বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রাজধানীতে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ কিছুটা কমেছে। তবে আশঙ্কা, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়ছে। দুটি রোগেরই জীবাণু ছড়ায় এডিস মশা। মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ব্যক্তি ও পরিবারকে উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এ কথা বলেন। চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে ব্রিফিংয়ে সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, চিকুনগুনিয়া বিষয়ে সরকার সচেতন ও সতর্ক। ইতিমধ্যে মানুষকে সচেতন করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জুলাই ও আগস্ট মাসে জনসচেতনতা বাড়াতে দুটি বড় কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, জঙ্গির মতো মশা দমনও সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গু রোগের জন্য দায়ী মশা নিধনের দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ওপর বর্তায়। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের দায়বদ্ধতা থেকে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে সর্বতভাবে কাজ করে যাচ্ছে যাতে এ ধরনের রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিত্সা ও কর্মীদের চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সা সেবা প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না বলে সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতি ছিল না। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে অনুমান করা যায় যে, চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ কমে আসছে। আশা করা যায় আগামী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঠিক তথ্য ও জনসচেতনতা জরুরি। নর্দমা বা রাস্তার পানি নোংরা বলে তাতে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে না। পরিত্যক্ত কৌটা, ড্রাম, পাত্র, ফুলের টবে জমা পানিতে এই মশা বংশবিস্তার করে। সে জন্য বাসায় বা বাসার আশপাশে যেন পানি না জমে সে ব্যাপারে ব্যক্তি ও পরিবারকে ভূমিকা রাখতে হবে।
সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডিরেক্টর অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, জরিপে দেখা গেছে পুরো ঢাকা শহর এডিস মশার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি চিকিত্সক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকুনগুনিয়ার চিকিত্সা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব জানার জন্য মুঠোফোনভিত্তিক জরিপ করছে আইইডিসিআর। ৪ হাজার ৭৭৫ জন সম্ভাব্য রোগীর তথ্য নিয়ে ৩৫৭ জনের চিকুনগুনিয়া নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি বলেন, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ঢাকায় চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব কমার আভাস পাওয়া গেছে।
সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (স্বাস্থ্যসেবা) সিরাজুল হক খান, অতিরিক্ত সচিব রুখসানা কাদের, হাবিবুর রহমানসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।