বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বহুল আলোচিত রাজধানীর বনানীতে ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ ৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। স্বাক্ষ্য গ্রহণের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। গত ৯ জুলাই পুলিশের দেওয়া (চার্জশিট)অভিযোগপত্র আমলে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২এর বিচারক শফিউল আজমের আদালতে বৃহস্পতিবার এ মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ছিল। এদিন সকাল ১১টায় ৫ আসামিকে জেল হাজত থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে চার্জ গঠন করার সময় আদালতের জিঞ্জাসায় আসামিরা নির্দোষ বলে দাবি করেন।
আদালত এদিন আসামিদের পক্ষে দেওয়া ডিসচার্জ আবেদন নাকচ করে উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে এ চার্জ গঠন করেন।গত ৯জুলাই আসামি নাঈম আশরাফের পক্ষে তার আইনজীবী অভিযোগ গঠন শুনানি পেছনোর জন্য সময়ের আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করে এ দিন ধার্য করেন।
গত ১২ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম হাফিজুর রহমান মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বদলী আদেশ দেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শফিউল আজম গত ১৯ জুন অভিযোগপত্র আমলে গ্রহণ করে ৯ জুলাই চার্জ শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
গত ৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দোলোয়ার হোসেনের আদালতে সাফাতসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়েছে ৪৭ জনকে।
গত ২১ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. দেলোয়ার হোসেন নাঈম আশরাফের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতির আদেশ প্রদান করেন। পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ সিআইডি’র ফরেনসিক বিভাগকে এ পরীক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
একই দিন ধর্ষণের ঘটনার ভিডিওচিত্র উদ্ধারের জন্য মামলার অপর দুই আসামি সাফাত ও সাদমানের জব্দ করা পাঁচটি মোবাইল সেট এবং তাদের ব্যবহৃত একটি পাওয়ার ব্যাংক ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠানোর অনুমতি দেন আদালত।
গত ১৮ মে এ মামলার আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ ঢাকার মহানগর হাকিম মো. আহসান হাবিব ও মো. সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ বলেন, ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে হোটেল পিকাসোতে ভিকটিম দুই তরুণীর সঙ্গে বন্ধু সাদমান সাকিফের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথন হতো।
গত ১৮মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পুলিশ পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আসামি নাঈম আশরাফকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড দেওয়ার আবেদন করেন।মহানগর হাকিম এসএম মাসুদ জাম্মানের আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আসামি নাঈম আশরাফকে ৭ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেন। গত ২০মে রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।৫ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন
গত ১৬ মে আপন জুর্য়েলাসের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের গাড়িচালক বিল্লালকে ৪দিন ও বডিগার্ড রহমতকে ৩ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেছে আদালত। মহানগর হাকিম মো. লস্কর সোহেল রানা উভয়পক্ষের শুনানি শেষে তাদেরকে উক্ত রিমান্ডে মঞ্জুর করেন।
গত ১৫ মে সোমবার রাতে রাজধানীর নবাবপুর রোডের ইব্রাহীম হোটেল থেকে বিল্লালকে গ্রেফতার করে র্যাব। একইদিন গুলশান থেকে মামলার অপর আসমি দেহরক্ষী আজাদকেও গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলের সামনে থেকে রহমতকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। রহমত তার এক আত্মীয়র বাসায় যাচ্ছিল। তার কাছ থেকে একটি শটগান এবং ১০ রাউন্ড গুলি পাওয়া গেছে জানিয়েছেন ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মাসুদুর রহমান।
এ মামলার সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আজাদও সর্বশেষ নাঈম আশরাফকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে এ মামলার মোট পাঁচ আসামির ৫জনই গ্রেফতার হলো।
সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের হালিম ঢাকায় নাঈম আশরাফ নামে পরিচিত ছিলেন। সে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন বলে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর প্রকাশ পায়।
প্রসঙ্গ, গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাতের জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে বন্ধুদের সহায়তায় ধর্ষণের শিকার হন দুই তরুণী। এ ঘটনার ৪০ দিন পর ৫ মে সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন দুই তরুণী। এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি হলেন সাফাত আহমেদ, সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ (রহমত)।
এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায়, গত ২৮ মার্চ সাফাত আহমেদের জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে তাদের বনানীর ‘কে ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইনট্রি নামের হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। এ ঘটনায় সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয় বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে। এছাড়া অন্য দুইজন এই কাজে সহযোগিতা করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
গ্রেফতারের পর আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের গাড়িচালক বিল্লাল র্যাবের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন দুই তরুণীকে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করানো হয়েছিল।
বিল্লাল র্যাবকে জানিয়েছে, ওই দিন দুই তরুণীর ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল। হোটেলের রুমের মধ্যে ভিকটিমের বন্ধুদের হাতে ইয়াবা দিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তারা যদি এই ঘটনা ফাঁস করে দেয় তাহলে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে মামলা দিয়ে দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেবে। মোবাইলে ধারণ করা সেই ভিডিও ডিলিট করে দিয়েছে বলে বিল্লাল জানিয়েছে।
গত ৫ মে মামলার পর পালিয়ে যাওয়া সাফাত ও সাদমানকে গত ১১ মে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়।গত ১২ মে আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছেন।