ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টেকসই উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি

দক্ষিণ এশিয়ার বড় সমস্যার মধ্যে করোনা মহামারির প্রভাব, বৈশ্বিক সংঘাত ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা অন্যতম। করোনার প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে উঠেলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত চিন্তায় ফেলেছে। খাদ্য নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বড় প্রভাব ফেলছে। এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতা জরুরি। এসব এক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তিকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে কোনো দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি।

রাজধানীর একটি হোটেলে শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ২ দিনব্যাপী সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. পি নন্দলাল উইরাসিং, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ইশরাত হুসাইন, নেপালের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব দুর্গা ভাট্টারি ও ভারতের রিসার্স অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেস ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিসের মহাপরিচালক অধ্যাপক সচিন চাতুরভেদি।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ অব শ্রীলংকার নির্বাহী পরিচালক ড. দুশনি উইকারুন, নেপালের বেসরকারি গবেষণা সংগঠন সাউথ এশিয়া ওয়াচ অন ট্রেড, ইকোনমিক অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. পারাস খারেল ও পাকিস্তানের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পলিসি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আবিদ কাইয়ূম সুলেরি প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনা বিশাল। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশিয়ার বড় অবদান রয়েছে। কিন্তু সমন্বিত কোনো উদ্যোগের অভাবে পিছিয়ে আছে এ অঞ্চল।

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। ইতোমধ্যে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। এরপর ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই অঞ্চল। আর এই যুদ্ধ চলাকালীন শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে সমস্যা। ঠিক এই সময়ে এ ধরনের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলে বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক বিভিন্ন সূচকে অনেক এগিয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়া। কারণ বিশ্ব বাণিজ্যের মাত্র ৮ শতাংশ দক্ষিণ এশিয়ায়। বাকি ৯২ শতাংশ অন্য দেশে। বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ বছরে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। হাজার হাজার বেশি নাগরিক এখন বাংলাদেশে কাজ করছে। আমরা সব সময় এদেরকে উৎসাহিত করি। তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ দরকার। এজন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করছি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক উন্নয়নে ৫ থেকে ৬ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি দরকার।

রেহমান সোবহান বলেন, এই অঞ্চলের সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে। এখন সমাধানে রাজনৈতিক শক্তিকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই কিছু চিন্তা করা যায় কিনা সেটি ভাবতে হবে। চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে সুশীল সমাজেরও বড় ভূমিকা রয়েছে।

ড. পি নন্দলাল উইরাসিং বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সমস্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এছাড়াও খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

অধ্যাপক সচিন চাতুরভেদি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ছিল। তবে দুই দশকে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ। অর্থাৎ বিশ্বের মোট প্রবৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল অবদান রয়েছে। আর বিশ্বের মোট প্রবৃদ্ধিতে এশিয়ার অবদান ৪৯ শতাংশ।

ড. ইশরাত হুসাইন বলেন, টেকসই উন্নয়নের একমাত্র পথ গণতন্ত্র। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা খুবই জরুরি।

ড. আবিদ কাইয়ূম সুলেরি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি, বন্যা, খরা ও ভূমিকম্পের মতো সমস্যা আসছে। এসব কারণে খাদ্য নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বড় প্রভাব ফেলছে।

দুর্গা ভাট্টারি বলেন, এই অঞ্চলের ঝুঁকিগুলোর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা অন্যতম। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ড. পারাস খারেল বলেন, ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রতিবেশীদের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পারস্পরিক বাণিজ্য, আঞ্চলিক সম্পর্ক ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় পরস্পর মিলে কাজ করতে হবে।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

টেকসই উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি

আপডেট টাইম : ০৬:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০২৩

দক্ষিণ এশিয়ার বড় সমস্যার মধ্যে করোনা মহামারির প্রভাব, বৈশ্বিক সংঘাত ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা অন্যতম। করোনার প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে উঠেলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত চিন্তায় ফেলেছে। খাদ্য নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বড় প্রভাব ফেলছে। এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতা জরুরি। এসব এক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তিকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে কোনো দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি।

রাজধানীর একটি হোটেলে শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ২ দিনব্যাপী সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. পি নন্দলাল উইরাসিং, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ইশরাত হুসাইন, নেপালের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব দুর্গা ভাট্টারি ও ভারতের রিসার্স অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেস ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিসের মহাপরিচালক অধ্যাপক সচিন চাতুরভেদি।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ অব শ্রীলংকার নির্বাহী পরিচালক ড. দুশনি উইকারুন, নেপালের বেসরকারি গবেষণা সংগঠন সাউথ এশিয়া ওয়াচ অন ট্রেড, ইকোনমিক অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. পারাস খারেল ও পাকিস্তানের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পলিসি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আবিদ কাইয়ূম সুলেরি প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনা বিশাল। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশিয়ার বড় অবদান রয়েছে। কিন্তু সমন্বিত কোনো উদ্যোগের অভাবে পিছিয়ে আছে এ অঞ্চল।

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। ইতোমধ্যে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। এরপর ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই অঞ্চল। আর এই যুদ্ধ চলাকালীন শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে সমস্যা। ঠিক এই সময়ে এ ধরনের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলে বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক বিভিন্ন সূচকে অনেক এগিয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়া। কারণ বিশ্ব বাণিজ্যের মাত্র ৮ শতাংশ দক্ষিণ এশিয়ায়। বাকি ৯২ শতাংশ অন্য দেশে। বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ বছরে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। হাজার হাজার বেশি নাগরিক এখন বাংলাদেশে কাজ করছে। আমরা সব সময় এদেরকে উৎসাহিত করি। তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ দরকার। এজন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করছি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক উন্নয়নে ৫ থেকে ৬ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি দরকার।

রেহমান সোবহান বলেন, এই অঞ্চলের সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে। এখন সমাধানে রাজনৈতিক শক্তিকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই কিছু চিন্তা করা যায় কিনা সেটি ভাবতে হবে। চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে সুশীল সমাজেরও বড় ভূমিকা রয়েছে।

ড. পি নন্দলাল উইরাসিং বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সমস্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এছাড়াও খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

অধ্যাপক সচিন চাতুরভেদি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ছিল। তবে দুই দশকে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ। অর্থাৎ বিশ্বের মোট প্রবৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল অবদান রয়েছে। আর বিশ্বের মোট প্রবৃদ্ধিতে এশিয়ার অবদান ৪৯ শতাংশ।

ড. ইশরাত হুসাইন বলেন, টেকসই উন্নয়নের একমাত্র পথ গণতন্ত্র। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা খুবই জরুরি।

ড. আবিদ কাইয়ূম সুলেরি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি, বন্যা, খরা ও ভূমিকম্পের মতো সমস্যা আসছে। এসব কারণে খাদ্য নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বড় প্রভাব ফেলছে।

দুর্গা ভাট্টারি বলেন, এই অঞ্চলের ঝুঁকিগুলোর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা অন্যতম। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ড. পারাস খারেল বলেন, ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রতিবেশীদের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পারস্পরিক বাণিজ্য, আঞ্চলিক সম্পর্ক ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় পরস্পর মিলে কাজ করতে হবে।