ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাসচাপা মামলার রায়: আদালতের পর্যবেক্ষণও আমলে নিতে হবে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের মামলার রায়টি একাধিক কারণে দৃষ্টান্তমূলক। রায়ে দুই বাসচালক ও এক হেলপারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এটি বেপরোয়া চালকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা অবশ্যই। দ্বিতীয়ত, ঘটনার এক বছর চার মাস তিন দিন এবং মামলার বিচার শুরুর এক বছর এক মাস ছয় দিনের মাথায় রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে দ্রুত বিচারের আরও একটি নজির স্থাপিত হল।

উল্লেখ্য, গত বছর ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয়। এ ঘটনা দেশবাসীকে এতটাই ক্ষুব্ধ করে যে সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তড়িঘড়ি করে পাস করা হয় সড়ক পরিবহন আইন। উদ্বেগের বিষয় হল, আইনটি সম্প্রতি কার্যকর হলেও তা সংশোধনের দাবিতে পথে নেমেছেন পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকরা। অথচ এ আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন যে কত জরুরি তা রায়ের পর্যবেক্ষণেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পরিবহন সেক্টরে ড্রাইভার-হেলপারদের খামখেয়ালিপনায় এদেশের উদীয়মান ছাত্রছাত্রীসহ বয়স্ক ব্যক্তিরা বাসের চাপায় পিষ্ট হওয়া থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে যেমন ড্রাইভারদের সতর্ক থাকা উচিত, তেমনি আমাদের পুলিশ বাহিনী-ট্রাফিক বিভাগেরও সতর্ক থাকা আবশ্যক।

কারণ হালকা যান চালানোর লাইসেন্স নিয়ে হেভি গাড়ি চালানোর ফলে যত্রতত্র দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। অপরদিকে মালিকপক্ষ তাদের জমার জন্য ড্রাইভার ও হেলপারদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বেঁধে দেয়। বেঁধে দেয়া টাকা আয় করতে গিয়ে তারা যে কোনোভাবে অধিক যাত্রী তোলে এবং অধিক টাকা আয়ের লক্ষ্যে দ্রুততার সঙ্গে গাড়ি চালায়।

এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। বস্তুত আদালতের এ পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে সরকারের উচিত অবিলম্বে নতুন আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ বাস মালিকরা যাতে চালক ও কর্মচারীদের অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারেন সেই পদক্ষেপ নেয়া।

অবশ্য বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার পর থেকে আমরা শুনে আসছি, নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থের টার্গেট বেঁধে দেয়ার পরিবর্তে চালক-কর্মচারীদের বেতনভিত্তিক বাস চালানোর নিয়ম চালু করা হবে। কিন্তু ঘটনার এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এ নিয়ম কেন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরও দেশের সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। বলা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ বাস্তবতায় দুর্ঘটনা রোধে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকার বিকল্প নেই বলে মনে করি আমরা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বাসচাপা মামলার রায়: আদালতের পর্যবেক্ষণও আমলে নিতে হবে

আপডেট টাইম : ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের মামলার রায়টি একাধিক কারণে দৃষ্টান্তমূলক। রায়ে দুই বাসচালক ও এক হেলপারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এটি বেপরোয়া চালকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা অবশ্যই। দ্বিতীয়ত, ঘটনার এক বছর চার মাস তিন দিন এবং মামলার বিচার শুরুর এক বছর এক মাস ছয় দিনের মাথায় রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে দ্রুত বিচারের আরও একটি নজির স্থাপিত হল।

উল্লেখ্য, গত বছর ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয়। এ ঘটনা দেশবাসীকে এতটাই ক্ষুব্ধ করে যে সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তড়িঘড়ি করে পাস করা হয় সড়ক পরিবহন আইন। উদ্বেগের বিষয় হল, আইনটি সম্প্রতি কার্যকর হলেও তা সংশোধনের দাবিতে পথে নেমেছেন পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকরা। অথচ এ আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন যে কত জরুরি তা রায়ের পর্যবেক্ষণেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পরিবহন সেক্টরে ড্রাইভার-হেলপারদের খামখেয়ালিপনায় এদেশের উদীয়মান ছাত্রছাত্রীসহ বয়স্ক ব্যক্তিরা বাসের চাপায় পিষ্ট হওয়া থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে যেমন ড্রাইভারদের সতর্ক থাকা উচিত, তেমনি আমাদের পুলিশ বাহিনী-ট্রাফিক বিভাগেরও সতর্ক থাকা আবশ্যক।

কারণ হালকা যান চালানোর লাইসেন্স নিয়ে হেভি গাড়ি চালানোর ফলে যত্রতত্র দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। অপরদিকে মালিকপক্ষ তাদের জমার জন্য ড্রাইভার ও হেলপারদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বেঁধে দেয়। বেঁধে দেয়া টাকা আয় করতে গিয়ে তারা যে কোনোভাবে অধিক যাত্রী তোলে এবং অধিক টাকা আয়ের লক্ষ্যে দ্রুততার সঙ্গে গাড়ি চালায়।

এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। বস্তুত আদালতের এ পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে সরকারের উচিত অবিলম্বে নতুন আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ বাস মালিকরা যাতে চালক ও কর্মচারীদের অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারেন সেই পদক্ষেপ নেয়া।

অবশ্য বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার পর থেকে আমরা শুনে আসছি, নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থের টার্গেট বেঁধে দেয়ার পরিবর্তে চালক-কর্মচারীদের বেতনভিত্তিক বাস চালানোর নিয়ম চালু করা হবে। কিন্তু ঘটনার এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এ নিয়ম কেন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরও দেশের সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। বলা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ বাস্তবতায় দুর্ঘটনা রোধে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকার বিকল্প নেই বলে মনে করি আমরা।