বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আবারও অগ্নিকাণ্ডে মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ঢাকার কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিকসামগ্রী তৈরির একটি কারখানায় ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এছাড়া আরও অনেকে ঢাকা মেডেকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। জানা যায়, কারখানাটিতে ওয়ানটাইম প্লেট ও গ্লাস উৎপাদন করা হয়। এ কারণে প্রচুর প্লাস্টিকের কাঁচামাল সেখানে মজুদ থাকে।
এর আগেও একাধিকবার এ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবাসিক এলাকা থেকে প্রতিষ্ঠানটি সরিয়ে নেয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ এতে কর্ণপাত করেনি। বিষয়টি দুঃখজনক।
আমরা জানি, রাসায়নিক পদার্থ ও প্লাস্টিকসামগ্রী অত্যন্ত দাহ্য।
এগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বহন করে। আগুনের স্পর্শে এলে তা কতটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে সেই অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এ কারণে এ ধরনের কারখানা এবং এসব সামগ্রী রাখার গুদাম আবাসিক এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার দাবি দীর্ঘদিনের।
বেশিদিন আগের ঘটনা নয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় একটি চারতলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়। ওই ভবনটিতে ছিল রাসায়নিক পদার্থের গুদাম। এর আগে ২০১০ সালের জুনে পুরান ঢাকারই নিমতলী অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১২০ জনেরও বেশি নারী-পুরুষ।
সেই অগ্নিকাণ্ডেরও কারণ ছিল রাসায়নিক পদার্থ। নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের গুদামগুলো সরিয়ে ফেলার দাবি ওঠে জোরেশোরে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তালিকা করে ৮০০ রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার।
কিন্তু কাজটি সম্পাদন হয়নি আজও। এরপর ঘটেছে চকবাজার ট্র্যাজেডি। এছাড়া ছোটখাটো আরও অনেক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কারখানা স্থানান্তরে কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। প্রশ্ন হল, মানুষকে এরকম ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করতে হবে আর কতদিন?
আমরা আশা করব, আবাসিক এলাকা থেকে অবিলম্বে সব দাহ্য পদার্থের গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেয়া হবে। এ ব্যাপারে আর যেন বিলম্ব না ঘটে সেজন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই কাম্য।
অগ্নিকাণ্ড যে কোনো সময় ঘটতে পারে। সেজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। আরও মনে রাখা দরকার, শুষ্ক মৌসুম অগ্নিকাণ্ডের জন্য অনুকূল সময়। তাই এ সময় অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে সবারই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।