দেশবাসীকে উপহার দেবেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ দেশের জনগণকে আপনি পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছেন, মেট্রোরেল উপহার দিয়েছেন, উপহার দিয়েছেন বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন নামের বিভিন্ন ‘মেগা’ প্রকল্প। যুদ্ধাপরাধীর বিচার উপহার দিয়ে আপনি সমগ্র জাতিকে করেছেন কলঙ্কমুক্ত। যে কলঙ্ক-কালিমায় বিগত চারটি দশক দেশের ভাগ্য ললাট ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রেরণা ছিল সতত অনিশ্চিত আশঙ্কার মুখোমুখি—আপনি তা থেকে এ দেশ ও এ দেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো সাড়া জাগানো কর্মকাণ্ড পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে কিনা জানি না—আপনার দিকনির্দেশনায় বিগত কয়েক বছর ধরে বছরের প্রথম দিন দেশের সব স্কুলে একসঙ্গে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর মাঝে নতুন নতুন বই উপহার দিয়েছেন।

আমাদের সময়ে যা ছিল কল্পনাতীত! বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীর হাতে সব বিষয়ের বই পৌঁছে দেওয়ার এমন গর্বিত নজির পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই। আপনি এ কাজটি করেছেন। আপনার মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে শিক্ষার হার বৃদ্ধি! বর্তমানে শিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়ে আপনার মনোযোগ আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সাফল্যে পর্যবসিত হবে। সামাজিক সক্ষমতার সব সূচকে দেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন আপনি। উপরন্তু আপনিই ২০৪০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ও অশিক্ষামুক্ত ‘উন্নত’ রাষ্ট্র গড়ে তোলার এক স্বপ্ন দেশবাসীর মনে বপন করেছেন। আপনি বিগত দশ বছরে দেশে স্থিতিশীলতা রক্ষা করেছেন সাফল্যের সঙ্গে যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

১৩, ১৪ ও ১৫ সালের কয়েকটি মাস ছাড়া বিগত দশ বছরের টানা স্থিতিশীলতায় বৃদ্ধি পেয়েছে দেশে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। বৃদ্ধি পেয়েছে মাথাপিছু প্রবৃদ্ধিও। বিগত দশ বছরের মতো আর কোনো সময় দেশের ভেতরকার স্থিতিশীলতা নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘস্থায়িত্ব অর্জন করতে পারেনি। প্রায় নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিশীলতার ফলেই অর্থনীতিসহ সামাজিক সক্ষমতার সব সূচকে বাংলাদেশ কেবলই সম্মুখের দিকেই এগিয়ে গেছে। যা পার্শ্ববর্তী অনেক রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। আপনি বিগত দুই মেয়াদে জনগণের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করেছেন বলেই রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আপনার সাফল্যের পাল্লা অতীতের যেকোনো সময়ের যেকোনো রাষ্ট্রপ্রধানের চেয়ে ভারী।

জনগণের আস্থা সৃষ্টিতে সেসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নই আপনাকে এবারের সাফল্যের দিকে নিয়ে গেছে। তাই এ দেশের মানুষ আবারো আপনাকে নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়ে তাদের ভোট দিয়ে আপনাকে এবং আপনার প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করেছে। আমরা সাধারণের সিদ্ধান্তকেও স্বাগত জানাই, তাদেরও অভিনন্দন জানাই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে পারলে আজকে বিগত সাফল্যের সূত্র ধরে যে বিজয় নিশ্চিত হলো তা পরবর্তী বিজয়কেও প্রভাবিত করতে সক্ষম হবে।

রাষ্ট্রপ্রধান বা সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আপনার সাফল্য এখন আর উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। বিদেশি গণমাধ্যম আপনাকে ‘কর্তৃৃত্ববাদী’ বলে সম্প্রতি যে বিশেষণ যুক্ত করেছে এখন আপনাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বনেতা হিসেবে আপনার ক্রম-অবস্থানকে আরো সুউচ্চে তুলে তার জবাব দিতে হবে। ‘কর্তৃৃত্ববাদী’ বলে তারা আপনার নেতিবাচক সমালোচনার প্রতি ইঙ্গিত করলেও আপনি তা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। আমরা আপনার এই ‘স্পিরিট’কেও অভিবাদন জানাই। পাশাপাশি, আপনার প্রতি এ প্রত্যাশাও ব্যক্ত করতে চাই, আপনি আপনার রাজনৈতিক মেধা ও প্রজ্ঞাকে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে মেলে ধরবেন। এ দেশের মানুষ আপনাকে সেই সুযোগটি এবার ভোটের মাধ্যমে করে দিয়েছে। ফলে আপনার প্রতি আমাদের প্রত্যাশা আরো আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে।

‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপমানজনক অপবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করে মর্যাদাশালীরূপে গড়ে তুলতে আপনিই জনগণের সম্মুখে মেলে দিয়েছেন অবারিত স্বপ্ন। অনুন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এবং পরে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে ‘উন্নত’ রাষ্ট্রের এক অসীম সাহসী স্বপ্নবীজ এ দেশের মানুষের মধ্যে আপনিই তো সঞ্চার করেছেন। এইবার, আপনার এই চতুর্থ মেয়াদে উন্নত রাষ্ট্রের লক্ষাভিমুখে যাত্রায় দেশবাসী আপনাকে দিয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। আপনার স্বাপ্নিক দর্শন ও অভিপ্রায় নিয়ে আপনি এগিয়ে চলুন। বাংলাদেশ চলবে আপনার সঙ্গে। দুঃখিনী বাংলাদেশকে আপনি স্বপ্ন দেখিয়ে ও কর্মোদ্যমে দেশবাসীকে আত্মনিয়োগের সুযোগদানের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলুন।

দেশ এগিয়ে যাক, এগিয়ে যাক এ দেশের মানুষ। দারিদ্র্যের সীমারেখা অতিক্রম করে ধনী ও উন্নত জীবনের অধিকারী হয়ে উঠুক। যে অভিপ্রায়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সে লক্ষ্যে এ দেশের মানুষকে নিয়ে চলাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, আপনার সাধ। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ আপনার মাধ্যমে সমাপ্ত হোক। আপনার মাধ্যমে এ দেশ প্রকৃত সোনার বাংলা হয়ে উঠুক। আপনার স্বপ্ন দর্শন ও উন্নয়নের হাত ধরে বাংলাদেশ প্রকৃত সোনার বাংলা হয়ে উঠুক। এজন্য আপনার একটি কঠোর নির্দেশনাই শুধু প্রয়োজন—আর তাহলো, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনার সহনশীলতাকে একেবারে শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে তার গুণগুলোও আপনার মধ্যে আছে—তাহলো, আপনিও অনেককে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু অযোগ্যদের ক্ষমা না করে ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে মাঝেমধ্যে কিছুটা কঠোর হলেও সর্বসাধারণের কাছে আপনার যে বার্তাটি পৌঁছাবে তা সাধারণের ব্যক্তিক সক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়