।।ক।।
কিশোর, একটা কবিতা লিখবে আজ আমার জন্য?
শ্মশানের চিতায় নীল আগুনে পোড়া সহমরণের শব্দে নয়
বাম পাঁজরের হাড়ের সাথে মিশে থাকা ভালোবাসার কবিতা
শীতার্ত ভোরে চা’য়ের কাপে ঠোঁট ছোঁয়ানো উষ্ণতার কবিতা।
।।খ।।
একদিন সোমেশ্বরী নদী দেখাতে নিয়ে যাবে, কিশোর?
শুনেছি সেখানে জলের চোখে মায়ারা ঝিকমিক করে
কনে দেখা সন্ধ্যায় তোমার উদ্ভ্রান্ত চুলে দিক হারাবে বাতাস
পদ্ম গোখরার সন্মোহনী ফনায় চেয়ে স্থির হবে সময়।
।।গ।।
জানো কিশোর, সেই থেকে তোমায় দেখে দেখে ভাবি
বোহেমিয়ান হয়ে একটা জনম কাটিয়ে দিলে কী আসে যায়
মায়ান সভ্যতার রাজপুতের কাছে শুনবো রাজ্য জয়ের ইতিহাস
নাচিয়ে মেয়েটির চুড়ির মায়ায় হারিয়ে যাবো দূর বহুদূর।
।। ঘ ।।
মনে রেখো কিশোর, একদিন আমি তোমায় পূজো দেবো
ছায়াচ্ছন্ন ঘরটিতে আমরা দুটি জীবন ছাড়া আর কেউ নেই
শুদ্ধ স্নানের পর লাল সাদার গরদ, বৃক্ষ দেবে দুটি রক্তজবা
পূজোর জানিনে কিছুই, শুধু সেই দুটি রক্তজবাসহ নিজেকে তোমার পায়ে বিসর্জন।
সমান্তরাল মানে ছুঁতে না পারার কষ্ট
কি যে হয়েছে, আজকাল বিকেল সন্ধ্যা বড্ড আতংকে কাটে
বাসের জ্যাম গরম প্যাচপেচে ঘামের শেষে স্নানঘর
যেইনা জল ছেড়ে কলের নিচে দাঁড়ালাম, মনে হলো
কেঁপে উঠলো জলের ধারা-দুলে উঠলো সাধের সংসার।
আমি বোধ’য় বদলে যেতে চলেছি, পাকাপাকি আটপৌরে
সিঁধেল চোরের মত আরামছে মেয়ের বাবার পকেট কাটি
ইশকুলের ওয়েটিংরুমে ভাবীদের সাথে এর ওর বদনাম গাই
কেবল রোদের দিনে সত্য জানি, গনগনে রোদে আমিও কোনোদিন মিছিলে ছিলাম।
ছুটিছাটা পড়লে বুড়িগঙ্গার ধারে ছইয়ের নৌকায় ঘণ্টাচুক্তি
মরা কাক আলু পটলের খোসা দুর্গন্ধ আর দূষিত বাতাস
মোড়কে বন্দি সুখি গৃহীদের চিনেবাদামের ঠোংগা খালি হলে সন্ধ্যা নামে
দীর্ঘায়িত দীর্ঘশ্বাসে আংগুলে আংগুল ছোঁয়া তাঁর কথা মনে পরে।
পুটুলির মতন একটুখানি মেয়ে আর তার পড়া সাতকাহন!
জিওমেট্রি বই ঘুরে ফিরে সে বললে, মা সমান্তরাল কি?
সাঁঝবাতির আলোয় তাঁকে অপসৃয়মান দেখেছিলাম শেষবার
সমান্তরাল মানে, তাকে আর ছুঁতে না পারার কষ্ট।