সরকার গত ৮ ও ১৭ অক্টোবর দুই দফায় চিনির শুল্ককর কমায়। দ্বিতীয় দফায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চিনি আমদানিতে খরচ কমবে কমবেশি ১১ টাকা। কিন্তু সরকারি সংস্থা টিসিবির বাজারদরের তথ্য বলছে, এক মাস আগের তুলনায় খোলা চিনি কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি আলুর দাম পাঁচ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। যদিও খুচরা বাজারে কিছু দোকানে আলু কেজি ৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।
নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে চালের দাম বাড়লে। সম্প্রতি সরকার চাল আমদানিতে শুল্ককর ছাড় দেয়। শুল্ককর কমানোর ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে। যদিও এখনো চাল আমদানি শুরু হয়নি। টিসিবির বাজারদরের তথ্য বলছে, শুল্ক ছাড়ের পর কেজিপ্রতি মাঝারিমানের চালের দাম নতুন করে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিস্থিতি বুঝে চাল আমদানি বাড়াতে হবে। যাতে বাজারে সরবরাহে কোনো সংকট তৈরি না হয় এবং ঘাটতির আশঙ্কা থেকে মিল মালিকরাও সুযোগ নিতে না পারেন।
এদিকে শুল্ক ছাড়ের পর ভারত থেকে ডিম আমদানি শুরু হয়েছে। সরকার বাজারে নজরদারিও করছে। এতে বাজারে ডিমের দাম কমে এসেছে। টিসিবির তথ্য বলছে, এক মাস আগের তুলনায় হালিপ্রতি ফার্মের ডিমের দাম পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়।
ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে সরকার রাজস্বনীতিতে কিছুটা পরিবর্তন এনে আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু শুল্ক কমানোর প্রভাব আমরা শুধু ডিমের ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি। অন্য কোনো পণ্যে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। এতে ভোক্তারা উপকৃত হওয়ার কথা থাকলেও শুল্কের সুবিধা ভোগ করছেন ব্যবসায়ীরা।’
তিনি বলেন, ‘বাজারকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে এই শুল্কের প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে। সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক কমলে পণ্যের দামও ১০ শতাংশ সরাসরি কমার কথা।’
পেঁয়াজ আমদানিকারক এবং রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মাজেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে দেশি পেঁয়াজের সংকটের কারণে দাম কমছে না। কৃষকের কাছে পেঁয়াজের মজুদ শেষের দিকে। আগামী দুই মাস পর বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসবে, তখন দাম কমতে পারে। এর আগে পেঁয়াজের দাম কমার তেমন সম্ভাবনা নেই।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি পেঁয়াজ বাজারে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও মানুষ কিনতে চায় না। যার কারণে পাকিস্তানি পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। দাম বেশি হলেও ক্রেতারা দেশি পেঁয়াজ খোঁজেন। এটিও মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ।’
রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হিমেল শেখের সঙ্গে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, যেভাবেই হোক নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে নিয়ে আসুন। স্বল্প আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে। তারা এখন তিন বেলার জায়গায় দুই বেলাও খেতে পারছে না। কারণ তারা আগে মাছ-মাংস খেতে না পারলেও নিয়মিত শাক-সবজি দিয়ে খাবার খেতে পারত। বর্তমানে সবজির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়ে গেছে।’
দীর্ঘদিন ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের আশপাশে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর মানুষের ক্ষোভের একটি কারণ ছিল—নিত্যপণ্যের দাম। বাজারে এখনো মাছ, মুরগি ও সবজির দাম চড়া। অন্তর্বর্তী সরকার পণ্যের দাম কমাতে নানা উদ্যোগ নিলেও হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে অসময় বৃষ্টি ও বন্যাকে দায়ী করা হচ্ছে।