ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কীর্তিমানের জেলা কিশোরগঞ্জ

ঢাকা বিভাগের একটি অন্যতম জেলা কিশোরগঞ্জ। হাওর-বাঁওরে ঘেরা বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতির এক অনন্য জনপদ কিশোরগঞ্জ। চন্দ্রাবতী, মহুয়া-মলুয়ার দেশ এই কিশোরগঞ্জ।এই জেলার ভৌগোলিক আয়তন প্রায় ২,৬৮৯ বর্গ কিলোমিটার। জেলার ১৩টি উপজেলার পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের নিদর্শন। শিল্প-সাহিত্য আর লোকসংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ ও উর্বর জনপদের নাম কিশোরগঞ্জ।

কিশোরগঞ্জ অসংখ্য কীর্তিমান মানুষের জন্মস্থান। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রয়াত মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, র্যাং লার আনন্দমোহন বসু, পণ্ডিত শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরী, মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বিপ্লবী রেবতী মোহন বর্মন, শিক্ষানুরাগী মুন্সি আজিমউদ্দিন আহমদ, শহীদ ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী, শাহনামা অনুবাদক কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফ এর মতো অনেক বিখ্যাত লোকের জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ।

আমরা ধারাবাহিকভাবে পরিচিত হবো এমনই কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে। আজ প্রথম পর্বে আমরা তুলে ধরছি মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এঁর সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য। লিখেছেন সাংবাদিক ও আঞ্চলিক ইতিহাস-ঐতিহ্য সন্ধানী লেখক মু আ লতিফ।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম: শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম স্থপতি। তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন, দেশপ্রেম এবং শাহাদত বরণ ইতিহাসে অমর ও অক্ষয় হয়ে থাকবে। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদলের বীরদামপাড়া গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ আব্দুর রইছ। মাতা নুরুন্নেসা খাতুন রূপা। তাঁর ডাকনাম ছিল গোলাপ মিয়া।

কিশোরগঞ্জে প্রাথমিক পড়ালেখার পাঠ শেষে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক, ১৯৪৩-এ ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন।

বাংলাদেশের বিনির্মাণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরে যে নামটি উচ্চারিত হয় তিনি হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তাঁর কীর্তিময় ও গৌরবদীপ্ত ভূমিকার জন্য কিশোরগঞ্জবাসী গর্ব অনুভব করে।

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ মুহম্মদ আলী জিন্নাহ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাৎ দান করেন। এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয় চিফ সেক্রেটারি আজিজ আহমদের তৎকালীন বাসভবনে। ওই সাক্ষাতে সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম ছাত্রাবাসের তৎকালীন সহ-সভাপতি ও ছাত্রনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

তিনি ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে ১৯৪৯ সালে সিএসএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আয়কর অফিসার হিসেবে  চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৫১ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। পরে অধ্যাপনা ছেড়ে ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহ জেলা আদালতে আইন ব্যবসায় যোগদান করেন এবং ওই বছরই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন।

১৯৫৭ সালে তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৪-র ৮ মার্চ কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-র ৮ মে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির অস্থায়ী সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৯-এর ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ দল পরিচালনার গুরুদায়িত্ব পালন করেন।

ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি ‘ডাক’-এর অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে তিনি ১৯৬৯-এর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আইয়ুববিরোধী গণ-আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৬৯-এর রাজনৈতিক সংকট মীমাংসাকল্পে পশ্চিম পাকিস্তানের পিন্ডিতে বিরোধী দলগুলোর সাথে অনুষ্ঠিত সরকারের গোল টেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৭ নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ভারতের সীমান্ত এলাকা মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করে বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর ২২ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগর থেকে ঢাকায় চলে আসে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে ফিরে এসে ১৯৭২-এর ১২ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম মন্ত্রিপরিষদের শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম শাসনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২-এর ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সহকারী নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭৩-এর ৬ মার্চ পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।

১৯৭৩-এর ৭ মার্চ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩-এর ১২ মার্চ দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট পর্যন্ত এ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি শাসনতন্ত্রের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকারের পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

১৯৭৫-এর ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে চেয়ারম্যান করে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ ‘বাকশাল’ গঠিত হলে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাকশালের ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির ২ নম্বর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে ২৩ আগস্ট সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ আরো তিনজন জাতীয় নেতা গ্রেফতার হন। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর অপর জাতীয় তিন নেতার সাথে সৈয়দ নজরুল ইসলামকেও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম একজন আদর্শবান ও উদার গণতন্ত্রমনা রাজনীতিক ছিলেন। চল্লিশের দশকে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার দাবিতে এবং ষাটের দশকে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশের আন্দোলনে, সর্বোপরি সত্তরের দশকে বাঙালির অধিকার আদায় থেকে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্থ সহকর্মী হিসেবে তিনি আমৃত্যু সাধারণ মানুষের কল্যাণে ও দেশের উন্নয়নের জন্য রাজনীতি ও সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের কথা স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ ও সমগ্র কিশোরগঞ্জবাসী চিরদিন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম আওয়ামী রাজনীতিতে ছিলেন নেতৃত্বের সেকেন্ডম্যান। ষাট দশকে ছয় দফার আন্দোলনকালে বঙ্গবন্ধু যখন বারবার কারাগারে গেছেন, তখন সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দলকে পরিচালনা করেছেন। সত্তরের নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের নেতা নির্বাচিত হলেন, উপনেতা হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু, উপরাষ্ট্রপতি তখন সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং একাত্তরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগারে বন্দি অবস্থায় সৈয়দ নজরুল ইসলামই ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি।

’৭২-এর জানুয়ারি সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলেন সংসদ উপনেতা। আবার যখন রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার প্রবর্তিত হয় তখনও বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি।

সৈয়দ নজরুলের রাজনৈতিক জীবনাদর্শ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সহিষ্ণু মনোভাব ও গণতান্ত্রিক চর্চা এবং দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে ইতিহাসে চিরকাল  জ্বলজ্বল করবে।

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান: দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। তাঁর জীবন ও কর্ম এবং ত্যাগের মহিমা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চিরকাল অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে জ্বলজ্বল করবে। তিনি বাংলাদেশের একজন কীর্তিমান রাজনীতিবিদ। নেতার প্রতি অবিচল আস্থা, দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে অসীম ধৈর্য ও প্রজ্ঞা তাঁকে যেমন মহান করেছে, তেমনি জাতিকেও গণতন্ত্রের সড়কে প্রতিস্থাপিত করেছে।

মো. জিল্লুর রহমান আপাদমস্তক একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি রাজনীতির একজন সক্রিয় যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের একজন বিশিষ্ট সংগঠক এবং এ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের তিনি অন্যতম পুরোধা পুরুষ।

’৫২-এর ভাষা আন্দোলনে কিশোরগঞ্জের যে কজন কীর্তিমান ছাত্রনেতা সে সময়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাদেরও একজন তিনি। তিনি ছিলেন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। থাকতেন ফজলুল হক হলে। ’৫২ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফজলুল হক হলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ’৫২-এর উত্তাল দিনগুলোতে তিনি ছাত্রনেতা হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

ছাত্ররা যখন ২১ ফেব্রুয়ারি (১৯৫২) তারিখে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্তে অনমনীয়, তখন তারা প্রস্তুতি নিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় এক সভা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জিল্লুর রহমান এবং এ সভাতেই সিদ্ধান্ত হয় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে ১৯৫৩ সালে তিনি গ্রেফতার হন। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং স্বৈরাচারী সরকার তাঁর এমএ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। এ ঘটনায় ছাত্ররা প্রবল আন্দোলন শুরু করে এবং এর ফলে সরকার বশ্যতা স্বীকার করে এবং তাঁর ডিগ্রি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

জননেতা মো. জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব পৌরসভার ভৈরবপুর মোল্লা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলো কাটে নানাবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈইরতলা গ্রামে। কারণ তাঁর বয়স যখন মাত্র সাত মাস তখন তিনি মাকে হারান। আবার নয় বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবাকেও হারিয়ে এতিম হয়ে যান। নানা-নানি ও দাদা হাজী মোজাফফর মুন্সির প্রত্যক্ষ যত্ন ও তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন কিশোর জিল্লুর রহমান।

তাঁর পিতা মেহের আলী ছিলেন ময়মনসিংহের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ। বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোকাল বোর্ডের তিনি ছিলেন চেয়ারম্যান। তিনি জেলা বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন।

জিল্লুর রহমান ভৈরবের কেবি হাই স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে মেট্রিক, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ এমএ এবং  পরে এলএলবি ডিগ্রি  নেন। ১৯৪৬ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় সিলেটে গণভোটের কাজ করতে গিয়ে তিনি প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংস্পর্শে আসেন।

১৯৫৪ সালে যখন তৎকালীন পূর্ববাংলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন জিল্লুর রহমান বৃহত্তর ময়মনসিংহের যুক্তফ্রন্টের নেতা ছিলেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় তাঁকে। পরে তিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান নির্বাচিত হন এবং তাঁকে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন।

ষাটের দশক ছিল বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রস্তুতির দশক। এ সময় ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন হয়, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেন এবং ১৯৬৯ সালে ঘটে গণঅভ্যুত্থান। জিল্লুর রহমান প্রতিটি আন্দোলন ও কর্মসূচিতে বলিষ্ঠ ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭০ সালে সারা পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন হয়। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু সামরিক জান্তারা বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা দিতে টালবাহানা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দেন। জিল্লুর রহমান ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুজিবনগর সরকারের পরিচালিত ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ পরিচালনা ও ‘জয়বাংলা’ পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। পাকিস্তান সামরিক জান্তা তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে, ২০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে এবং সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দলের সভাপতি। এভাবে দেশ পরিচালনা ও নেতৃত্বদানে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি সাহচর্য লাভ করেন তিনি। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নেও তিনি অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জিল্লুর রহমানকেও গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ চার বছর কারাভোগের পর তিনি মুক্ত হয়ে দলীয় নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দলের হাল ধরেন।

১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি তাঁর এ দায়িত্ব অব্যাহত রাখেন এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯২ এবং ১৯৯৭ সালে দলীয় কাউন্সিলে তিনি পর পর দু’বার দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠিত হলে তিনি এর প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। একই সাথে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতার দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি আইন জারির পর ওই বছরের ১৬ জুলাই রাতে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলে তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দল পরিচালনা করেন।

শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১১ মাসের কারাজীবন ও চিকিৎসার জন্য ছয় মাস দেশের বাইরে অবস্থানকালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জিল্লুর রহমান দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সময়ের পরিক্রমায় ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন ভদ্র, নম্র, বিনয়ী একজন ব্যক্তিত্ব এবং সৌজন্যপরায়ণতার এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। স্ত্রী আইভি রহমান ছিলেন তাঁর জীবন ও রাজপথের সঙ্গী। আইভি রহমান মহিলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি ছিলেন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় জিল্লুর রহমান তাঁর জীবনসঙ্গী ও আদর্শের সাথী আইভি রহমানকে হারান।

জীবনসঙ্গী হারানোর অপূরণীয় ক্ষতির পরও তিনি অসীম ধৈর্য ও সাহসের সাথে রাষ্ট্রের হাল ধরতে সক্ষম হন। তাঁর ছেলে নাজমুল হাসান পাপন ভৈরব-কুলিয়ারচর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মো. জিল্লুর রহমান একজন আত্মত্যাগী ও আদর্শবান রাজনীতিক। তিনি শুধু কিশোরগঞ্জেরই নন, সারা বাংলাদেশের গর্ব। ভাষা আন্দোলন, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে তিনি চিরকাল ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। একজন দেশপ্রেমিক ও জনকল্যাণকামী জননেতা হিসেবে তিনি দীর্ঘকাল ভাস্বর হয়ে থাকবেন।

এই মহান নেতা সকলকে কাঁদিয়ে ২০১৩ সালের ২০ মার্চ ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর চরম বিরোধী পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বিরোধীদলীয় নেতাসহ সব দল ও মতের রাজনীতিবিদ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং শোক কর্মসূচি পালন করেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতির জন্মভূমি ভৈরবে ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম নামাজে জানাজায় দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান ও লাখো মানুষের সমাগম বাংলাদেশের জন্য এক নজিরবিহীন উদাহরণ।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম হাজী তায়েব উদ্দিন এবং মাতা মরহুমা তমিজা খাতুন।

মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জর গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ ও বিএ ডিগ্রি এবং ঢাকার সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এলএলবি অর্জনের পর তিনি আইন পেশায় কিশোরগঞ্জ বারে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯০-১৯৯৬ সময়পর্বে পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা বার সমিতির সভাপতি ছিলেন।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু ১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে গুরুদয়াল কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ফলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করে। ১৯৬৩ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সালে  সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ১৯৬৬-৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন।

গুরুদয়াল কলেজে পড়ার সময় তিনি একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রতিটি ছাত্র আন্দোলন তথা সরকারি শিক্ষা সংকোচন নীতিবিরোধী সংগ্রাম ও ১১-দফা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় রথখোলা ময়দানে বিশাল ছাত্র সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।

১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান ও তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (মুজিব বাহিনী) সাব-সেক্টর কমান্ডারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মেঘালয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে গঠিত জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি ৩ নম্বর সেক্টরের অধীন রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দেন।

দেশ স্বাধীন হলে তিনি মেঘালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পে সভা করে শরণার্থীদের দেশে ফিরতে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ও শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনায় তাঁর অসামান্য অবদান চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬-৭৮ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় তিনি কারারুদ্ধ হন। এছাড়া দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেন।

১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১১ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ পর্যন্ত  দায়িত্ব পালন করেন।

অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর ২০০৬ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার নির্বাচিত হন।

ছাত্ররাজনীতিকালীনই তাঁর ক্ষিপ্রতা, তেজস্বিতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার ও তাদের পেটোয়া বাহিনীর সকল হুমকি-ধামকি ও ভয়-ভীতি সত্ত্বেও স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলে তিনি ছাত্রলীগের সংগঠন গড়ে তোলেন। স্থানীয় গুরুদয়াল কলেজে ব্যাপকভাবে ছাত্রদের সমর্থন নিয়ে তৎকালীন ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে সমর্থ হন। সরকারের শোষণ-পীড়ন ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম ও কারাভোগের মধ্য দিয়ে আবদুল হামিদ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

এ সময় শেখ মুজিবের সংগ্রামী জীবন ও দেশের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে তুলেছিল। নিয়মিত লেখাপড়ার চাইতে তিনি তখন শেখ মুজিবের আদর্শের সৈনিক হিসেবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রতিটি ছাত্র ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সহকর্মীদের সংগঠিত করা, পরামর্শ প্রদান এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে আন্দোলনকে বেগবান করার সংগ্রামে একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ব্যাপৃত করেন।

ষাট ও সত্তর দশকে তাঁর এই সাহসী ভূমিকা ও তৎপরতায় উজ্জীবিত ছাত্রসমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে সময় তাঁকে ‘ভাটির শার্দুল’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছিল। একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মীপুরুষ হিসেবে ওই সময়ে ছাত্রসমাজের খেতাব প্রদান তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবনকে আরো উন্নত ও মজবুত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

আবদুল হামিদের দলীয় আনুগত্য ও সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে ভাগ্যও তাঁর অনুকূলে কাজ করেছে। তিনি সরকারের প্রতিটি ক্রাইসিস পিরিয়ডে হাল ধরেন। স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর ইন্তেকালের পর তাঁকে অস্থায়ী স্পিকারের দায়িত্ব পালন করতে হয়। পরবর্তীকালে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। আবার রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পরও তাঁকেই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির হাল ধরতে হয় এবং তাঁকেই পরবর্তী ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

স্পিকার হিসেবে তিনি বাংলাদেশ মহান জাতীয় সংসদ পরিচালনা ও কার্যক্রমকে শুধু অভিজাত ও শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের সাধারণ মানুষকেও আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সংসদে তিনি চপল, সরস ও রসাত্মক কথাবার্তায় হিউমার সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাণের সঞ্চার করতে পারতেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে তিনি সকল ভয়-ভীতি ও লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে ওঠে প্রতিটি মুহূর্তে দৃঢ় ও অবিচল থেকেছেন। দলীয় নীতি ও আদর্শকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে বিভিন্ন সময় তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং জুলুম, নির্যাতন ও কারাভোগ অনায়াসে মেনে নিয়েছেন। তবু কোনো অবস্থায় আপস বা মাথা নত করেননি।

তিনি রাজনীতিতে কখনো চরমভাবাপন্ন ছিলেন না। স্থানীয়ভাবেও তিনি দল-মত নির্বিশেষে সকলের অভিভাবক হিসেবে পরিণত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জের মানুষ তাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসে ও সম্মান করে।

তাঁর ছাত্র রাজনীতির গোড়াপত্তন ও উত্থান যে কলেজ থেকে ঘটেছিল সেই গুরুদয়াল কলেজও ইতোমধ্যে তাঁকে সম্মানিত করেছে। গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ২৫.২.২০১২ তারিখে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিল কলেজের নবনির্মিত একাডেমিক কাম এক্সজামিনেশন হলের নামকরণ করা হয় ‘আবদুল হামিদ ভবন’।

মো. আবদুল হামিদ অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, ভারত, জিব্রাল্টার, বার্বাডোজ, মিশর, সিঙ্গাপুর, দুবাই, আবুধাবি, থাইল্যান্ড, মরোক্কো, সৌদি আরব, সাউথ আফ্রিকা, নামিবিয়া, সুইজারল্যান্ড, হংকং, কুয়েত, ইরান, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, ফিজি, অস্ট্রেলিয়া, কিরিবাতি প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। আন্তঃপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট কমিটি এবং কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের (সিপিএ) এক্সিকিউটিভ কমিটিতে একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য সরকার ২০১৩ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। নবম জাতীয় সংসদ তাঁকে বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করে। ২৪ এপ্রিল ২০১৩ তিনি শপথ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর নির্বাচিত হওয়ায় কিশোরগঞ্জে তথা হাওরের অধিবাসীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।

পরবর্তিতে ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পরে ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ফলে প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাস রচনা করেছেন মো. আবদুল হামিদ।

তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক তারই সংসদীয় আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।

তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আবদুল হামিদ অবহেলিত হাওরের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে হাওরের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় অসাধারাণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাঁর আগ্রহে বাস্তবায়িত হচ্ছে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার রোড। চলমান সারাবছর চলাচল উপযোগি এই সড়কের কাজ সম্পন্ন হলে হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।

তিনি হাওরের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে সাব-মার্জিবল রোড নির্মাণ, বিদ্যুতায়নের সম্প্রসারণ, গ্রাম রক্ষাবাঁধ এবং শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক কাজ করেছেন। একজন সমাজসেবক ও শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, জেলা পাবলিক লাইব্রেরি, কিশোরগঞ্জ রাইফেল ক্লাব, কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্মানসূচক ও আজীবন সদস্য। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বিভিন্ন দেশের সংবিধান ও ইতিহাসগ্রন্থ পাঠ তাঁর প্রিয় শখ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

কীর্তিমানের জেলা কিশোরগঞ্জ

আপডেট টাইম : ০৬:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৯

ঢাকা বিভাগের একটি অন্যতম জেলা কিশোরগঞ্জ। হাওর-বাঁওরে ঘেরা বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতির এক অনন্য জনপদ কিশোরগঞ্জ। চন্দ্রাবতী, মহুয়া-মলুয়ার দেশ এই কিশোরগঞ্জ।এই জেলার ভৌগোলিক আয়তন প্রায় ২,৬৮৯ বর্গ কিলোমিটার। জেলার ১৩টি উপজেলার পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের নিদর্শন। শিল্প-সাহিত্য আর লোকসংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ ও উর্বর জনপদের নাম কিশোরগঞ্জ।

কিশোরগঞ্জ অসংখ্য কীর্তিমান মানুষের জন্মস্থান। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রয়াত মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, র্যাং লার আনন্দমোহন বসু, পণ্ডিত শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরী, মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বিপ্লবী রেবতী মোহন বর্মন, শিক্ষানুরাগী মুন্সি আজিমউদ্দিন আহমদ, শহীদ ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী, শাহনামা অনুবাদক কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফ এর মতো অনেক বিখ্যাত লোকের জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ।

আমরা ধারাবাহিকভাবে পরিচিত হবো এমনই কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে। আজ প্রথম পর্বে আমরা তুলে ধরছি মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এঁর সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য। লিখেছেন সাংবাদিক ও আঞ্চলিক ইতিহাস-ঐতিহ্য সন্ধানী লেখক মু আ লতিফ।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম: শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম স্থপতি। তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন, দেশপ্রেম এবং শাহাদত বরণ ইতিহাসে অমর ও অক্ষয় হয়ে থাকবে। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদলের বীরদামপাড়া গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ আব্দুর রইছ। মাতা নুরুন্নেসা খাতুন রূপা। তাঁর ডাকনাম ছিল গোলাপ মিয়া।

কিশোরগঞ্জে প্রাথমিক পড়ালেখার পাঠ শেষে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক, ১৯৪৩-এ ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন।

বাংলাদেশের বিনির্মাণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরে যে নামটি উচ্চারিত হয় তিনি হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তাঁর কীর্তিময় ও গৌরবদীপ্ত ভূমিকার জন্য কিশোরগঞ্জবাসী গর্ব অনুভব করে।

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ মুহম্মদ আলী জিন্নাহ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাৎ দান করেন। এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয় চিফ সেক্রেটারি আজিজ আহমদের তৎকালীন বাসভবনে। ওই সাক্ষাতে সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম ছাত্রাবাসের তৎকালীন সহ-সভাপতি ও ছাত্রনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

তিনি ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে ১৯৪৯ সালে সিএসএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আয়কর অফিসার হিসেবে  চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৫১ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। পরে অধ্যাপনা ছেড়ে ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহ জেলা আদালতে আইন ব্যবসায় যোগদান করেন এবং ওই বছরই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন।

১৯৫৭ সালে তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৪-র ৮ মার্চ কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-র ৮ মে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির অস্থায়ী সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৯-এর ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ দল পরিচালনার গুরুদায়িত্ব পালন করেন।

ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি ‘ডাক’-এর অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে তিনি ১৯৬৯-এর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আইয়ুববিরোধী গণ-আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৬৯-এর রাজনৈতিক সংকট মীমাংসাকল্পে পশ্চিম পাকিস্তানের পিন্ডিতে বিরোধী দলগুলোর সাথে অনুষ্ঠিত সরকারের গোল টেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৭ নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ভারতের সীমান্ত এলাকা মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করে বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর ২২ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগর থেকে ঢাকায় চলে আসে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে ফিরে এসে ১৯৭২-এর ১২ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম মন্ত্রিপরিষদের শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম শাসনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২-এর ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সহকারী নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭৩-এর ৬ মার্চ পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।

১৯৭৩-এর ৭ মার্চ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩-এর ১২ মার্চ দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট পর্যন্ত এ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি শাসনতন্ত্রের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকারের পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

১৯৭৫-এর ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে চেয়ারম্যান করে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ ‘বাকশাল’ গঠিত হলে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাকশালের ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির ২ নম্বর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে ২৩ আগস্ট সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ আরো তিনজন জাতীয় নেতা গ্রেফতার হন। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর অপর জাতীয় তিন নেতার সাথে সৈয়দ নজরুল ইসলামকেও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম একজন আদর্শবান ও উদার গণতন্ত্রমনা রাজনীতিক ছিলেন। চল্লিশের দশকে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার দাবিতে এবং ষাটের দশকে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশের আন্দোলনে, সর্বোপরি সত্তরের দশকে বাঙালির অধিকার আদায় থেকে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্থ সহকর্মী হিসেবে তিনি আমৃত্যু সাধারণ মানুষের কল্যাণে ও দেশের উন্নয়নের জন্য রাজনীতি ও সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের কথা স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ ও সমগ্র কিশোরগঞ্জবাসী চিরদিন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম আওয়ামী রাজনীতিতে ছিলেন নেতৃত্বের সেকেন্ডম্যান। ষাট দশকে ছয় দফার আন্দোলনকালে বঙ্গবন্ধু যখন বারবার কারাগারে গেছেন, তখন সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দলকে পরিচালনা করেছেন। সত্তরের নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের নেতা নির্বাচিত হলেন, উপনেতা হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু, উপরাষ্ট্রপতি তখন সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং একাত্তরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগারে বন্দি অবস্থায় সৈয়দ নজরুল ইসলামই ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি।

’৭২-এর জানুয়ারি সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলেন সংসদ উপনেতা। আবার যখন রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার প্রবর্তিত হয় তখনও বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি।

সৈয়দ নজরুলের রাজনৈতিক জীবনাদর্শ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সহিষ্ণু মনোভাব ও গণতান্ত্রিক চর্চা এবং দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে ইতিহাসে চিরকাল  জ্বলজ্বল করবে।

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান: দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। তাঁর জীবন ও কর্ম এবং ত্যাগের মহিমা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চিরকাল অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে জ্বলজ্বল করবে। তিনি বাংলাদেশের একজন কীর্তিমান রাজনীতিবিদ। নেতার প্রতি অবিচল আস্থা, দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে অসীম ধৈর্য ও প্রজ্ঞা তাঁকে যেমন মহান করেছে, তেমনি জাতিকেও গণতন্ত্রের সড়কে প্রতিস্থাপিত করেছে।

মো. জিল্লুর রহমান আপাদমস্তক একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি রাজনীতির একজন সক্রিয় যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের একজন বিশিষ্ট সংগঠক এবং এ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের তিনি অন্যতম পুরোধা পুরুষ।

’৫২-এর ভাষা আন্দোলনে কিশোরগঞ্জের যে কজন কীর্তিমান ছাত্রনেতা সে সময়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাদেরও একজন তিনি। তিনি ছিলেন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। থাকতেন ফজলুল হক হলে। ’৫২ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফজলুল হক হলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ’৫২-এর উত্তাল দিনগুলোতে তিনি ছাত্রনেতা হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

ছাত্ররা যখন ২১ ফেব্রুয়ারি (১৯৫২) তারিখে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্তে অনমনীয়, তখন তারা প্রস্তুতি নিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় এক সভা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জিল্লুর রহমান এবং এ সভাতেই সিদ্ধান্ত হয় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে ১৯৫৩ সালে তিনি গ্রেফতার হন। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং স্বৈরাচারী সরকার তাঁর এমএ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। এ ঘটনায় ছাত্ররা প্রবল আন্দোলন শুরু করে এবং এর ফলে সরকার বশ্যতা স্বীকার করে এবং তাঁর ডিগ্রি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

জননেতা মো. জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব পৌরসভার ভৈরবপুর মোল্লা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলো কাটে নানাবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈইরতলা গ্রামে। কারণ তাঁর বয়স যখন মাত্র সাত মাস তখন তিনি মাকে হারান। আবার নয় বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবাকেও হারিয়ে এতিম হয়ে যান। নানা-নানি ও দাদা হাজী মোজাফফর মুন্সির প্রত্যক্ষ যত্ন ও তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন কিশোর জিল্লুর রহমান।

তাঁর পিতা মেহের আলী ছিলেন ময়মনসিংহের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ। বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোকাল বোর্ডের তিনি ছিলেন চেয়ারম্যান। তিনি জেলা বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন।

জিল্লুর রহমান ভৈরবের কেবি হাই স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে মেট্রিক, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ এমএ এবং  পরে এলএলবি ডিগ্রি  নেন। ১৯৪৬ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় সিলেটে গণভোটের কাজ করতে গিয়ে তিনি প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংস্পর্শে আসেন।

১৯৫৪ সালে যখন তৎকালীন পূর্ববাংলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন জিল্লুর রহমান বৃহত্তর ময়মনসিংহের যুক্তফ্রন্টের নেতা ছিলেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় তাঁকে। পরে তিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান নির্বাচিত হন এবং তাঁকে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন।

ষাটের দশক ছিল বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রস্তুতির দশক। এ সময় ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন হয়, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেন এবং ১৯৬৯ সালে ঘটে গণঅভ্যুত্থান। জিল্লুর রহমান প্রতিটি আন্দোলন ও কর্মসূচিতে বলিষ্ঠ ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭০ সালে সারা পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন হয়। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু সামরিক জান্তারা বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা দিতে টালবাহানা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দেন। জিল্লুর রহমান ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুজিবনগর সরকারের পরিচালিত ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ পরিচালনা ও ‘জয়বাংলা’ পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। পাকিস্তান সামরিক জান্তা তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে, ২০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে এবং সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দলের সভাপতি। এভাবে দেশ পরিচালনা ও নেতৃত্বদানে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি সাহচর্য লাভ করেন তিনি। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নেও তিনি অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জিল্লুর রহমানকেও গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ চার বছর কারাভোগের পর তিনি মুক্ত হয়ে দলীয় নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দলের হাল ধরেন।

১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি তাঁর এ দায়িত্ব অব্যাহত রাখেন এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯২ এবং ১৯৯৭ সালে দলীয় কাউন্সিলে তিনি পর পর দু’বার দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠিত হলে তিনি এর প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। একই সাথে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতার দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি আইন জারির পর ওই বছরের ১৬ জুলাই রাতে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলে তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দল পরিচালনা করেন।

শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১১ মাসের কারাজীবন ও চিকিৎসার জন্য ছয় মাস দেশের বাইরে অবস্থানকালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জিল্লুর রহমান দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সময়ের পরিক্রমায় ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন ভদ্র, নম্র, বিনয়ী একজন ব্যক্তিত্ব এবং সৌজন্যপরায়ণতার এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। স্ত্রী আইভি রহমান ছিলেন তাঁর জীবন ও রাজপথের সঙ্গী। আইভি রহমান মহিলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি ছিলেন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় জিল্লুর রহমান তাঁর জীবনসঙ্গী ও আদর্শের সাথী আইভি রহমানকে হারান।

জীবনসঙ্গী হারানোর অপূরণীয় ক্ষতির পরও তিনি অসীম ধৈর্য ও সাহসের সাথে রাষ্ট্রের হাল ধরতে সক্ষম হন। তাঁর ছেলে নাজমুল হাসান পাপন ভৈরব-কুলিয়ারচর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মো. জিল্লুর রহমান একজন আত্মত্যাগী ও আদর্শবান রাজনীতিক। তিনি শুধু কিশোরগঞ্জেরই নন, সারা বাংলাদেশের গর্ব। ভাষা আন্দোলন, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে তিনি চিরকাল ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। একজন দেশপ্রেমিক ও জনকল্যাণকামী জননেতা হিসেবে তিনি দীর্ঘকাল ভাস্বর হয়ে থাকবেন।

এই মহান নেতা সকলকে কাঁদিয়ে ২০১৩ সালের ২০ মার্চ ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর চরম বিরোধী পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বিরোধীদলীয় নেতাসহ সব দল ও মতের রাজনীতিবিদ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং শোক কর্মসূচি পালন করেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতির জন্মভূমি ভৈরবে ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম নামাজে জানাজায় দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান ও লাখো মানুষের সমাগম বাংলাদেশের জন্য এক নজিরবিহীন উদাহরণ।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম হাজী তায়েব উদ্দিন এবং মাতা মরহুমা তমিজা খাতুন।

মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জর গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ ও বিএ ডিগ্রি এবং ঢাকার সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এলএলবি অর্জনের পর তিনি আইন পেশায় কিশোরগঞ্জ বারে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯০-১৯৯৬ সময়পর্বে পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা বার সমিতির সভাপতি ছিলেন।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু ১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে গুরুদয়াল কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ফলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করে। ১৯৬৩ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সালে  সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ১৯৬৬-৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন।

গুরুদয়াল কলেজে পড়ার সময় তিনি একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রতিটি ছাত্র আন্দোলন তথা সরকারি শিক্ষা সংকোচন নীতিবিরোধী সংগ্রাম ও ১১-দফা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় রথখোলা ময়দানে বিশাল ছাত্র সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।

১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান ও তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (মুজিব বাহিনী) সাব-সেক্টর কমান্ডারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মেঘালয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে গঠিত জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি ৩ নম্বর সেক্টরের অধীন রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দেন।

দেশ স্বাধীন হলে তিনি মেঘালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পে সভা করে শরণার্থীদের দেশে ফিরতে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ও শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনায় তাঁর অসামান্য অবদান চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬-৭৮ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় তিনি কারারুদ্ধ হন। এছাড়া দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেন।

১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১১ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ পর্যন্ত  দায়িত্ব পালন করেন।

অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর ২০০৬ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার নির্বাচিত হন।

ছাত্ররাজনীতিকালীনই তাঁর ক্ষিপ্রতা, তেজস্বিতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার ও তাদের পেটোয়া বাহিনীর সকল হুমকি-ধামকি ও ভয়-ভীতি সত্ত্বেও স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলে তিনি ছাত্রলীগের সংগঠন গড়ে তোলেন। স্থানীয় গুরুদয়াল কলেজে ব্যাপকভাবে ছাত্রদের সমর্থন নিয়ে তৎকালীন ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে সমর্থ হন। সরকারের শোষণ-পীড়ন ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম ও কারাভোগের মধ্য দিয়ে আবদুল হামিদ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

এ সময় শেখ মুজিবের সংগ্রামী জীবন ও দেশের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে তুলেছিল। নিয়মিত লেখাপড়ার চাইতে তিনি তখন শেখ মুজিবের আদর্শের সৈনিক হিসেবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রতিটি ছাত্র ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সহকর্মীদের সংগঠিত করা, পরামর্শ প্রদান এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে আন্দোলনকে বেগবান করার সংগ্রামে একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ব্যাপৃত করেন।

ষাট ও সত্তর দশকে তাঁর এই সাহসী ভূমিকা ও তৎপরতায় উজ্জীবিত ছাত্রসমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে সময় তাঁকে ‘ভাটির শার্দুল’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছিল। একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মীপুরুষ হিসেবে ওই সময়ে ছাত্রসমাজের খেতাব প্রদান তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবনকে আরো উন্নত ও মজবুত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

আবদুল হামিদের দলীয় আনুগত্য ও সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে ভাগ্যও তাঁর অনুকূলে কাজ করেছে। তিনি সরকারের প্রতিটি ক্রাইসিস পিরিয়ডে হাল ধরেন। স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর ইন্তেকালের পর তাঁকে অস্থায়ী স্পিকারের দায়িত্ব পালন করতে হয়। পরবর্তীকালে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। আবার রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পরও তাঁকেই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির হাল ধরতে হয় এবং তাঁকেই পরবর্তী ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

স্পিকার হিসেবে তিনি বাংলাদেশ মহান জাতীয় সংসদ পরিচালনা ও কার্যক্রমকে শুধু অভিজাত ও শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের সাধারণ মানুষকেও আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সংসদে তিনি চপল, সরস ও রসাত্মক কথাবার্তায় হিউমার সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাণের সঞ্চার করতে পারতেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে তিনি সকল ভয়-ভীতি ও লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে ওঠে প্রতিটি মুহূর্তে দৃঢ় ও অবিচল থেকেছেন। দলীয় নীতি ও আদর্শকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে বিভিন্ন সময় তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং জুলুম, নির্যাতন ও কারাভোগ অনায়াসে মেনে নিয়েছেন। তবু কোনো অবস্থায় আপস বা মাথা নত করেননি।

তিনি রাজনীতিতে কখনো চরমভাবাপন্ন ছিলেন না। স্থানীয়ভাবেও তিনি দল-মত নির্বিশেষে সকলের অভিভাবক হিসেবে পরিণত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জের মানুষ তাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসে ও সম্মান করে।

তাঁর ছাত্র রাজনীতির গোড়াপত্তন ও উত্থান যে কলেজ থেকে ঘটেছিল সেই গুরুদয়াল কলেজও ইতোমধ্যে তাঁকে সম্মানিত করেছে। গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ২৫.২.২০১২ তারিখে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিল কলেজের নবনির্মিত একাডেমিক কাম এক্সজামিনেশন হলের নামকরণ করা হয় ‘আবদুল হামিদ ভবন’।

মো. আবদুল হামিদ অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, ভারত, জিব্রাল্টার, বার্বাডোজ, মিশর, সিঙ্গাপুর, দুবাই, আবুধাবি, থাইল্যান্ড, মরোক্কো, সৌদি আরব, সাউথ আফ্রিকা, নামিবিয়া, সুইজারল্যান্ড, হংকং, কুয়েত, ইরান, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, ফিজি, অস্ট্রেলিয়া, কিরিবাতি প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। আন্তঃপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট কমিটি এবং কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের (সিপিএ) এক্সিকিউটিভ কমিটিতে একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য সরকার ২০১৩ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। নবম জাতীয় সংসদ তাঁকে বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করে। ২৪ এপ্রিল ২০১৩ তিনি শপথ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর নির্বাচিত হওয়ায় কিশোরগঞ্জে তথা হাওরের অধিবাসীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।

পরবর্তিতে ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পরে ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ফলে প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাস রচনা করেছেন মো. আবদুল হামিদ।

তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক তারই সংসদীয় আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।

তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আবদুল হামিদ অবহেলিত হাওরের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে হাওরের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় অসাধারাণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাঁর আগ্রহে বাস্তবায়িত হচ্ছে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার রোড। চলমান সারাবছর চলাচল উপযোগি এই সড়কের কাজ সম্পন্ন হলে হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।

তিনি হাওরের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে সাব-মার্জিবল রোড নির্মাণ, বিদ্যুতায়নের সম্প্রসারণ, গ্রাম রক্ষাবাঁধ এবং শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক কাজ করেছেন। একজন সমাজসেবক ও শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, জেলা পাবলিক লাইব্রেরি, কিশোরগঞ্জ রাইফেল ক্লাব, কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্মানসূচক ও আজীবন সদস্য। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বিভিন্ন দেশের সংবিধান ও ইতিহাসগ্রন্থ পাঠ তাঁর প্রিয় শখ।