ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেন সাবেক আইনমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলেন আইয়ুবুর, জানালেন নিজেই

উপজেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মো. আইয়ুবুর রহমান। টানা আট বছর দায়িত্ব পালনের পর হন যুবদলের সভাপতি। এবার ছয় বছরের দায়িত্ব। এরপর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

স্থান পেয়েছিলেন জেলা বিএনপির কমিটিতে নির্বাহী সদস্য হিসেবে।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামের বাসিন্দা শেখ মো. আইয়ুবুর রহমান সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। এ সংক্রান্ত একটি ছবি গত কয়েকদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি শেখ সোহেল রানা গ্রেপ্তারের সঙ্গে তার সঙ্গে প্রচারণায় থাকা ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে ও আলোচনার জন্ম দেয়।

শেখ আইয়ুবুর রহমান কেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে কালের কণ্ঠের এ প্রতিবেদকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি ব্যাখ্যা পাঠান তিনি এবং এ নিয়ে কথা বলেন।

সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেখা ওই ব্যাখ্যায় আইয়ুবুর রহমান বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দেবগ্রাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। দেবগ্রাম স্কুলকে সরকারিকরণে সহযোগিতা করায় তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আমিসহ গ্রামবাসী ওয়াদাবদ্ধ ছিলাম, সুযোগ আসলে উনার পাশে থাকার।

যেহেতু বিএনপি ২০২৪ সালে নির্বাচনে যায়নি সেই কারণে ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাধ্য হয়েই গ্রামবাসীর সঙ্গে আনিসুল হকের প্রচারণায় যাই। একদিন একবারই কয়েক ঘণ্টার জন্য উনার প্রচারণায় গিয়েছিলাম, যার জন্য আমি অনুতপ্ত ও অনুশোচনা জ্ঞাপন করছি। আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও উক্ত প্রচারণায় ফটোশেসন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। একটি কুচক্রি মহল আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অবদানকে ছোট করতে এবং দলের কাছে আমাকে বিতর্কিত করে ফায়দা হাসিল করতে কয়েকটি ছবি মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে। অনেকে না বুঝেও সেই ছবিগুলি শেয়ার করছে।
১২ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো সময়ই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আওয়ামী লীগে যোগদানও করিনি। কুচক্রি মহল আমার বিএনপির পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক জীবনের অবদান, জনপ্রিয়তা, ভূমিকায়, ঈর্ষান্বিত হয়ে কোনো কিছু হলেই ছবিগুলি ফেসবুকে পোস্ট দেয়। আমি তাদের হীনমানসিকতার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আখাউড়ার বিএনপির রাজনীতিতে আমার অবদানের কথা আখাউড়ার মানুষ অবগত, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যারা আমার ছবি পোস্ট করছেন তাদেরকে অনুরোধ করব, এই সমস্ত হীনমনমানসিকতা পরিত্যাগ করুন। আমি বিএনপিতে ছিলাম, আছি, থাকব, ইনশাআল্লাহ। আমাদের নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আমার অনেক ছবি আছে।’

লেখার সঙ্গে তিনি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে থাকা ছবিও জুড়ে দেন। পাশাপাশি নিজের রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আখাউড়া উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। আখাউড়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি হিসেবে ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করি এবং আখাউড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলাম। তিলে তিলে ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছি। আখাউড়া বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলে বহুবার জেলে গিয়েছি। অসংখ্য মামলার আসামি ছিলাম। পরবর্তীতে ব্যাংকে চাকরি হওয়ায় নানা সময় এলাকার বাইরে থাকতে হয়েছে। কর্ম ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এলাকায় বেশি আসতে পারিনি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন পীড়নের কারণে সক্রিয় রাজনীতি করা ছিল অত্যন্ত দুরুহ। অনেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে দল ত্যাগ করেছে। কিন্ত আমি বিএনপির আদর্শ বুকে ধারণ করে দলকে ভালোবেসে দলের প্রতি আনুগত্যশীল ছিলাম। মাঝখানে আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ ছিল যার জন্য ভারতে গিয়ে বুকে একটা রিং পরানো হয়। মনে প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দলীয় কর্মসূচিতে সময় দিতে পারিনি।’

লেখায় তিনি আখাউড়ার বিএনপির রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে পাওয়া মরহুম হাজি এম এ তাহের সভাপতি, মরহুম নায়েব আলী ভূইয়া, হাজি মো. ইউসুফ সারওয়ারকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

কথা হলে আইয়ুবুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে আমি নিজেও নীপিড়নের শিকার হয়েছি। চাকরি থেকে আমাকে বাদ দেওয়ার জন্যও তারা উঠেপড়ে লাগে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে থাকার সময় শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম করতে দেওয়া হয়নি। গ্রামের স্বার্থে স্কুল সরকারি করণের আশায় একদিন সাবেক আইনমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় যাই। এখন আমাকে হেয় করতে এ ছবি ফেসবুকে দেওয়া হচ্ছে।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কেন সাবেক আইনমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলেন আইয়ুবুর, জানালেন নিজেই

আপডেট টাইম : এক ঘন্টা আগে
উপজেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মো. আইয়ুবুর রহমান। টানা আট বছর দায়িত্ব পালনের পর হন যুবদলের সভাপতি। এবার ছয় বছরের দায়িত্ব। এরপর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

স্থান পেয়েছিলেন জেলা বিএনপির কমিটিতে নির্বাহী সদস্য হিসেবে।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামের বাসিন্দা শেখ মো. আইয়ুবুর রহমান সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। এ সংক্রান্ত একটি ছবি গত কয়েকদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি শেখ সোহেল রানা গ্রেপ্তারের সঙ্গে তার সঙ্গে প্রচারণায় থাকা ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে ও আলোচনার জন্ম দেয়।

শেখ আইয়ুবুর রহমান কেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে কালের কণ্ঠের এ প্রতিবেদকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি ব্যাখ্যা পাঠান তিনি এবং এ নিয়ে কথা বলেন।

সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেখা ওই ব্যাখ্যায় আইয়ুবুর রহমান বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দেবগ্রাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। দেবগ্রাম স্কুলকে সরকারিকরণে সহযোগিতা করায় তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আমিসহ গ্রামবাসী ওয়াদাবদ্ধ ছিলাম, সুযোগ আসলে উনার পাশে থাকার।

যেহেতু বিএনপি ২০২৪ সালে নির্বাচনে যায়নি সেই কারণে ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাধ্য হয়েই গ্রামবাসীর সঙ্গে আনিসুল হকের প্রচারণায় যাই। একদিন একবারই কয়েক ঘণ্টার জন্য উনার প্রচারণায় গিয়েছিলাম, যার জন্য আমি অনুতপ্ত ও অনুশোচনা জ্ঞাপন করছি। আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও উক্ত প্রচারণায় ফটোশেসন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। একটি কুচক্রি মহল আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অবদানকে ছোট করতে এবং দলের কাছে আমাকে বিতর্কিত করে ফায়দা হাসিল করতে কয়েকটি ছবি মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে। অনেকে না বুঝেও সেই ছবিগুলি শেয়ার করছে।
১২ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো সময়ই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আওয়ামী লীগে যোগদানও করিনি। কুচক্রি মহল আমার বিএনপির পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক জীবনের অবদান, জনপ্রিয়তা, ভূমিকায়, ঈর্ষান্বিত হয়ে কোনো কিছু হলেই ছবিগুলি ফেসবুকে পোস্ট দেয়। আমি তাদের হীনমানসিকতার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আখাউড়ার বিএনপির রাজনীতিতে আমার অবদানের কথা আখাউড়ার মানুষ অবগত, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যারা আমার ছবি পোস্ট করছেন তাদেরকে অনুরোধ করব, এই সমস্ত হীনমনমানসিকতা পরিত্যাগ করুন। আমি বিএনপিতে ছিলাম, আছি, থাকব, ইনশাআল্লাহ। আমাদের নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আমার অনেক ছবি আছে।’

লেখার সঙ্গে তিনি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে থাকা ছবিও জুড়ে দেন। পাশাপাশি নিজের রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আখাউড়া উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। আখাউড়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি হিসেবে ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করি এবং আখাউড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলাম। তিলে তিলে ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছি। আখাউড়া বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলে বহুবার জেলে গিয়েছি। অসংখ্য মামলার আসামি ছিলাম। পরবর্তীতে ব্যাংকে চাকরি হওয়ায় নানা সময় এলাকার বাইরে থাকতে হয়েছে। কর্ম ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এলাকায় বেশি আসতে পারিনি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন পীড়নের কারণে সক্রিয় রাজনীতি করা ছিল অত্যন্ত দুরুহ। অনেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে দল ত্যাগ করেছে। কিন্ত আমি বিএনপির আদর্শ বুকে ধারণ করে দলকে ভালোবেসে দলের প্রতি আনুগত্যশীল ছিলাম। মাঝখানে আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ ছিল যার জন্য ভারতে গিয়ে বুকে একটা রিং পরানো হয়। মনে প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দলীয় কর্মসূচিতে সময় দিতে পারিনি।’

লেখায় তিনি আখাউড়ার বিএনপির রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে পাওয়া মরহুম হাজি এম এ তাহের সভাপতি, মরহুম নায়েব আলী ভূইয়া, হাজি মো. ইউসুফ সারওয়ারকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

কথা হলে আইয়ুবুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে আমি নিজেও নীপিড়নের শিকার হয়েছি। চাকরি থেকে আমাকে বাদ দেওয়ার জন্যও তারা উঠেপড়ে লাগে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে থাকার সময় শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম করতে দেওয়া হয়নি। গ্রামের স্বার্থে স্কুল সরকারি করণের আশায় একদিন সাবেক আইনমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় যাই। এখন আমাকে হেয় করতে এ ছবি ফেসবুকে দেওয়া হচ্ছে।’