ঢাকা , বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের জন্য রেখে যাওয়া চিঠিতে যা লিখেছেন বাইডেন

আমেরিকান রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের একটি প্রথা রয়েছে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তার উত্তরসূরির জন্য একটি ব্যক্তিগত বার্তা রেখে যান।

এই চিঠি বিনিময়ের প্রথা শুরু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মাধ্যমে। তিনি তার উত্তরসূরি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের জন্য একটি মজার নোট লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে ছিল টার্কি পরিবেষ্টিত এক হাতির ছবি, এবং তাতে লেখা ছিল— ‘টার্কিগুলো যেন তোমাকে হতাশ না করে।’

এরপর থেকেই প্রত্যেক বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তার উত্তরসূরির জন্য ব্যক্তিগত বার্তা রেখে যান। যেখানে ভালোবাসা, শুভকামনা এবং প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হয়।

প্রথা অনুযায়ি নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্যও একটি চিঠি রেখে গেছেন জো বাইডেন।

একজন সাংবাদিক ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, বাইডেন কোনো চিঠি রেখে গেছেন কি না! তখন ট্রাম্প হেসে বলেন, ‘সম্ভবত রেখেছেন’। এরপর রেজোলিউট ডেস্কের ড্রয়ার খুলে তিনি এই চিঠিটি পান। চিঠি পেয়ে ট্রাম্প চমকপ্রদ ভঙ্গিতে বলেন, ‘ওহহ’।

তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদেরও খামটি দেখান। এ সময় তিনি মজা করে বলেন, ‘তুমি না বললে হয়ত আমাকে এটা খুঁজে পেতে কয়েক বছর লেগে যেত।’

চিঠি পেয়েই ট্রাম্প প্রথমে বলেন, ‘চলুন আমরা সবাই একসঙ্গে এটা পড়ি।’ তবে পরে তিনি মত পরিবর্তন করে বলেন, ‘প্রথমে আমি পড়ি, তারপর আপনাদের শোনাব।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেও বাইডেনের জন্য ড্রয়ারে একটি চিঠি রেখে গিয়েছিলাম।’

চিঠিটি একটি সাদা খামে ছিল, যেখানে লেখা ছিল ‘৪৭’।

এর আগে ট্রাম্প যখন বিদায় নেন তখন বাইডেনের জন্য একটি চিঠি রেখে যান।

এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, বাইডেন স্প্যানিশ ভাষায় সংক্ষিপ্তভাবে মন্তব্য করেছিলেন, ‘Eso queda entre él y yo’ যার অর্থ, ‘এটা তার এবং আমার মধ্যে থাক।’

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, তিনি সোমবার সন্ধ্যায় চিঠিটি খুলেছিলেন এবং জনসম্মুখে প্রকাশ করার কথা ভাবছিলেন। চিঠিতে বাইডেন ট্রাম্পকে তার মেয়াদ উপভোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট পদের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘এটি খুব সুন্দর চিঠি ছিল। মূলত এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক চিঠি। লেখা ছিল, উপভোগ করুন। ভালো কাজ করে যান। সবচেয়ে বড় কথা, এই পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও কিছু ঐতিহাসিক চিঠি-

রিগ্যান থেকে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ (১৯৮৯):

১৯৮৯ সালে হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে রোনাল্ড রিগ্যান জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের জন্য লিখেছিলেন, ‘তোমার এমন মুহূর্ত আসবে যখন তুমি এই টেবিলটি ব্যবহার করছ। জর্জ, তোমার এবং বারবারার জন্য শুভকামনা রইল। তুমি আমার প্রার্থনায় থাকবে। আমাদের বৃহস্পতিবারের মধ্যাহ্নভোজটা আমি মিস করব।’

জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ থেকে বিল ক্লিনটন (১৯৯৩):

১৯৯৩ জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ বিল ক্লিনটনকে লিখেছিলেন, ‘তুমি যখন এই চিঠি পড়বে, তখন তুমি আমাদের প্রেসিডেন্ট। তোমার সাফল্য, এখন আমাদের দেশের সাফল্য। তোমার জন্য শুভকামনা।’

বিল ক্লিনটন থেকে জর্জ ডব্লিউ বুশ (২০০১):

২০০১ সালে বিল ক্লিনটন জর্জ ডব্লিউ বুশকে লেখেন, ‘আজ তুমি সবচেয়ে বড় একটি দায়িত্ব গ্রহণ করছ। তুমি একটি গর্বিত জাতির নেতৃত্ব দিচ্ছ। আমি তোমার সাফল্য এবং সুখ কামনা করি।’

জর্জ ডব্লিউ বুশ থেকে বারাক ওবামা (২০০৯):

২০০৯ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্দেশ্যে রেখে যাওয়া চিঠিতে লেখেন, ‘প্রিয় ওবামা, অভিনন্দন। তোমার কঠিন সময় আসবে, তুমি সমালোচনার মুখোমুখি হবে। কিন্তু তোমার পাশে থাকবে ঈশ্বর, তোমার পরিবার, আমি এবং এ দেশের হাজারো মানুষ।’

বারাক ওবামা থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প (২০১৭):

২০১৭ সালে প্রথমবার ট্রাম্পের জন্য এ চিঠি রেখে যান বারাক ওবামা। ওই চিঠিতে লেখা ছিল, ‘আমরা এই অফিসের সাময়িক বাসিন্দা। আমাদের কাজ হলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের পূর্বপুরুষদের মতোই শক্তিশালী রেখে যাওয়া। মিশেল এবং আমি তোমার ও মেলানিয়ার জন্য শুভকামনা জানাই।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ট্রাম্পের জন্য রেখে যাওয়া চিঠিতে যা লিখেছেন বাইডেন

আপডেট টাইম : এক ঘন্টা আগে

আমেরিকান রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের একটি প্রথা রয়েছে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তার উত্তরসূরির জন্য একটি ব্যক্তিগত বার্তা রেখে যান।

এই চিঠি বিনিময়ের প্রথা শুরু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মাধ্যমে। তিনি তার উত্তরসূরি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের জন্য একটি মজার নোট লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে ছিল টার্কি পরিবেষ্টিত এক হাতির ছবি, এবং তাতে লেখা ছিল— ‘টার্কিগুলো যেন তোমাকে হতাশ না করে।’

এরপর থেকেই প্রত্যেক বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তার উত্তরসূরির জন্য ব্যক্তিগত বার্তা রেখে যান। যেখানে ভালোবাসা, শুভকামনা এবং প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হয়।

প্রথা অনুযায়ি নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্যও একটি চিঠি রেখে গেছেন জো বাইডেন।

একজন সাংবাদিক ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, বাইডেন কোনো চিঠি রেখে গেছেন কি না! তখন ট্রাম্প হেসে বলেন, ‘সম্ভবত রেখেছেন’। এরপর রেজোলিউট ডেস্কের ড্রয়ার খুলে তিনি এই চিঠিটি পান। চিঠি পেয়ে ট্রাম্প চমকপ্রদ ভঙ্গিতে বলেন, ‘ওহহ’।

তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদেরও খামটি দেখান। এ সময় তিনি মজা করে বলেন, ‘তুমি না বললে হয়ত আমাকে এটা খুঁজে পেতে কয়েক বছর লেগে যেত।’

চিঠি পেয়েই ট্রাম্প প্রথমে বলেন, ‘চলুন আমরা সবাই একসঙ্গে এটা পড়ি।’ তবে পরে তিনি মত পরিবর্তন করে বলেন, ‘প্রথমে আমি পড়ি, তারপর আপনাদের শোনাব।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেও বাইডেনের জন্য ড্রয়ারে একটি চিঠি রেখে গিয়েছিলাম।’

চিঠিটি একটি সাদা খামে ছিল, যেখানে লেখা ছিল ‘৪৭’।

এর আগে ট্রাম্প যখন বিদায় নেন তখন বাইডেনের জন্য একটি চিঠি রেখে যান।

এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, বাইডেন স্প্যানিশ ভাষায় সংক্ষিপ্তভাবে মন্তব্য করেছিলেন, ‘Eso queda entre él y yo’ যার অর্থ, ‘এটা তার এবং আমার মধ্যে থাক।’

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, তিনি সোমবার সন্ধ্যায় চিঠিটি খুলেছিলেন এবং জনসম্মুখে প্রকাশ করার কথা ভাবছিলেন। চিঠিতে বাইডেন ট্রাম্পকে তার মেয়াদ উপভোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট পদের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘এটি খুব সুন্দর চিঠি ছিল। মূলত এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক চিঠি। লেখা ছিল, উপভোগ করুন। ভালো কাজ করে যান। সবচেয়ে বড় কথা, এই পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও কিছু ঐতিহাসিক চিঠি-

রিগ্যান থেকে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ (১৯৮৯):

১৯৮৯ সালে হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে রোনাল্ড রিগ্যান জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের জন্য লিখেছিলেন, ‘তোমার এমন মুহূর্ত আসবে যখন তুমি এই টেবিলটি ব্যবহার করছ। জর্জ, তোমার এবং বারবারার জন্য শুভকামনা রইল। তুমি আমার প্রার্থনায় থাকবে। আমাদের বৃহস্পতিবারের মধ্যাহ্নভোজটা আমি মিস করব।’

জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ থেকে বিল ক্লিনটন (১৯৯৩):

১৯৯৩ জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ বিল ক্লিনটনকে লিখেছিলেন, ‘তুমি যখন এই চিঠি পড়বে, তখন তুমি আমাদের প্রেসিডেন্ট। তোমার সাফল্য, এখন আমাদের দেশের সাফল্য। তোমার জন্য শুভকামনা।’

বিল ক্লিনটন থেকে জর্জ ডব্লিউ বুশ (২০০১):

২০০১ সালে বিল ক্লিনটন জর্জ ডব্লিউ বুশকে লেখেন, ‘আজ তুমি সবচেয়ে বড় একটি দায়িত্ব গ্রহণ করছ। তুমি একটি গর্বিত জাতির নেতৃত্ব দিচ্ছ। আমি তোমার সাফল্য এবং সুখ কামনা করি।’

জর্জ ডব্লিউ বুশ থেকে বারাক ওবামা (২০০৯):

২০০৯ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্দেশ্যে রেখে যাওয়া চিঠিতে লেখেন, ‘প্রিয় ওবামা, অভিনন্দন। তোমার কঠিন সময় আসবে, তুমি সমালোচনার মুখোমুখি হবে। কিন্তু তোমার পাশে থাকবে ঈশ্বর, তোমার পরিবার, আমি এবং এ দেশের হাজারো মানুষ।’

বারাক ওবামা থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প (২০১৭):

২০১৭ সালে প্রথমবার ট্রাম্পের জন্য এ চিঠি রেখে যান বারাক ওবামা। ওই চিঠিতে লেখা ছিল, ‘আমরা এই অফিসের সাময়িক বাসিন্দা। আমাদের কাজ হলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের পূর্বপুরুষদের মতোই শক্তিশালী রেখে যাওয়া। মিশেল এবং আমি তোমার ও মেলানিয়ার জন্য শুভকামনা জানাই।’