সজীব ওয়াজেদ জয় (ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে উন্নয়ন স্মরণ
এ মাসে স্বাধীনতার ৪৬ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে নামতে আহবান জানান। তার পরের নয় মাস রীতিমতো দুঃস্বপ্নের মধ্যে যেতে হয় বাংলাদেশকে। নির্বিচার নৃশংসতা ও যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে সংঘটিত এক গণহত্যার শিকার হয় ৩০ লক্ষ মানুষ। সদ্যজাত রাষ্ট্রটিকে মেধাশূন্য করতেই তারা নিশানা করেছিলো বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক, শিল্পী এবং অন্যান্য উচ্চ শিক্ষিত বাঙালিদের।
অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই আর ভারতীয় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান আত্মসমর্পন করে। আমার নানা শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় কেউই আশা করেনি এই সদ্য স্বাধীন দেশটি টিকে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র তো এর স্বাধীনতারই বিপক্ষে ছিলো।
১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের ছোবল থেকে তখনও সেরে ওঠেনি এই দেশ, যাতে মারা গিয়েছিলো প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ। আর পাকিস্তানীদের আক্রমণের পর টাইম ম্যাগাজিনের ভাষ্যমতে বাংলাদেশের বিধ্বস্ত শহরগুলোর অবস্থা দেখতে হয়েছিলো, ‘পারমানবিক হামলার পরদিনের সকালের মতো’। লাখ লাখ শরণার্থী ফিরে আসছিলো। হাতেগোনা রপ্তানীযোগ্য পণ্যের অন্যতম ছিলো পাট, যা কিউবার কাছে বিক্রি করা হয়েছে এই অভিযোগ তুলে বাংলাদেশে খাদ্যবোঝাই জাহাজ পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র, যার ফলে ১৯৭৪ সালে ভয়াবহ এক দুর্ভিক্ষের সূত্রপাত হয়।
১৯৭৫ সালে সরকারের বিরুদ্ধে এক সামরিক অভ্যুথান ঘটে আর তার নেতারা আমার নানা বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁকে এবং আমার পরিবারের বেশীরভাগ সদস্যকে হত্যা করে। এর ধারাবাহিকতায় পরের বছরগুলো নারকীয়তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সেসব ছিলো অভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারিতা, সামরিক শাসন, দুর্নীতি, দারিদ্রতা এবং অসংখ্য সুযোগ নষ্ট করার বছর। মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরী কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে অভিহিত করলেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে।
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন আমার মা, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। আর তিনি তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে সঙ্গী করে কার্যকর কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করলেন যাতে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু তাকে প্রতিটা ইঞ্চি জায়গার জন্য লড়তে হয়েছে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়ার সঙ্গে যিনি বিরোধী দল বিএনপির প্রধান, যারা ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলো। তবে জনগনের মধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের জনপ্রিয়তা বজায় রাখলো, এতই জনপ্রিয় যে বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হলো। ২০০৪ সালে খালেদা জিয়ার ছেলের পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের এক প্রতিবাদ সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হয় এবং আহত হন আমার মা। হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের চর্চায় অভ্যস্ত বিএনপির রাজনীতির পতনের শুরু হয় তখন থেকেই।
২০০৯ সালে এক ভূমিধ্বস বিজয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা এবং ২০১৪ সালে পুনঃনির্বাচিত হলেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি যখন হরতাল আর জ্বালাও পোড়াওয়ের রাজনীতি করছে, আওয়ামী লীগ তখন ব্যস্ত থেকেছে দেশটাকে আরও ভালোভাবে গড়ার কাজে।
২০০৯ সাল থেকে দেশে দারিদ্রতার হার শতকরা ৪০ ভাগ থেকে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। তিন কোটি মানুষের দারিদ্র বিমোচন হয়েছে। দেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার ১০৩ বিলিয়ন ডলার থেকে দ্বিগুণের বেশি হয়ে দাড়িয়েছে ২৫০ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই হারে শুরুতে মূল ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোষাক খাত……..। রপ্তানী বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাড়িয়েছে বার্ষিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্য অর্জন হয়েছে, যার কৃতিত্ব মেয়েদের জন্য সরকারী বৃত্তি দেওয়ার কর্মসূচীর। নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বেশ কয়েকটি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এতই চমকপ্রদ ছিলো এই অগ্রগতি যে জাতিসংঘ তাদের পর্যায়ক্রমিক কার্যকর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারনে আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
উদ্ভাবনী খামারের উদ্যোগে প্রান্তিক নারীরা উদ্যোক্তা হয়েছেন এবং ঘরে বসে আয়ের সুযোগ পেয়েছেন যা তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সামাজিক মর্যাদা বাড়িয়েছে। প্রায় ২০ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রথম মেয়াদে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নেওয়া একটি কর্মসূচী ১ লাখ ১০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসিত হতে সাহায্য করেছে।
২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মর্যাদা সূচকে একদাগ পদোন্নতি দিয়েছে নিম্ন মধ্য আয়ের বন্ধনীতে। ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের উচ্চ-মধ্য আয়ের বন্ধনীতে যুক্ত হবার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
তলাবিহীন ঝুড়ির সেই সময় পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন এই অঞ্চলের এবং বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর কাছে উন্নয়নের এক রোল মডেল হয়ে দাড়িয়েছে। আসন্ন স্বাধীনতা দিবসে আমাদের স্মরণ করতে হবে কীভাবে এত অল্প সময়ে এতটা পথ পাড়ি দিয়েছে আমাদের দেশ।
লেখক: প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার পুত্র ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা