বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ অধিক লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের শুরুতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠাবে এ জেলার কৃষকরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেকোনো ফসল আগাম চাষ হলে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে। তাই মুনাফাও অনেক বেশি হয়। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন তারা। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা লাভের জন্য ফুলকপি ও বাঁধাকপির জুরি নেই। পানি জমে না এমন উঁচু জমি কপি চাষের জন্য উপযুক্ত।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আগাম সবজি চাষে বেশ আলোড়ন তুলেছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের শিবরাম এলাকার কৃষক নুরল হক ও জহুরুল হক।
তারা শ্যালক-দুলাভাই মিলে অন্যের জমি লিজ নিয়ে গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনে সবজি চাষ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি জেলার অর্থনৈতিক উন্নতিতে ব্যাপক অবদান রাখছেন। শিবরাম এলাকার সাড়ে তিন একর জমি বছরে ৭০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে সারাবছর বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করছেন তারা। ক্ষেত থেকে সরাসরি ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের পাইকাররা ট্রাকে ভড়ে সবজি ক্রয় করে নিয়ে যান।
নুরল হক ও জহুরুল হক সাংবাদিককে বলেন, সবজির কদর সারাদেশেই রয়েছে। তবে তা আগাম চাষ করতে পারলে আরও বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে পোকামাকড় আক্রমণ করবেই। সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার না করেই আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব।
সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় সবজি গুনগত মানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি বলে জানা তারা।
শীতকালীন সবজির বাজার ধরতে তারা ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা রোপণ করেছেন। কার্তিক মাসের শেষ দিকে তাদের সবজি বাজারে উঠবে। এজন্য নার্সারি থেকে সবজি চারা সংগ্রহ করে ২০ থেকে ২৫ দিন আগে রোপণ করেছেন। সাড়ে তিন একর জমিতে প্রায় ৩৫-৩৮ হাজার কপির চারা রোপণ করা হবে। প্রতিটি চারার পেছনে তাদের খরচ হবে প্রায় পাঁচ থেকে সাত টাকা। আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি কপি ক্ষেতেই বিক্রি হবে ১৫ থেকে ২০ টাকা মূল্যে। কপি ক্ষেত থেকে মাত্র তিন মাসে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন ওই দুই কৃষক।
শ্যালক-দুলাভাইয়ের সবজি বিপ্লব দেখে ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজি চাষির সংখ্যা। বড়বাড়ি ব্লোকেই রয়েছেন প্রায় অর্ধশত সবজি চাষি। যারা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ করছেন।
ওই এলাকার কৃষক কামাল ও মহিদুল ইসলাম সাংবাদিককে জানান, সবজি চারা রোপণের আগে জমি তৈরি করে কিছু দিন রাখা হয়। এতে কপির চারা রোগ-বালাই প্রতিরোধের ক্ষমতা সঞ্চয় করে এবং গাছগুলো সবল হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন তারা। তবে এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় তাদের নিজের চারাগুলো নষ্ট হয়নি। ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা কম হওয়ার আশাবাদী তারা।
শুধু বড়বাড়ি এলাকায় নয় জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি চাষ হচ্ছে। সবজি চাষের ব্যাপকতার জন্য আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি, সারপুকুর, ভেলাবাড়ি, দুর্গাপুর, সদর উপজেলার বড়বাড়ি, গোকুন্ডা, মোগলহাট, মহেন্দ্রনগর, কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা, মদাতি, চন্দ্রপুর, হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না, ভেলাগুড়ি, সিংগিমারী, টংভাঙ্গা এবং পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ও কুচলিবাড়ি ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের সবজি। শীতের শুরুতে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন জেলায় যাবে এ সবজি।
কমলাবাড়ি গ্রামের সবজি চাষি করিম মিয়া সাংবাদিককে জানান, সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুতের কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহে মূলা বীজ বপন ও কপি’র চারা রোপণ করবেন তিনি। কপি চারা রোপণ থেকে ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফসল বাজারে তুলা যায়। এ বছর তিন বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর এ জেলায় ছয় হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। চলতি বছর সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে চলতি সপ্তাহে প্রায় এক হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে রবি ১৮/১৯ জাতের আগাম সবজি চাষ হয়েছে। মার্চে মধ্যবর্তী পর্যন্ত এ রোপণ ও বপন চলবে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম সাংবাদিককে বলেন, কৃষকরা যে ফসলে মুনাফা পায়, সেটাতেই ঝুঁকে পড়েন। শুধু এ জেলায় নয়, সারাদেশে সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কৃষকরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আগাম সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিদু ভূষণ রায় সাংবাদিককে বলেন, কৃষি বিভাগের লোকজনের নিয়মিত মনিটরিংয়ে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বাড়ায় কৃষকদের মুনাফাও বেড়েছে কয়েকগুণ।
চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে বলেও জানান তিনি।