ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁয়তারা ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধির

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ঢাকা ওয়াসা আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য পানির মূল্য প্রায় শতভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বলে জানা গেছে। আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে বর্তমান মূল্য প্রতি ইউনিট সাড়ে ১১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে গতকাল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতার তথ্য এখন সবারই জানা। বার বার পানি মূল্য বাড়িয়ে এবং দেশি-বিদেশি সহযোগিতায় শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন নতুন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বাস্তবায়ন করেও নগরবাসিকে প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না ওয়াসা। প্রতিদিন কোটি কোটি লিটার ঘাটতি রেখে পানির যে সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালনা করছে তার প্রায় সবই দূষিত, দুর্গন্ধযুক্ত, সরাসরি ব্যবহারের অনুপযুক্ত। গত বছর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দূষিত, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহের বিরুদ্ধে নগরবাসি প্রতিবাদি হয়ে উঠলে তা সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল। ব্যর্থতা স্বীকার না করে তা অস্বীকার করায় ঢাকা দক্ষিণের শ্যামপুরের বাসিন্দারা ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে ওয়াসার এমডিকে খাওয়াতে গিয়েছিলেন। বছরে একবার এবং ৫ শতাংশ মূল্য বাড়ানোর ধারাবাহিক ঐতিহ্য থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াসা যেন দুর্নীতি- অনিয়ম ও অপচয় বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
গত বছর টিআইবির এক গবেষণা জরিপ থেকে জানা যায়, ঢাকা নগরীর প্রায় অর্ধেক গ্রাহক তাদের চাহিদা অনুসারে পানি সরবরাহ পায়না। ওয়াসার পানি সরাসরি পান করার যোগ্য তো নয়ই, কোথাও কোথাও ময়লা ও দুর্গন্ধের কারণে গোসলসহ ধোয়া-মোছার কাজেও ব্যবহার করা যায়না। এ কারণে শতকরা ৯১ভাগ গ্রাহককে ওয়াসার পানি ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পান করতে হয়। একদিকে দুর্নীতি-অপচয়ের কারনে ওয়াসায় বছরে শত শত কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে, অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ব্যর্থতার কারণে পানি ফোটাতে ৩৩২কোটি টাকার গ্যাস অপচয় হয় নগরবাসির। নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির কারণে যেমন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বহ হয়ে পড়ছে, একইভাবে পানি, বিদ্যুত, গ্যাস ও জ্বালানিসহ সরকারি সেবাখাতগুলোর অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। এসব খাতের মূল্যবৃদ্ধির আগে নিয়ম মাফিক গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারী ভোক্তা সাধারণ, ভোক্তা অধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা যে সব যুক্তি ও সুপারিশমালা তুলে ধরেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা অগ্রাহ্য করেই মূল্য বাড়ানো হয়।

তুলনামুলক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উপমহাদেশের বিভিন্ন শহরের চেয়ে ঢাকায় সরবরাহকৃত পানির মূল্য বেশি। তবে আর কোথাও এমন অপরিশুদ্ধ, দূষিত-ময়লাযুক্ত পানি সরবরাহ করা হয় কি না আমাদের জানা নেই। আর বিশেষ পরিস্থিতি বা সুনির্দ্দিষ্ট কারণ ছাড়াই পানির মূল্য একবারে শতভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাবও নজিরবিহীন। অন্যন্য বেশ কয়েকটি সেক্টরের মত দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা ওয়াসার দুর্নীতি-অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তদন্ত করে দুর্নীতির তথ্যসহ বেশকিছু সুপারিশ পেশ করেছে। পানির লাইনের সংযোগ, সুয়্যারেজ লাইন ব্যবস্থাপনা, মিটার ক্রয় ও সংস্থাপন, পয়:লাইনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণসহ পদে পদে ঘুষ-দুর্নীতিসহ অতিরিক্ত খরচ করতে হয় ওয়াসার গ্রাহকদের। অবৈধ অনৈতিক পন্থায় গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ওয়াসার একশ্রেণীর মিটার রিডার থেকে শুরু করে সিবিএ নেতা পর্যন্ত শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি, অপচয় ও অব্যবস্থাপনা দূর করে ওয়াসার লোকসান দূর করার পাশাপাশি সেবার মান বাড়ানো সম্ভব। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সে উদ্যোগের বদলে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের চোরাপথ উন্মুক্ত রেখে অস্বাভাবিক হারে বার বার মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে লোকসান কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হলেও নিরবচ্ছিন্ন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। পরিবেশবান্ধব, গণমুখী ও আধুনিক পানি সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করতে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় হাটু সমান পানি জমে অচলাবস্থা সৃষ্টির বিড়ম্বনাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। গ্রাহক পর্যায়ে পানির মূল্য বাড়ানোর গতানুগতিক ব্যবস্থার বদলে দুর্নীতি, অপচয়, অব্যবস্থাপনা ও অস্বচ্ছতা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। ওয়াসার সামগ্রিক কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পানির অপচয় রোধে নাগরিক সমাজকেও সচেতন ভূমিকা নিতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

পাঁয়তারা ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধির

আপডেট টাইম : ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ঢাকা ওয়াসা আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য পানির মূল্য প্রায় শতভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বলে জানা গেছে। আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে বর্তমান মূল্য প্রতি ইউনিট সাড়ে ১১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে গতকাল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতার তথ্য এখন সবারই জানা। বার বার পানি মূল্য বাড়িয়ে এবং দেশি-বিদেশি সহযোগিতায় শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন নতুন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বাস্তবায়ন করেও নগরবাসিকে প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না ওয়াসা। প্রতিদিন কোটি কোটি লিটার ঘাটতি রেখে পানির যে সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালনা করছে তার প্রায় সবই দূষিত, দুর্গন্ধযুক্ত, সরাসরি ব্যবহারের অনুপযুক্ত। গত বছর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দূষিত, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহের বিরুদ্ধে নগরবাসি প্রতিবাদি হয়ে উঠলে তা সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল। ব্যর্থতা স্বীকার না করে তা অস্বীকার করায় ঢাকা দক্ষিণের শ্যামপুরের বাসিন্দারা ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে ওয়াসার এমডিকে খাওয়াতে গিয়েছিলেন। বছরে একবার এবং ৫ শতাংশ মূল্য বাড়ানোর ধারাবাহিক ঐতিহ্য থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াসা যেন দুর্নীতি- অনিয়ম ও অপচয় বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
গত বছর টিআইবির এক গবেষণা জরিপ থেকে জানা যায়, ঢাকা নগরীর প্রায় অর্ধেক গ্রাহক তাদের চাহিদা অনুসারে পানি সরবরাহ পায়না। ওয়াসার পানি সরাসরি পান করার যোগ্য তো নয়ই, কোথাও কোথাও ময়লা ও দুর্গন্ধের কারণে গোসলসহ ধোয়া-মোছার কাজেও ব্যবহার করা যায়না। এ কারণে শতকরা ৯১ভাগ গ্রাহককে ওয়াসার পানি ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পান করতে হয়। একদিকে দুর্নীতি-অপচয়ের কারনে ওয়াসায় বছরে শত শত কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে, অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ব্যর্থতার কারণে পানি ফোটাতে ৩৩২কোটি টাকার গ্যাস অপচয় হয় নগরবাসির। নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির কারণে যেমন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বহ হয়ে পড়ছে, একইভাবে পানি, বিদ্যুত, গ্যাস ও জ্বালানিসহ সরকারি সেবাখাতগুলোর অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। এসব খাতের মূল্যবৃদ্ধির আগে নিয়ম মাফিক গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারী ভোক্তা সাধারণ, ভোক্তা অধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা যে সব যুক্তি ও সুপারিশমালা তুলে ধরেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা অগ্রাহ্য করেই মূল্য বাড়ানো হয়।

তুলনামুলক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উপমহাদেশের বিভিন্ন শহরের চেয়ে ঢাকায় সরবরাহকৃত পানির মূল্য বেশি। তবে আর কোথাও এমন অপরিশুদ্ধ, দূষিত-ময়লাযুক্ত পানি সরবরাহ করা হয় কি না আমাদের জানা নেই। আর বিশেষ পরিস্থিতি বা সুনির্দ্দিষ্ট কারণ ছাড়াই পানির মূল্য একবারে শতভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাবও নজিরবিহীন। অন্যন্য বেশ কয়েকটি সেক্টরের মত দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা ওয়াসার দুর্নীতি-অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তদন্ত করে দুর্নীতির তথ্যসহ বেশকিছু সুপারিশ পেশ করেছে। পানির লাইনের সংযোগ, সুয়্যারেজ লাইন ব্যবস্থাপনা, মিটার ক্রয় ও সংস্থাপন, পয়:লাইনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণসহ পদে পদে ঘুষ-দুর্নীতিসহ অতিরিক্ত খরচ করতে হয় ওয়াসার গ্রাহকদের। অবৈধ অনৈতিক পন্থায় গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ওয়াসার একশ্রেণীর মিটার রিডার থেকে শুরু করে সিবিএ নেতা পর্যন্ত শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি, অপচয় ও অব্যবস্থাপনা দূর করে ওয়াসার লোকসান দূর করার পাশাপাশি সেবার মান বাড়ানো সম্ভব। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সে উদ্যোগের বদলে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের চোরাপথ উন্মুক্ত রেখে অস্বাভাবিক হারে বার বার মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে লোকসান কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হলেও নিরবচ্ছিন্ন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। পরিবেশবান্ধব, গণমুখী ও আধুনিক পানি সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করতে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় হাটু সমান পানি জমে অচলাবস্থা সৃষ্টির বিড়ম্বনাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। গ্রাহক পর্যায়ে পানির মূল্য বাড়ানোর গতানুগতিক ব্যবস্থার বদলে দুর্নীতি, অপচয়, অব্যবস্থাপনা ও অস্বচ্ছতা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। ওয়াসার সামগ্রিক কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পানির অপচয় রোধে নাগরিক সমাজকেও সচেতন ভূমিকা নিতে হবে।