২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসের কথা। নতুন নতুন ফেসবুকার আমি তখন। ‘রাজকুমারী অদ্রিকা’ নামের একটি আইডিতে সেদিন না বুঝেই বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠায়। কিছুক্ষন পর সে অনুরোধটি গ্রহণ করে। সেদিনও বুঝতে পারিনী এমন একটি দিন আসবে যেদিন আমার পাঠানো এই অনুরোধই আমাকে নাগপাশে বেঁধে ফেলবে!
মজা করে সেদিন তাকে লিখেছিলাম ‘দক্ষ প্রজাপতির কন্যা তোমাকে ধন্যবাদ অনুরোধটি গ্রহন করার জন্য’। বলে রাখা ভালো পৌরণীক কাহিনী অনুযায়ী গিরিরাজ হিমালয় প্রজাপতি দক্ষ রাজার কণ্যার নাম ছিল অদ্রিকা। এভাবেই শুরু, একটি বন্ধুত্বের বন্ধন।
কখন কল্পনাও ভাবতে পারিনী, সেদিনের সেই অপরিচিত সাধারণ এক কিশোরী বউ হয়ে আমার জীবনে আসবে। যার সাথে অতিবাহিত হবে বাকিটা জীবন, বিশ্বাস আর ভালোবাসার সাথে। সদাহাস্য চেহারা তার, অদ্ভূত অদ্ভূত
আবদার আর অনুভূতি বুঝে উঠার সবটুকু সাধ্য যখনও হয়ে উঠেনি তখন জড়িয়ে পড়লাম বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সম্পর্কে।
তারপর আবেক আর ভালোবাসার শুরু। এক অপরিচিত কিশোরী প্রেয়সী হয়ে আসলো আমার জীবনে! ছোট ছোট আবদার আর কথাগুলো ক্রমেই আপন করে নিতে থাকলো আমার ভূবন। রাতের পর রাত ফেসবুক চ্যাট থেকে মোবাইল ফোনে কথা! ক্রমেই আমার আমিকে হারাতে থাকলাম তার মাঝে।
ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র বিষয়ের আবদার মেটানোয় শিশুসুলভ উচ্ছ্বাসের সাক্ষী হতে লাগলাম আমি। হালকা সিল্কের চুলে ছোয়া আর এই বুকে মাথা গুজে হাজার স্বপ্নবোনার সাক্ষী হতে লাগলাম আমি। ততদিনে মেয়েটি নারীতে পরিণত হয়েছে। ততদিনে হয়ত প্রেম কি সে বুঝতে শিখেছে। আমি হয়ত বুঝিনী।
এরপর অনেকগুলো দিন কেটে গেল আমাদের জীবনে। ততদিনে অপরিচিত সেই সাধারণ কিশোরটির ছোয়ায় আমার জীবন পরিপূর্ণ। সাধারণ কিশোরীটি তখন নারী। দায়িত্ব বোঝে, পরিবার বোঝে, সামাজিক দায়বদ্ধতাও বুঝে গেছে। তাই এভাবে আর নয়। এবার তার নতুন আবদার ‘এভাবে আর নয়, চলো পরিবারের সাথে কথা বলে পাকাপাকি ভাবেই জীবন শুরু করি’।
গোলকধাঁধার মারপ্যাঁচ বুঝে ওঠার আগে হ্যাঁ বলেছিলাম সেদিন। কিন্তু বাড়ি জানানো সাহসটুকু পেলাম না। সেটাও সে করলো! তারপর একটা ইনিংসের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে জীবনের নতুন ইনিংস শুরু।
এরপর আর কোনদিন রাত জেগে ফেসবুকে চ্যাট করিনী, ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলিনি। তবে রাত জেগেছি! ভালোবাসার টানে! তার সাক্ষী হয়ত ফেসবুক বা মোবাইল ফোন নয়! সাক্ষী আমরা দু’জনা! সাক্ষী আমাদের ঘরের চার দেওয়াল আর নরম বিছানা! এরপরই আমি বুঝেছি প্রেম কি! তবে এখনও সংসার কী বুঝতে পারলাম না!